ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ভেড়ামারায় কৃষি প্রযুক্তি মেলায় পুরস্কার বিতরণ Logo পদ্মায় কাঙ্খিত পানি না থাকায়, জিকে’র মেইন তিনটি সেচ পাম্প বন্ধ Logo পেঁয়াজ বীজ কিনে কৃষকেরা প্রতারিতঃ থানায় অভিযোগ Logo গাজীপুরে শীতার্থদের মাঝে বিএনপি’র কম্বল বিতরন Logo রাজশাহীতে জাতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন Logo মধুখালীতে রাসবিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে একটি পুকুর কুড়ি পরিবারের দুর্ভোগ Logo মাগুরা সদর উপজেলার ৭ নং মঘী ইউনিয়নে কৃষকদলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo মধুখালীতে লালতীর সীড আয়োজিত ‘কৃষক মাঠ’ দিবস অনুষ্ঠিত Logo খোকসায় ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার প্রথম পর্ব সমাপ্তি
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সাইন্সফিকশন ছোটগল্পঃ নতুন পৃথিবীর খোঁজে

-শামীম আহমেদ

মেঘরাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অসীম নক্ষত্রের ঝিলমিলের মধ্যে সে যেন হারিয়ে যায়। তার সবসময়ের স্বপ্ন ছিল, একদিন সে নতুন একটি গ্রহের সন্ধান করবে। আজ সেই স্বপ্নের শুরু। পৃথিবী থেকে ৩১ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহ “জেনোসিস-৭” নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব পেয়েছে সে।

২০৯৯ সাল। পৃথিবীর জলবায়ুর অবনতি, প্রাকৃতিক সম্পদের ফুরিয়ে যাওয়া এবং জনসংখ্যার ভারে ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে মানবজাতি। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন গ্রহে মানুষের বসবাসের সম্ভাবনা খুঁজছেন। নাসার মিশন “অ্যাপোলো ইনফিনিটি” এর অধীনে একটি বিশেষ দল পাঠানো হবে, যারা সরাসরি জেনোসিস-৭ এ গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে।

মেঘরাজের টিমের সবাই উজ্জীবিত। ক্যাপ্টেন লিন্ডা, যিনি একসময় যুদ্ধবিমান চালাতেন, এখন এই মহাকাশযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইঞ্জিনিয়ার রাহুল, বিজ্ঞানী মায়া, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট “নোভা” – সবাই তাদের নির্ধারিত কাজের জন্য প্রস্তুত।

 

যানটি স্পেস লঞ্চ প্যাড থেকে ছাড়ার সময় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে উঠতে একটু সময় নেয়। নীরবতা ভেদ করে শুধু ইঞ্জিনের গর্জন শোনা যায়। কৃত্রিম ঘুমের চেম্বারে গিয়ে সবাই একে একে ঢুকে পড়ে, কারণ ৫ বছরের যাত্রা এভাবে কাটানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

অবশেষে, তারা যখন জেনোসিস-৭ এর কক্ষপথে পৌঁছায়, তখন তাদের ঘুম ভাঙানো হয়। নীলাভ গ্রহটি দূর থেকে দেখতে পৃথিবীর মতোই। মায়ার চোখে একধরনের জ্বলজ্বলে উত্তেজনা। “এটা বাস্তব!

এখানে প্রাণ থাকতে পারে!”

তারা গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ শুরু করে। অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, এবং পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ল্যান্ডিং মডিউল ব্যবহার করে তারা গ্রহের পৃষ্ঠে নামে। নেমেই তারা চমকে ওঠে – গ্রহটি সম্পূর্ণ নীরব, কিন্তু তার চারপাশে ছোট ছোট ঝলকানো প্রাণীর উপস্থিতি দেখা যায়।

“এরা কী?” রাহুল প্রশ্ন করে।

“তাদের দেহ আলো শোষণ করে এবং রাতে তা জ্বলে ওঠে,” মায়া বলে। “কিন্তু এখানে কোনো হুমকি আছে কি না, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই নোভা অদ্ভুত সংকেত শনাক্ত করে। “এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব রয়েছে এবং তারা আমাদের উপস্থিতি জানে,” নোভা বলে।

ঠিক তখনই চারপাশে অদ্ভুতভাবে ঝলমলে আলো জ্বলে ওঠে। তাদের সামনে ভেসে ওঠে একটি বড়, গোলাকার বস্তু। সেটি কথা বলতে শুরু করে, কিন্তু কোনো শব্দ হয় না। মায়া তাদের হেলমেটে একটি বার্তা পড়তে পারে – “তোমরা কারা? কেন এসেছ?”

 

মেঘরাজ সামনে এগিয়ে এসে বলে, “আমরা পৃথিবী থেকে এসেছি। আমরা কেবল জানার চেষ্টা করছি, এই গ্রহে প্রাণ ও বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ আছে কি না।”

জবাবে বস্তুটি বলে, “আমরা এই গ্রহের রক্ষক। এখানে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তোমাদের গ্রহ তোমরা রক্ষা করো। আমাদের মতো ভুল করো না।”

মেঘরাজ বিস্মিত হয়ে বলে, “তোমরা কীভাবে ধ্বংস হয়েছ?” রক্ষক একটি ছবি দেখায়। তাদের উন্নত প্রযুক্তি ও লোভ তাদের গ্রহকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

“তোমরা যদি এখান থেকে ফিরে যাও, তাহলে হয়তো নিজের গ্রহকে বাঁচানোর সুযোগ পাবে।” মেঘরাজ ও তার দল পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ফেলে আসা গ্রহটি তাদের মনে এক গভীর বার্তা রেখে যায়।

পৃথিবীতে ফিরে এসে মেঘরাজ সেই বার্তাটি ছড়িয়ে দেয়। মানুষকে শেখানো হয়- প্রযুক্তি ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রাখা কতটা জরুরি।

আর জেনোসিস-৭? এটি আকাশের নক্ষত্রের মাঝে এখনও অমীমাংসিত এক রহস্য হয়ে জ্বলজ্বল করছে…।

লেখকঃ -শামীম আহমেদ
              -কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

ভেড়ামারায় কৃষি প্রযুক্তি মেলায় পুরস্কার বিতরণ

error: Content is protected !!

সাইন্সফিকশন ছোটগল্পঃ নতুন পৃথিবীর খোঁজে

আপডেট টাইম : ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
শামীম আহমেদ, কবি, লেখক ও সাহিত্যিক :

-শামীম আহমেদ

মেঘরাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অসীম নক্ষত্রের ঝিলমিলের মধ্যে সে যেন হারিয়ে যায়। তার সবসময়ের স্বপ্ন ছিল, একদিন সে নতুন একটি গ্রহের সন্ধান করবে। আজ সেই স্বপ্নের শুরু। পৃথিবী থেকে ৩১ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহ “জেনোসিস-৭” নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব পেয়েছে সে।

২০৯৯ সাল। পৃথিবীর জলবায়ুর অবনতি, প্রাকৃতিক সম্পদের ফুরিয়ে যাওয়া এবং জনসংখ্যার ভারে ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে মানবজাতি। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন গ্রহে মানুষের বসবাসের সম্ভাবনা খুঁজছেন। নাসার মিশন “অ্যাপোলো ইনফিনিটি” এর অধীনে একটি বিশেষ দল পাঠানো হবে, যারা সরাসরি জেনোসিস-৭ এ গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে।

মেঘরাজের টিমের সবাই উজ্জীবিত। ক্যাপ্টেন লিন্ডা, যিনি একসময় যুদ্ধবিমান চালাতেন, এখন এই মহাকাশযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইঞ্জিনিয়ার রাহুল, বিজ্ঞানী মায়া, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট “নোভা” – সবাই তাদের নির্ধারিত কাজের জন্য প্রস্তুত।

 

যানটি স্পেস লঞ্চ প্যাড থেকে ছাড়ার সময় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে উঠতে একটু সময় নেয়। নীরবতা ভেদ করে শুধু ইঞ্জিনের গর্জন শোনা যায়। কৃত্রিম ঘুমের চেম্বারে গিয়ে সবাই একে একে ঢুকে পড়ে, কারণ ৫ বছরের যাত্রা এভাবে কাটানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

অবশেষে, তারা যখন জেনোসিস-৭ এর কক্ষপথে পৌঁছায়, তখন তাদের ঘুম ভাঙানো হয়। নীলাভ গ্রহটি দূর থেকে দেখতে পৃথিবীর মতোই। মায়ার চোখে একধরনের জ্বলজ্বলে উত্তেজনা। “এটা বাস্তব!

এখানে প্রাণ থাকতে পারে!”

তারা গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ শুরু করে। অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, এবং পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ল্যান্ডিং মডিউল ব্যবহার করে তারা গ্রহের পৃষ্ঠে নামে। নেমেই তারা চমকে ওঠে – গ্রহটি সম্পূর্ণ নীরব, কিন্তু তার চারপাশে ছোট ছোট ঝলকানো প্রাণীর উপস্থিতি দেখা যায়।

“এরা কী?” রাহুল প্রশ্ন করে।

“তাদের দেহ আলো শোষণ করে এবং রাতে তা জ্বলে ওঠে,” মায়া বলে। “কিন্তু এখানে কোনো হুমকি আছে কি না, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই নোভা অদ্ভুত সংকেত শনাক্ত করে। “এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব রয়েছে এবং তারা আমাদের উপস্থিতি জানে,” নোভা বলে।

ঠিক তখনই চারপাশে অদ্ভুতভাবে ঝলমলে আলো জ্বলে ওঠে। তাদের সামনে ভেসে ওঠে একটি বড়, গোলাকার বস্তু। সেটি কথা বলতে শুরু করে, কিন্তু কোনো শব্দ হয় না। মায়া তাদের হেলমেটে একটি বার্তা পড়তে পারে – “তোমরা কারা? কেন এসেছ?”

 

মেঘরাজ সামনে এগিয়ে এসে বলে, “আমরা পৃথিবী থেকে এসেছি। আমরা কেবল জানার চেষ্টা করছি, এই গ্রহে প্রাণ ও বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ আছে কি না।”

জবাবে বস্তুটি বলে, “আমরা এই গ্রহের রক্ষক। এখানে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তোমাদের গ্রহ তোমরা রক্ষা করো। আমাদের মতো ভুল করো না।”

মেঘরাজ বিস্মিত হয়ে বলে, “তোমরা কীভাবে ধ্বংস হয়েছ?” রক্ষক একটি ছবি দেখায়। তাদের উন্নত প্রযুক্তি ও লোভ তাদের গ্রহকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

“তোমরা যদি এখান থেকে ফিরে যাও, তাহলে হয়তো নিজের গ্রহকে বাঁচানোর সুযোগ পাবে।” মেঘরাজ ও তার দল পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ফেলে আসা গ্রহটি তাদের মনে এক গভীর বার্তা রেখে যায়।

পৃথিবীতে ফিরে এসে মেঘরাজ সেই বার্তাটি ছড়িয়ে দেয়। মানুষকে শেখানো হয়- প্রযুক্তি ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রাখা কতটা জরুরি।

আর জেনোসিস-৭? এটি আকাশের নক্ষত্রের মাঝে এখনও অমীমাংসিত এক রহস্য হয়ে জ্বলজ্বল করছে…।

লেখকঃ -শামীম আহমেদ
              -কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।


প্রিন্ট