বাংলাদেশকে সোনালী আঁশের দেশ বলা হলেও বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে বিলুপ্তির পথে পাট চাষ। এই জেলায় আগে ব্যাপকভাবে পাট চাষ হতো। কিন্তু কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়ার পরেও এখন জেলায় পাটের আবাদ অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রকৃত চাষিরা প্রণোদনা না পাওয়া, পাটের ফলন কম ও জাগ দেওয়ার ব্যবস্থার অভাব এবং দামের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার তিন ভাগের এক ভাগও এ ফসলটি চাষ হয়নি বলছেন কৃষকরা।
অন্যদিকে পাট অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমান্বয়ে চাষ কমলেও কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে পাট চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে অন্তরায় হিসেবে পাটের ন্যায্য মূল্য ও জাগ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন তারা।
এক সময় পাটের সোনালী দিন থাকলেও বর্তমানে তার চিত্র ভিন্ন। চলতি বছর পাটের মৌসুমে জেলায় দেখা যায়, ভালো মানের বীজ, পরামর্শ ও ক্ষেতের সঠিক পরিচর্যার অভাবে দিন দিন পাটের চাষাবাদ কমেই চলেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালকের তথ্য মতে, পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয়েছিল ১৩ হাজার ১৩৭ টন। কিন্তু ২০২৪ সালে আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে ও পাট উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন। ১৯ সালের তুলনায় এ বছর ৩১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হলেও ফলন অনুযায়ী সে বছরের তুলনায় ২৬৩ টন পাট কম উৎপাদন হয়েছে।
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার তথ্য মতে, জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে শুধু চারটি উপজেলার ১০ হাজার ১৯৩ জন চাষিকে পাট চাষের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রত্যেককে ১ কেজি করে বীজ, ৬ কেজি ইউরিয়া, ৩ কেজি টিএসপি ও ৩ কেজি এমওপি সার ছাড়াও প্রশিক্ষণ বাবদ ৫০০ টাকা সম্মানিসহ, ৩০০ টাকা খাওয়া বিল এবং নাস্তা বাবদ ৮০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়াও খাতা, কলম ও ব্যাগও দেওয়া হয়। অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকেও ৩ হাজার ৬০০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কৃষককে পাট চাষ বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা হিসেবে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ প্রদান বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও এর কোনো উল্লেখযোগ্য সুফল দেখা যায়নি।
অধিকাংশ পাট চাষিরা বলছেন তারা কোনো ধরনের প্রণোদনা পাননি। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানির অভাবে দিন দিন পাট জাগ দেওয়া থেকে শুরু করে, পাটের রোগ বালই ও খরচ বৃদ্ধি, সে তুলনায় ফলন ও দামও কম হয়। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় তিন ভাগের এক ভাগও পাট চাষ হয়নি। গত বছর যারা পাট করেছিলেন, তাদের অনেকে এবার কোনো পাট আবাদ করেননি। যারা করেছেন তারাও খুবই কম করেছেন। তাই এই সোনালী ফসলের চাষ বৃদ্ধি করার জন্য প্রকৃত কৃষকদের সরকারি সহায়তা প্রদানসহ পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তারা। মো. আনিসুর রহমান নামে এক পাট চাষি বলেন, ৫০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
বর্তমান পাটের বাজার দর অনুযায়ী পাট বিক্রি করে আমাদের পাটখড়িগুলো টিকে না। খরচ অনুযায়ী আমরা ন্যায্য দাম পাই না। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার পাটের দাম ও ফলনও কম। এ কারণে গতবার যারা পাট করেছিলেন, তাদের অনেকেই এবার পাট চাষ করেননি। আর আমরা যারা প্রকৃত পাট চাষি আছি, তারা সরকারি সার বীজ থেকে শুরু করে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। আগামীতে কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহী করতে পাটের দাম বৃদ্ধি করে কৃষকদের ন্যায় মূল্য প্রদানের জন্য বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করছি।
প্রিন্ট