আব্দুস সালাম তালুকদারঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে আম বাগানের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে মাসকলাই। মাসকলাইয়ের বীজ ডাল হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। ঐতিহ্যবাহী খাবার কলাইয়ের রুটিও তৈরি হয় মাসকলাই ডাল থেকেই। তাই মাসকলাই ডালের চাহিদা ও কদর রয়েছে বাজারে। মাসকলাই ডাল সহজে হজম হয় এবং এতে প্রচুর আমিষ রয়েছে। মাসকলাই ডালের পুষ্টিগুন নানাবিধ। যেমনঃ খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও শর্করা ইত্যাদি পাওয়া যায়। মাসকলাই চাষে খুব বেশি পরিচর্যা বা খরচের প্রয়োজন পড়েনা। সেজন্য আমের বাগানে মাসকালাই চাষে ঝুঁকেছে আম চাষিরা। এবং অল্প খরচে স্বল্প সময়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।
উপজেলায় মাসকলাই হিসেবে চাষ হচ্ছে জনপ্রিয় জাত বারি মাস-১, বারি মাস-২, বিনা মাস-৪, বিনা মাস-৫। মাসকলাই আবাদে বিঘা প্রতি সর্ব্বোচ্চ খরচ হয় ২ হাজার টাকা। এবং ৬০ থেকে ৬৫ দিনে এই ফসল উত্তোলন করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ মন পর্যন্ত মাসকলাই উৎপাদন হয়ে থাকে। এবং বাজারে মাসকলাই ৩৫০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা মন বিক্রি হয়। সেই হিসেবে অল্প সময়ে স্বল্প খরচে লাভজনক ফসল হিসেবে এই ফসলের গুরুত্ব আরো বাড়ছে।
উপজেলার বেশ কিছু আম বাগান সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, আম বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে মাসকলাই। গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাসকলাইয়ের পরিপক্কতা জানান দিচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষিতে নতুন এক সম্ভবনা। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে চলতি মাসেই মাসকলাই উত্তোলন করা হবে। এতে করে প্রতি বিঘা জমিতে অল্প উৎপাদন খরচে নতুন একটা ফসল প্রাপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
উপজেলায় আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে মাসকলাই, পেয়ারা, মাল্টা, সরিষা, শশা ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল। তাই আম বাগানে সাথী ফসল চাষের সাথে সাথে উপজেলায় জমির বাৎসরিক লীজ বেড়েছে ২-৩ গুন। চাষিরা লাভবান হওয়ার সাথে সাথে জমির মালিকরাও লাভবান হচ্ছে। যেখানে ২-৩ বছর পূর্বে জমির মানিকরা বাৎসরিক প্রতি বিঘা জমির লীজ পেতেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সেখানে বর্তমানে বিঘা প্রতি বাৎসরিক লীজ পাচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা যা পূর্বের তুলনায় ২-৩ গুন বেশি।
রহনপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. বেলাল জানান, আমার ৭ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। আম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে বাড়তি ফসল হিসেবে মাসকলাই চাষ করেছি। সাথী ফসল হিসেবে এই ফসল চাষ না করলে আমার জমি পতিত থাকতো। তাই কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সাথী ফসল হিসেবে আমি মাসকলাই চাষ করেছি।
এই ফসল চাষ করাতে অধিক পরিচর্যার ঝামেলা নেই। আবার অল্প খরচে স্বল্প সময়ে আয় আসে। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি।
পারবর্তীপুর ইউনিয়নের বাগান চাষি মো. খাদেম আলী জানান, আমি এক বছর আগে ১৬ বিঘা জমিতে আম বাগান করেছি। আমার আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাসকলাই চাষ করছি। এই আম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে মাসকলাই চাষে বীজ বপন থেকে ফসল ঘরে তুলা পর্যন্ত সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা । এতে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মন মাসকলাই উৎপাদন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকা। এতে আমার বাড়তি একটা আয়ের সম্ভবনা রয়েছে। এই মাসকলাই উত্তোলনের পর পরই আবার সাথী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করবো। আমার দেখাদেখি আরো অনেক কৃষক সাথী ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাকলাইন হোসেন জানান, উপজেলায় ৩ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই আবাদ হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ১ হাজার ৫০ জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনা মূল্যে মাসকলাই বীজ সার বিতরণ করেছি। আম বাগান, উঁচু ফাঁকা জমি ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পর পানি নেমে যাওয়ার ফলে এই সব জমি গুলোতে অন্য কোন ফসল আবাদের সুযোগ থাকেন।
এসব জমি গুলোতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাসকলাই চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩৭৬ মেঃ টঃ মাসকলাই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি এই লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে যাবে। আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাসকলাই চাষ প্রযুক্তিটি ইতিমধ্যে প্রচলিত হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকদের বাড়তি একটা আয়ের সংস্থান করা। আমরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাসকলাই জমিগুলো প্রদর্শন করে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি।
প্রিন্ট

বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা 
আব্দুস সালাম তালুকদার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি 




















