আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান ড. এম আসাদুজ্জামান আর নেই। তার অকাল মৃত্যুতে বরেন্দ্র অঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
.
জানা গেছে, ২৩মে শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(রামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।এদিন শুক্রবার সকালে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
.
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএমডিএ প্রতিষ্ঠায় ড. আসাদুজ্জামানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, পানিসম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষি উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ড. এম আসাদুজ্জামান ছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা। তিনি প্রয়াত বিএনপি নেতা, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই। বিএমডিএর কর্মকর্তারা জানান, তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও কর্মনিষ্ঠা বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তার মৃত্যুতে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ শোকাহত।
.
জানা গেছে, বিগত ১৯৪৯ সালের পহেলা নভেম্বর রাজশাহীর বরেন্দ্রের গোদাগাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করেন ড,এম আসাদুজ্জামান।রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান আসাদুজ্জামান বড় হয়েছেন। প্রচন্ড খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রকৃতির রুক্ষতা আর বৈরীতা মোকাবেলা করে। ছোট বেলায় খুব কাছ থেকে দেখেছেন প্রচন্ড খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের খরাপীড়িত আর দারিদ্রের কষাঘাতে নিষ্পেষিত এ অঞ্চলের কৃষি নির্ভর মানুষগুলোকে জীবন জীবীকার তাগিদে সংগ্রাম করতে। ছেলে বেলায় কৃষকের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছেন নিজেদের জমিতে। বিগত ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ম্যাকডোনাল্ড এ্যান্ড পাটনার- এর কনসালটেন্ট হিসেবে বিএডিসিতে কর্মরত ছিলেন।
.
প্রকল্পের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৯৭৭ সালে বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে তার যাত্রা শুরু। শুরু হয় বাংলাদেশের ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ- উপরিস্থ সেচ ব্যবস্থাপণা নীতিমালা গভীরভাবে পর্যবেক্ষনের। দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা যখন মতামত দিয়েছিল রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে সেচ প্রদান সম্ভব নয়। তাদের মতামতের বিপক্ষে বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেন তিনি। পুরো বরেন্দ্র এলাকা ঘুরে কারিগরি তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে উপস্থাপন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীতে বিগত ১৯৮২-৮৩ সালে কারিগরি তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
.
এরপর পক্ষে-বিপক্ষে মত সুপারিশ আর তৎকালীন বিএডিসির কর্মকর্তাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় ডিপ-টিউবওয়েল গভীর নলকুপ বসানোর। বিগত ১৯৮৬ সালে প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। শুরু হয় বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কর্মযজ্ঞ। আসে একের পর এক সফলতা। ঠাঁ-ঠাঁ ধুধু বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় বৃষ্টি নির্ভর এক ফসলের জায়গায় শুরু হয় তিন ফসল উৎপন্ন। সবুজে সবুজে ভরে যায় ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলের চারিদিক। বৃহত্তর রাজশাহী থেকে কুড়িগ্রাম জেলা পর্যন্ত পুরো উত্তরাঞ্চল-জুড়ে চলে বরেন্দ্র প্রকল্পের কর্মকান্ড ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়। বরেন্দ্রের অঞ্চলের প্রাণপুরুষ খ্যাত ড,এম আসাদুজ্জামান।
.
স্থানীয়রা জানান, ড,এম আসাদুজ্জামানের বড় ভাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অপর ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সামরিক সচিব। আরেক ভাই ড, এম এনামুল হক পুলিশের সাবেক আইজিপি, অপর ভাই দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক। তার পরিবারের সকলে উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। তার মা রত্নগর্ভা খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
প্রিন্ট