জসীমউদ্দীন ইতিঃ
একজনই ব্যক্তি, অথচ মাদরাসার দুই পদে চাকরি করছেন। আরো বিস্ময়কর হলো, দুটি পদেই তিনি এমপিওভুক্ত হয়েছেন এবং নিয়মিত ব্যাংক থেকে বেতনও তুলছেন। দীর্ঘদিন ধরে এমন অনিয়ম চললেও মাদরাসা প্রধান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যেন ‘দেখেও না দেখার ভান’ করে চলছেন।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এমন প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন তারা।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ার উদ্দীন দাখিল মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে একাই চাকরি করছেন শাহিনা বেগম।
গত সেপ্টেম্বর মাসেও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এমপিও শিটে তার দুটি পদের বিপরীতে বেতন-ভাতা প্রদানের প্রমাণ মিলেছে। তিনি নিয়মিতই এই বেতন উত্তোলন করছেন।
ব্যানবেইজের (বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো) তথ্য অনুযায়ী, শাহিনা বেগম ১৯৯৬ সালে অফিস সহকারী (কেরানি) পদে নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ার উদ্দীন দাখিল মাদরাসায় যোগদান করেন। ৮ বছর পর, তিনি কর্মরত পদ থেকে অব্যাহতি না নিয়ে একই মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন।
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি ও সুপার তাকে অফিস সহকারী পদে কর্মরত রেখেই ২০০৪ সালে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন এবং তিনি যোগদান করেন। গত তিন মাসের অনলাইন এমপিও শীটে তার দুটি পদের বিপরীতে বেতন-ভাতা প্রদানের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং তিনি নিয়মিত বেতন তুলছেন।
দুই পদে কর্মরত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিনা বেগম বলেন, ‘শিক্ষক পদে আছি। মাদরাসা সুপার বলেছে, যখন অফিস সহকারী নিবে তখন সেটা কাটা পড়বে।’ একই ব্যক্তি এক প্রতিষ্ঠানে দুই পদে কর্মরত থাকতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, ওই মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) মাসুদ রানা ভুয়া সাময়িক সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। তিনি মাদরাসায় নিয়মিত উপস্থিত না থাকলেও মাদরাসা সুপার এলাকার বেশ কয়েকজনের কাছে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।
মাসুদ রানা এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি এবং দুদিন সরেজমিনে গিয়েও তার দেখা মেলেনি।
অভিভাবকরা জানান, মাদরাসাটি উপজেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় মাদরাসার সুপার নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করছেন। শিক্ষার মান তলানিতে। তিনি নিয়মিত মাদরাসায়ও আসেন না। তিনি মাসে দুই-একদিন আসার পরে হাজিরা খাতায় একসঙ্গে সবগুলো সই করেন এমন অভিযোগ রয়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ার উদ্দীন দাখিল মাদরাসার সুপার আবু তালেব বলেন, ‘অভিযোগ করতেই পারে, অভিযোগ করুক। শাহিনা বেগম দুই পদে নিয়োগ নিয়েছেন, তার কাছে কাগজপত্র আছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।
একই ব্যক্তি দুই পদে এমপিও ভুক্তির তালিকায় রয়েছেন, এমন বিষয় নজরে নেই বলে জানিয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী শাহরিয়ার। তিনি বলেন, এমপিও’র শীট দেখতে হবে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান, এসব বিষয় উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেখবেন।
মাদরাসায় শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকার দাবি করা হলেও দুদিন সরেজমিনে গিয়ে তিন শ্রেণিতে মোট ১০ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আক্তার বলেন, আমাদের কাছে ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
প্রিন্ট

বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা 
জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি 




















