রাজধানীতে সহজে যাতায়াতের জন্য মিরপুরের কালশীতে নির্মিত হয়েছে ঢাকার সপ্তম ফ্লাইওভার। দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভারটি চালু হলে মিরপুরবাসীর কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে। মিরপুরের সঙ্গে বনানী, উত্তরা ও রাজধানীর পূর্বাংশের যোগাযোগ আরো সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।ফ্লাইওভার থেকে নামলেই মিরপুরের ইসিবি চত্বর পর্যন্ত নির্মিত ছয় লেনের আধুনিক সড়ক দিয়ে খুব কম সময়ে পৌঁছানো যাবে বিমানবন্দর। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা, যা শেষ হচ্ছে আগামীকাল। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ’ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
এত দিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না করায় ফ্লাইওভার বন্ধ ছিল। তবে নিচের প্রশস্ত রাস্তা চালু করায় তার সুফল পাচ্ছিল মিরপুরের বাসিন্দারা। সড়ক প্রশস্ত হওয়ায় যানজট হচ্ছে না। ফ্লাইওভারেও ভালো সুফলের আশা করছে মিরপুরবাসীসহ সড়ক ব্যবহারকারীরা।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ও মিরপুর ডিওএইচএসমুখী ২.৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এই ফ্লাইওভারের র্যাম্প রয়েছে পাঁচটি। মিরপুর ডিওএইচএস প্রান্ত এবং ইসিবি চত্বরের দিকের প্রান্ত থেকে ফ্লাইওভারে ওঠা যাবে। কালশী রোড প্রান্ত দিয়ে শুধু নামার সুযোগ রয়েছে। ফ্লাইওভারের নিচে প্রশস্ত করা রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩.৭ কিলোমিটার, যা মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বর থেকে শুরু হয়ে কালশী মোড় থেকে মিরপুর ডিওএইচএসে চলে গেছে। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
এটির বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় দুটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, একটি পিসি গার্ডার ব্রিজ সম্প্রসারণ, একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, দুটি পুলিশ বক্স, ৭.৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন ও সসার ড্রেন নির্মাণ, ১.৭৬ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন নির্মাণ, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন এবং ছয়টি বাস ও যাত্রীছাউনি করা হয়েছে।ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, ওই এলাকায় মিরপুর সেনানিবাস, চিড়িয়াখানা, সেনাবাহিনীর আবাসন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। মিরপুরের যাতায়াত সহজ করতে আগেই নতুন সড়ক ও সেনানিবাস এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে মিরপুরে যাতায়াতে সড়কটির ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। তবে কালশী মোড় এলেই প্রায় যানজট হতো। কারণ সড়কটি অপ্রশস্ত ছিল। এখন ওই পথ দৈনিক এক লাখ যানবাহনের চাপ সামলাতে পারবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ মিরপুরবাসীর জীবনে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ও পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে কাজ শেষ করতে পেরেছি।’মেয়র আরো বলেন, ‘রাজধানীর সড়ক ও যান চলাচল ব্যবস্থায় কালশী ফ্লাইওভার একটি নতুন দিক উন্মোচন করবে। এখন আর মিরপুর থেকে এয়ারপোর্ট যেতে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এ ছাড়া মিরপুরের সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগও সহজ হবে এই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে।’কালশী ফ্লাইওভারকে ঢাকাবাসীর জন্য বসন্তের উপহার উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু ফ্লাইওভার নয়, কালশীতে যানজটের পাশাপাশি জলজট দূর করতে আমরা খাল পরিষ্কার করেছি। আর এসব সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কল্যাণে। ফ্লাইওভারটি মিরপুর ও ঢাকাবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বসন্তের উপহার। এই সুন্দর প্রকল্পটির দিকে সবার নজর রাখতে হবে, যাতে প্রশস্ত সড়ক ও ফুটপাত অবৈধভাবে দখল না হয়। এটি শুধু সিটি করপোরেশনের কাজ নয়, সাধারণ মানুষকেও এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।’
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের নিচের অংশে নানা রকম ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। আশপাশের সড়কের নির্দেশনার জন্য লাগানো হয়েছে রোড সাইন। সড়ক পরিবর্তনের জন্যও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে ইউটার্নের ব্যবস্থা। ওপরে ফ্লাইওভার, নিচে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের নজর কাড়ছে। এ ছাড়া ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক বিভাজকে লাগানো সবুজ ঘাস ও নানা রকম বাহারি ফুলের গাছের সামনেও অনেককেই ছবি তুলতে দেখা গেছে। তবে গত কয়েক বছর সড়ক ও ফ্লাইওভার উন্নয়নকাজে মিরপুর থেকে উত্তরা, গুলশান, বনানী যেতে ভোগান্তি ভুলে এবার সবাই শান্তির কথা বলছে।
আরিফুর রহমান নামের মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের এক শিক্ষার্থী বন্ধুদের নিয়ে দেখতে আসেন নতুন এই যাত্রা। আরিফ বলেন, ‘উন্নয়নকাজের কারণে কয়েক বছর মিরপুর থেকে উত্তরা, গুলশান, বনানী যেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কয়েক দিন পর শুনেছি প্রধানমন্ত্রী ফ্লাইওভার আর রাস্তা উদ্বোধন করবেন। তাই একটু আগেই বন্ধুদের নিয়ে চলে এলাম।’