মোঃ নূর ই আলম (কাজী নূর)ঃ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন অপরিহার্য। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতির মুক্তি মিলবে না, বরং সেই নির্বাচনে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। জনগণের অধিকার রক্ষা এবং দেশের স্বার্থ অটুট রাখতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (২১ জুন) সকাল ৯টায় যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকন শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন,
“যারা দীর্ঘদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে এসেছে, তারাই গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে এবং ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজ দেশের জনগণ সেই অনিয়মের শিকার।”
ভারতের ভূমিকাকে বাংলাদেশের জন্য হুমকি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন,
“প্রতিবেশী দেশ ভারত দীর্ঘদিন ধরে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে আসছে। তারা এখন এক দণ্ডিত খুনিকে আশ্রয় দিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। জাতিকে এই চক্রান্তের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন,
“জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে কোনো বিদেশি বা স্বার্থান্বেষী শক্তি আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চাইলে গণজাগরণ ঘটাতে হবে। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।”
জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন,
“আমরা সবসময় সকল দলের অংশগ্রহণে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন আয়োজনের আগে খুনিদের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার করা জরুরি। আর এ দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। দ্রুত এই কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচনকাল ঘোষণা করা হলে জামায়াত আপত্তি করবে না।”
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও জাতি কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি, সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন,
“আজ নতুন করে পুরোনো বিতর্ক উসকে দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা চলছে। এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“এই জাতিকে কার্যকর গণতন্ত্র, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ধর্মীয় মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। সামনে প্রতিকূলতা যতই আসুক, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে আমরা পিছপা হবো না।”
জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল তার বক্তব্যে বলেন,
“আমাদের দায়িত্ব ইসলামের মূলনীতিকে আঁকড়ে ধরে জীবন পরিচালনা করা এবং সমাজে সত্য ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত রাখা। রুকন হিসেবে নিজেকে সবসময় আদর্শবান, শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং আমানতদার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মান উন্নয়ন ছাড়া আন্দোলন শক্তিশালী হয় না।”
রুকন শিক্ষা শিবিরে বিশেষ অতিথি ছিলেন—
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সহকারী পরিচালক (যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল) মাওলানা আজীজুর রহমান
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ
চুয়াডাঙ্গা জেলা আমীর অ্যাড. রুহুল আমিন
আরও উপস্থিত ছিলেন—
যশোর জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান
জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস, বেলাল হোসাইন, মাওলানা রেজাউল করিম, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান
পেশাজীবী থানার আমীর খন্দকার রশিদুজ্জামান রতন
যশোর শহর আমীর অধ্যাপক শামসুজ্জামান প্রমুখ।
রুকন শিক্ষা শিবিরটি সঞ্চালনা করেন জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিকী।
প্রিন্ট