ঢাকা , সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে তিন ডিসি ও তিন এসপিকে নির্দেশ

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়া, পাবনা ও নাটোর জেলার পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ বিষয়ে তিন জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), কুষ্টিয়া–পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং রাজশাহী জোনের নৌ–পুলিশ সুপারকে লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।

 

গত সোমবার (১০ নভেম্বর ২০২৫) বিআইডব্লিউটিএ–র প্রশাসন ও মানবসম্পদ পরিচালক কাজী ওয়াকিল নওয়াজ স্বাক্ষরিত এ চিঠি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়।

 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নাটোরের লালপুর উপজেলার দিয়ার বাহাদুরপুর বালুমহালটি বাংলা ১৪৩২ সনের জন্য বৈধভাবে ৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায় ইজারা পেয়েছেন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক শহিদুল ইসলাম। কিন্তু বালু উত্তোলনে গেলে একদল দুষ্কৃতিকারী তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং ইজারাকৃত মহালে আগত বাল্কহেডগুলোকে বালু নিতে বাধা দিচ্ছে। একই সাথে তারা অন্য সীমানা থেকে নিজেদের ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

 

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা দাবি করছে, ২০০৮ সালে নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ তাদেরকে অনুমতি দিয়েছিল এবং এ বিষয়ে নাকি হাইকোর্টের আদেশ রয়েছে। এই দাবি তদন্ত ও যাচাইয়ের জন্য শহিদুল ইসলাম গত ২৬ অক্টোবর বিআইডব্লিউটিএতে আবেদন করেন।

 

চিঠিতে আরও বলা হয়, মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, শাওন এন্টারপ্রাইজ ও আনোয়ারুল হক মাসুম নামের তিন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বালু উত্তোলন করতে ব্যর্থ হওয়ার দোষ চাপাচ্ছেন আইনগত জটিলতার ওপর। অথচ তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বহু আগেই। ১৭-১৮ বছর আগের অনাপত্তি পত্রকে সামনে এনে তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত একটি ‘অশুভ সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

 

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, বর্তমানে বালু উত্তোলনের পূর্ববর্তী অনুমতি বা অনাপত্তি পত্র কার্যকর নয়, কারণ এ সময়ে মাটি–বালু ব্যবস্থাপনা আইন–বিধি প্রণীত হয়েছে। তাই আগের কাগজ দেখিয়ে উত্তোলন মোটেও বৈধ নয়।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চরভবানীপুর এলাকায় মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের মালিক সুলতান আলী বিশ্বাস ওরফে টনি বিশ্বাস নৌ–পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে এবং জেলা প্রশাসকের মৌখিক অনুমতির কথা বলে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। প্রতিদিন শতাধিক নৌকা ও বাল্কহেডে বালু পাচার হওয়ায় বৈধ ইজারাদার শহিদুল ইসলাম ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

 

শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ঈশ্বরদীর সারাঘাট ও কুষ্টিয়ার হরিপুর এলাকায় জাকারিয়া পিন্টু ও টনি বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু তুলছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে দেরি করছে। কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়ে আমার বৈধ ইজারার টিকিট কাউন্টার ও রান্নাঘর পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার বালুঘাটে আসা নৌকাগুলোকে মারধর ও চাঁদাবাজি করছে তাদের লোকেরা।

 

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “বালু উত্তোলনের অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। যাদের কাগজের কথা বলা হয়েছে, সেটা পুরোনো রিট—যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।”

 

লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ–পুলিশের ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, “আমরা নদীতে টহল বাড়িয়েছি। চিঠি পাওয়ার পর অবৈধভাবে যারা উত্তোলন করছিল, তাদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছি। আমাদের দেখা পেলেই তারা পালিয়ে যায়।

 

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, চিঠিটি আগে দেখে নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা সভায় এসব আলোচনায় আসে। আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদ্রাসায় কর্মচারি নিয়োগে অধ্যক্ষের জালিয়াতির অভিযোগ

error: Content is protected !!

পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে তিন ডিসি ও তিন এসপিকে নির্দেশ

আপডেট টাইম : ৭ ঘন্টা আগে
ইসমাইল হােসেন বাবু :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়া, পাবনা ও নাটোর জেলার পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ বিষয়ে তিন জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), কুষ্টিয়া–পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং রাজশাহী জোনের নৌ–পুলিশ সুপারকে লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।

 

গত সোমবার (১০ নভেম্বর ২০২৫) বিআইডব্লিউটিএ–র প্রশাসন ও মানবসম্পদ পরিচালক কাজী ওয়াকিল নওয়াজ স্বাক্ষরিত এ চিঠি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়।

 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নাটোরের লালপুর উপজেলার দিয়ার বাহাদুরপুর বালুমহালটি বাংলা ১৪৩২ সনের জন্য বৈধভাবে ৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায় ইজারা পেয়েছেন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক শহিদুল ইসলাম। কিন্তু বালু উত্তোলনে গেলে একদল দুষ্কৃতিকারী তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং ইজারাকৃত মহালে আগত বাল্কহেডগুলোকে বালু নিতে বাধা দিচ্ছে। একই সাথে তারা অন্য সীমানা থেকে নিজেদের ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

 

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা দাবি করছে, ২০০৮ সালে নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ তাদেরকে অনুমতি দিয়েছিল এবং এ বিষয়ে নাকি হাইকোর্টের আদেশ রয়েছে। এই দাবি তদন্ত ও যাচাইয়ের জন্য শহিদুল ইসলাম গত ২৬ অক্টোবর বিআইডব্লিউটিএতে আবেদন করেন।

 

চিঠিতে আরও বলা হয়, মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, শাওন এন্টারপ্রাইজ ও আনোয়ারুল হক মাসুম নামের তিন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বালু উত্তোলন করতে ব্যর্থ হওয়ার দোষ চাপাচ্ছেন আইনগত জটিলতার ওপর। অথচ তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বহু আগেই। ১৭-১৮ বছর আগের অনাপত্তি পত্রকে সামনে এনে তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত একটি ‘অশুভ সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

 

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, বর্তমানে বালু উত্তোলনের পূর্ববর্তী অনুমতি বা অনাপত্তি পত্র কার্যকর নয়, কারণ এ সময়ে মাটি–বালু ব্যবস্থাপনা আইন–বিধি প্রণীত হয়েছে। তাই আগের কাগজ দেখিয়ে উত্তোলন মোটেও বৈধ নয়।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চরভবানীপুর এলাকায় মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের মালিক সুলতান আলী বিশ্বাস ওরফে টনি বিশ্বাস নৌ–পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে এবং জেলা প্রশাসকের মৌখিক অনুমতির কথা বলে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। প্রতিদিন শতাধিক নৌকা ও বাল্কহেডে বালু পাচার হওয়ায় বৈধ ইজারাদার শহিদুল ইসলাম ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

 

শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ঈশ্বরদীর সারাঘাট ও কুষ্টিয়ার হরিপুর এলাকায় জাকারিয়া পিন্টু ও টনি বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু তুলছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে দেরি করছে। কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়ে আমার বৈধ ইজারার টিকিট কাউন্টার ও রান্নাঘর পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার বালুঘাটে আসা নৌকাগুলোকে মারধর ও চাঁদাবাজি করছে তাদের লোকেরা।

 

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “বালু উত্তোলনের অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। যাদের কাগজের কথা বলা হয়েছে, সেটা পুরোনো রিট—যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।”

 

লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ–পুলিশের ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, “আমরা নদীতে টহল বাড়িয়েছি। চিঠি পাওয়ার পর অবৈধভাবে যারা উত্তোলন করছিল, তাদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছি। আমাদের দেখা পেলেই তারা পালিয়ে যায়।

 

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, চিঠিটি আগে দেখে নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা সভায় এসব আলোচনায় আসে। আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট