ঢাকা , বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo রাজশাহীতে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদযাপন সমাপনী Logo বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামীণ জনপদে আভিজাত্যর প্রতিক মাটির দ্বিতল বাড়ি বিলুপ্ত প্রায় Logo ঈদুল আজহা’র বাঘায় ভিজিএফ এর চাল পেল ১৪ হাজার ১৩০ পরিবার Logo দৌলতপুর ভিজিএফের ৩ হাজার কেজি চাল লুট, কারাগারে যুবক Logo বাঘায় জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল Logo বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে ৯৫টি মহিষ আমদানি Logo বাগাতিপাড়ার সাবেক সাংসদ বকুলের দুই বাড়ি জব্দ, ১০ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ Logo কুষ্টিয়ায় কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করছে বিআরবি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা Logo চাহিদা ভিত্তিক সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত Logo তানোরে ব্র্যাকের ধান বীজ বিতরণ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ভেড়ামারায় রাজা বাবু’র দাম ১০ লাখ টাকা

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে শেষ মুহুর্তে খামারীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। হাটে বাইরের ক্রেতা আসবেন কি না—এসবসহ নানাবিধ কারণে ঈদে পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে খামারিরা।

 

প্রাকৃতিক উপায়ে ও দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন এবং মোটাতাজা করেছেন খামারীরা। লাভের আশায় শেষ মুহুর্তে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে।

 

পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে, তাই বাড়তি দামে পশু বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে, হারাতে হবে পুঁজি। হাউখালি-মাদিয়া সড়কের ভিটি এলাকায় আমেরিকান প্রবাসী এগ্রো ফার্মে অর্ধ শতাধিক বাহারি গরু শোভা পাচ্ছে। রাজা বাবু’র দাম চাচ্ছে ১০ লাখ টাকা।

 

ঈদুল আজহার বিশেষ আকর্ষণ কোরবানির পশু জবেহ। করোনার মহামারি ও গো-খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গেল দুই-তিন বছর তেমন লাভ করতে পারেনি খামারিরা। অনেকে আবার লাভ ছাড়ায় বিক্রি করেছেন পশু।

 

লোকসানের ভয়ে কেউবা ছেড়ে দিয়েছে পশুপালন। এ বছর পরিমিত লাভের আশায় পশু পরিচর্যা করেছেন খামারিরা। কিন্তু এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আরো বেশি। পরিচর্যা খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। সেজন্য পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পশু খামারি ও পালনকারীরা।

 

খামারিসহ অন্যরাও ঈদুল আযহা সামনে রেখে সারা বছর গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালনপালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় তাদের।

 

ভেড়ামারার জগশ্বর কুঠিপাড়া এলাকার আশানুর রহমান বলেন, পরম যত্নে ছেলের মত রাজা বাবুকে লালন-পালন করেছি। রাজা বাবু’র দাম ১০ লাখ টাকা। তার পরও আলোচনার মাধ্যমে রাজা বাবুকে বিক্রয় করা হবে।

 

হাসানুজ্জামান বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই খামারিরা সারাবছর পশু হিসেবে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালনপালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় তাদের।

 

শুধু খামারিরা নয়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। তারাও পরিচর্যা খরচ, বেচাকেনা ও পরিমিত লাভের অংশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

 

এছাড়াও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ডেইরি ফার্ম বা গরু-ছাগল মোটা তাজাকরণ পেশা। এই কারণেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বড় বড় খামার। সেখানে সারাবছর কসাইদের কাছে পশু বিক্রি করা হলেও স্পেশাল পশু তৈরি করা হয় কোরবানি ঈদে অধিক লাভে বিক্রির জন্য।

 

রাজমিন্ত্রী খিলা হোসেন বলেন, তাদের বাড়িতে এবছর ২টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ১ বছর আগে গরুগুলো প্রায় ১ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। এখন খরচ-খচ্চাসহ দাম পড়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি। গত বছর গরুতে তাঁর লোকসান হয়েছে।

 

রওশনারা বেগম বলেন, তাদের খামারে এবছর ৬টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগে গরুগুলো প্রায় ১০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। এখন খরচ-খচ্চাসহ দাম পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ২২-২৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

 

তার ভাষ্য, তিনি আরো কিছু গরু কিনে ট্রাকে করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ঈদের বাজারে গরুগুলো বিক্রি করবেন। গত দুই বছরে গরুতে তাঁর প্রায় ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

 

আমেরিকান প্রবাসী এগ্রো ফার্মের মালিক আ. মান্নান বলেন, এ বছর খামারে কুরবানির জন্য ৫০টি হৃদপুষ্ট পশু রয়েছে। এবারের জন্য খামারে প্রায় ৮ থেকে ২০ মণ ওজনের ৫০টি গরু আছে। গরুগুলো শুরু থেকেই ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়াচ্ছি। নিজস্ব জমিতে লাগানো ঘাস খেকে বেশির ভাগ সময় ঘাস খাওয়ানো হয়।

 

ভেড়ামারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারজানা বলেন, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে উপজেলায় গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন খামারে বড় বড় গরু আছে। খামারিদের সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখছি এবং সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু আছে।

 

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পশু বিক্রির জন্য ভেড়ামারায় ২টি সাপ্তাহিক হাট রয়েছে। এছাড়াও অনলাইনে চলে বেচাকেনা। ন্যায্যমূল্যে পশু বেচাকেনার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

রাজশাহীতে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদযাপন সমাপনী

error: Content is protected !!

ভেড়ামারায় রাজা বাবু’র দাম ১০ লাখ টাকা

আপডেট টাইম : ০৪:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
ইসমাইল হােসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপাের্টার :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে শেষ মুহুর্তে খামারীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। হাটে বাইরের ক্রেতা আসবেন কি না—এসবসহ নানাবিধ কারণে ঈদে পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে খামারিরা।

 

প্রাকৃতিক উপায়ে ও দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন এবং মোটাতাজা করেছেন খামারীরা। লাভের আশায় শেষ মুহুর্তে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে।

 

পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে, তাই বাড়তি দামে পশু বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে, হারাতে হবে পুঁজি। হাউখালি-মাদিয়া সড়কের ভিটি এলাকায় আমেরিকান প্রবাসী এগ্রো ফার্মে অর্ধ শতাধিক বাহারি গরু শোভা পাচ্ছে। রাজা বাবু’র দাম চাচ্ছে ১০ লাখ টাকা।

 

ঈদুল আজহার বিশেষ আকর্ষণ কোরবানির পশু জবেহ। করোনার মহামারি ও গো-খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গেল দুই-তিন বছর তেমন লাভ করতে পারেনি খামারিরা। অনেকে আবার লাভ ছাড়ায় বিক্রি করেছেন পশু।

 

লোকসানের ভয়ে কেউবা ছেড়ে দিয়েছে পশুপালন। এ বছর পরিমিত লাভের আশায় পশু পরিচর্যা করেছেন খামারিরা। কিন্তু এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আরো বেশি। পরিচর্যা খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। সেজন্য পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পশু খামারি ও পালনকারীরা।

 

খামারিসহ অন্যরাও ঈদুল আযহা সামনে রেখে সারা বছর গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালনপালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় তাদের।

 

ভেড়ামারার জগশ্বর কুঠিপাড়া এলাকার আশানুর রহমান বলেন, পরম যত্নে ছেলের মত রাজা বাবুকে লালন-পালন করেছি। রাজা বাবু’র দাম ১০ লাখ টাকা। তার পরও আলোচনার মাধ্যমে রাজা বাবুকে বিক্রয় করা হবে।

 

হাসানুজ্জামান বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই খামারিরা সারাবছর পশু হিসেবে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালনপালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় তাদের।

 

শুধু খামারিরা নয়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। তারাও পরিচর্যা খরচ, বেচাকেনা ও পরিমিত লাভের অংশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

 

এছাড়াও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ডেইরি ফার্ম বা গরু-ছাগল মোটা তাজাকরণ পেশা। এই কারণেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বড় বড় খামার। সেখানে সারাবছর কসাইদের কাছে পশু বিক্রি করা হলেও স্পেশাল পশু তৈরি করা হয় কোরবানি ঈদে অধিক লাভে বিক্রির জন্য।

 

রাজমিন্ত্রী খিলা হোসেন বলেন, তাদের বাড়িতে এবছর ২টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ১ বছর আগে গরুগুলো প্রায় ১ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। এখন খরচ-খচ্চাসহ দাম পড়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি। গত বছর গরুতে তাঁর লোকসান হয়েছে।

 

রওশনারা বেগম বলেন, তাদের খামারে এবছর ৬টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগে গরুগুলো প্রায় ১০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। এখন খরচ-খচ্চাসহ দাম পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ২২-২৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

 

তার ভাষ্য, তিনি আরো কিছু গরু কিনে ট্রাকে করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ঈদের বাজারে গরুগুলো বিক্রি করবেন। গত দুই বছরে গরুতে তাঁর প্রায় ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

 

আমেরিকান প্রবাসী এগ্রো ফার্মের মালিক আ. মান্নান বলেন, এ বছর খামারে কুরবানির জন্য ৫০টি হৃদপুষ্ট পশু রয়েছে। এবারের জন্য খামারে প্রায় ৮ থেকে ২০ মণ ওজনের ৫০টি গরু আছে। গরুগুলো শুরু থেকেই ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়াচ্ছি। নিজস্ব জমিতে লাগানো ঘাস খেকে বেশির ভাগ সময় ঘাস খাওয়ানো হয়।

 

ভেড়ামারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারজানা বলেন, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে উপজেলায় গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন খামারে বড় বড় গরু আছে। খামারিদের সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখছি এবং সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু আছে।

 

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পশু বিক্রির জন্য ভেড়ামারায় ২টি সাপ্তাহিক হাট রয়েছে। এছাড়াও অনলাইনে চলে বেচাকেনা। ন্যায্যমূল্যে পশু বেচাকেনার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।


প্রিন্ট