মানিক কুমার দাসঃ
ফরিদপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে । কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ফরিদপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার সংক্রান্ত এ প্রেস ব্রিফিং আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেন পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল জলিল।
এ সময় ফরিদপুর জেলা পুলিশের কর্মকর্তা বৃন্দ, ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল সহ ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সদস্য বৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় গত ৯ নভেম্বর সকাল ০৬.২০ মিনিটের সময় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল গামী সিভিল সার্জন ফরিদপুর কার্যালয়ের সামনে পাঁকা রাস্তার উপর আগামী ১৩ নভেম্বর তারিখে ঢাকা শহর লকডাউন সহ সারা বাংলাদেশকে অচল করার লক্ষে আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সমর্থনকারী/কর্মীরা এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ সংঘঠনের নেতাকর্মীরা দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, সরকারের বিপক্ষে নানা ধরনের উষ্কানিমূলক স্লোগান দেওয়ার জন্য একত্রিত হয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাত, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি, জন নিরাপত্তা বিপন্ন করা, জনমনে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ও প্রচেষ্টা করে।
উক্ত ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থ যোগানদাতা হল মোঃ ফারুক হোসেন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে কোতয়ালী থানা পুলিশ গতকাল সোমবার সন্ধ্যা অনুমান ৬:৩০ মিনিটের সময় অভিযান পরিচালনা করে কোতয়ালী থানাধীন ফ্ল্যাট নং-এ-১, (১০ম তলা), নূরজাহান টাওয়ার, ঝিলটুলী; ফরিদপুর হতে আসামী ১) মোঃ ফারুক হোসেন(৫৩) , (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি- ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ), পিতা-মৃত জাহেদ হোসেন, স্থায়ী সাং-বিন্দুবাড়ি সড়ক, ১নং হাবেলী গোপালপুর, এ/পি সাং-ফ্ল্যাট নং-এ-১, (১০ম তলা), নূরজাহান টাওয়ার, কিলটুলী, থানা-কোতয়ালী, জেলা-ফরিদপুর, ২) নাসরিন আক্তার (২৮), (আহবায়ক কমিটির সদস্য-ফরিদপুর জেলা যুব মহিলালীগ), পিতা-মৃত ফিরোজ শেখ, স্থায়ী সাং-২নং কুঠিবাড়ী, রেলকলোনী সংলগ্ন, থানা-কোতয়ালী, জেলা-ফরিদপুর দ্বয়কে গ্রেফতার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, আগামী ১৩ নভেম্বর তারিখে আওয়ামী লীগের ডাকা ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে সফল করার জন্য ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী তাকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছে এবং উক্ত টাকার মধ্যে ৪ লক্ষ টাকা মোঃ ফারুক হোসেন ইতঃমধ্যে একজন ব্যক্তিকে প্রদান করেছে।
এছাড়া সে বিভিন্ন সময়ে দলীয় প্রোগ্রাম করার জন্য বিকাশে তার দলীয় লোকজনকে অর্থ প্রেরন করেছে মর্মে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
তার নিকট হতে প্রাপ্ত মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে ঢাকা লকডাউনকে সফল করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করেছে মর্মে পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামী মো: ফারুক হোসেন ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।
সে ১৯৮১ সালে সরকারী ইয়াছিন কলেজের ভিপি ছিল। ১৯৮২ সালে সে জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারী এবং পরবর্তীতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। এরপর সে যুবলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয় এবং জেলা যুবলীগের সেক্রেটারী ও সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। সে ২০১২ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিল। অতপর ২০২১ সাল হতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
৫ই আগষ্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের অনুপস্থিতিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব পালন করছে। সে সরকারী ইয়াছিন কলেজে ভিপি থাকাকালীন হরতালের সময় বোমা বিস্ফোরন ঘটাতে গিয়ে তার হাতে মধ্যেই বোমা বিস্ফোরিত হলে তার বাম হাতে মধ্যমা আঙ্গুল বিছিন্ন হয়ে যায়। সে সড়ক ও জনপথ বিভাগে ঠিকাদারের কাজ করলেও রর্তমানে সে কিছু করছে না। সে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করে এবং তার উক্ত ঠিকানা সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তার বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বে ৬ টি মামলা রুজু হয়েছে।
মামলা সমূহ-
১) ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার মামলা নং-৭১, তাং-৩০-০৪-২০২৫ খ্রিঃ, খায়া- ৮/৯(৩)/১০/১১ সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯। আর মামলায় সে এজাহারভুক্ত আসামী।
২) ডিএমপি এর পল্লবী থানায় মামলা নং-২১, তাং-১২-১১-২০২৪ মিঃ; ধারা-১৫৩/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩৪ পেনাল কোড। অত্র মামলায় সে এজাহারভুক্ত আসামী।
৩) ডিএমপি এর লালবাগ থানায় মামলা নং-০৫, তাং-১০-১০-২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০২/১০৯/৩৪ পেনাল কোড। মামলায় সে এজাহারভুক্ত আসামী।
৪) ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার মামলা নং-১৫, তাং-১০-১০-২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-১৪৩/১৪৪/১৪৭/১৪৮/১৫৩/৩৫২/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/১০৯/১১৪/৩৪ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এর ৩/৪/৬ ধারা। অস্ত্র মামলায় সে এজাহারভূক্ত আসামী।
৫) ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার মামলা নং-৩৭, তাং-১২-০৯-২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড। এ মামলায় সে এজাহারভুক্ত আসামী।
৬) ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার মামলা নং-১৯, তাং-০৮-১১-২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩৫ বিদ্যুৎ আইন। এ মামলায় সে তদন্তেপ্রাপ্ত আসামী।
অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় ৪টি এবং ডিএমপি, ঢাকাতে ২টি মামলা রয়েছে। সে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দলের পলাতক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং জেলার মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দদের সাথে সমন্নয় করছে।
ঢাকা লকডাউন প্রোগ্রাম সফল করার জন্য সে দলীয় নেতৃবৃন্দকে সংগঠিত করার পাশাপাশি সে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে কাজ করছে। সে ফরিদপুর জেলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ ও নিষিদ্ধ সংঘঠন ছাত্রলীগের সকল চোরা মিহিলের সমন্নয়কারী ছিল বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
প্রিন্ট

বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা 
মানিক কুমার দাস, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি 




















