ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

‘চোখ থাকলে পাকা ঘরটা কেমন সুন্দর দেখতে পারতাম’

‘চক্ষু নাই। থাকলে পাকা ঘরটা কেমন সুন্দর, তা দেখতাম। অহন কবরে গিয়াও শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু। প্রধানমন্ত্রী আমারে একটা পাকা ঘর দিছে। আমি অন্ধ মানুষ। জমি পাইলাম লগে ঘরও পাইলাম। শেষ বয়সে আমি সবই পাইলাম। আমিন।’ এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করছিলেন অন্ধ ঝালমুড়ি বিক্রেতা আজগর আলী।

৬৮ বছর বয়সী আজগর আলী আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার দাইরাদি গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, আজগর আলী (৬৮) একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। স্বাধীনতার সময় তার দু’টি চোখ অসুখে নষ্ট হয়ে যায়। আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার দাইরাদী গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ আজগর আলীকে সবাই ঝালমুড়ি বিক্রেতা হিসেবেই চিনে। ভিক্ষা না করে ঝালমুড়ি বিক্রি করতো বলে আশপাশের গ্রামের মানুষ তাকে সমীহ করতো।

প্রতিবন্ধি হয়েও জীবনে কারো কাছে হাত পাতেননি। ভিক্ষা না করে কাজ করেছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। দীর্ঘ ৫০ বছর স্ত্রী খুরশিদা বেগমের কাঁধে হাত রেখে হাটে বাজারে ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে অভাবের সংসারের চাকা ঘুরিয়েছেন। রোদ বৃষ্টি ঝড়ঝঞ্জা মাথায় নিয়েই এক সময় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন।

জীবন যুদ্ধে কখনো হার মানেননি অন্ধ আজগর আলী। জীবন সায়াহ্নে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারেন না। এক বছর ধরে বিছানায় ছটফট করে মরেন। মেয়ের কাছে ঠাঁই মিলেছিল। দু’বেলা খেতে পান। মেয়ে রত্না বৃদ্ধ পিতামাতাকে ঠাঁই দিয়েছেন স্বামীর বাড়িতে। অনেক গঞ্জনা সহ্য করে পুরোনো টিন দিয়ে কোনোমতে একটি ছোট একচালা টিনের ঘর বানিয়ে দিয়েছিল। বুড়োবুড়ি কোনোমতে একটি চৌকি পেতে সেখানে রাত কাটাতেন। মেয়ের আশ্রয়েই দিন কাটাতো আজগর আলী।

আজগর আলীর বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের নির্দেশে আড়াইহাজারের ইউএনও বিষয়টি আমলে নিয়ে আজগর আলীকে প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহারের ঘর বরাদ্দ দেয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অন্ধ আজগর আলী খুবই খুশি। তার জীবন সার্থক বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলায় মোট ‘ক’তালিকা ভুক্ত ভূমিহীন পরিবার ছিল ৩৪৮ টি। এর মধ্যে বেশ কিছু পরিবার বসবাসে অনিচ্ছুক থাকায় পুনরায় যাচাই বাছাই অন্তে হালনাগাদকৃত প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় দুস্থ পরিবারের সংখ্যা দাড়ায় ২৯৬। এর মধ্যে ২৪৪ টি পরিবার ইতোমধ্যে ১ম পর্যায়ে ৩১টি, ২য় পর্যায়ে ২৮টি এবং ৩য় ধাপে ১ম পর্যায়ে ৫০টি ও ৩য় ধাপের ৪র্থ পর্যায়ে ১৩৫টি পুনর্বাসিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫২টি পরিবারকে পুনর্বাসনের নিমিত্তে ৪র্থ ধাপের বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং ব্রাহ্মনদী ও রামচন্দ্রদী আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহ নির্মাণ এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলার হাইজাদী, রামচন্দ্রদী, সাদারদিয়া, কামরানির চর, খাসেরকান্দি, ব্রাক্ষন্দী, ঝাউগড়া, শ্রীনিবাসী, চৈতনকান্দা ও সাতগ্রামে এই সকল ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পবিত্র দায়িত্ব এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটির কাজ করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায়, দরিদ্রদের পাশে দাড়িয়ে যে অনুভূতি তৈরী হয় তা অসাধারণ। সংসদ সদস্য আজহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু ও জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আড়াইহাজার উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) পান্না আক্তার বলেন, আড়াইহাজার উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কার্যক্রম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত নীতিমালা যথাযথ ভাবে অনুসরণ পূর্বক বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ভূমিহীন ২৯৬টি পরিবারের মধ্যে ২৪৪টি পরিবারকে আমরা ইতোমধ্যে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এই উপজেলায় বিভিন্ন ধাপে আনুমানিক ২১.৭৮ কোটি টাকা মূল্যের ৯.৯০৫০ একর খাস জমি অবৈধ দখলদার হতে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনরাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আড়াইহাজারবাসী কৃতজ্ঞ।

সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, আশা করছি খুব দ্রুতই আড়াইহাজার উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। ‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

‘চোখ থাকলে পাকা ঘরটা কেমন সুন্দর দেখতে পারতাম’

আপডেট টাইম : ১০:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :

‘চক্ষু নাই। থাকলে পাকা ঘরটা কেমন সুন্দর, তা দেখতাম। অহন কবরে গিয়াও শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু। প্রধানমন্ত্রী আমারে একটা পাকা ঘর দিছে। আমি অন্ধ মানুষ। জমি পাইলাম লগে ঘরও পাইলাম। শেষ বয়সে আমি সবই পাইলাম। আমিন।’ এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করছিলেন অন্ধ ঝালমুড়ি বিক্রেতা আজগর আলী।

৬৮ বছর বয়সী আজগর আলী আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার দাইরাদি গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, আজগর আলী (৬৮) একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। স্বাধীনতার সময় তার দু’টি চোখ অসুখে নষ্ট হয়ে যায়। আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার দাইরাদী গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ আজগর আলীকে সবাই ঝালমুড়ি বিক্রেতা হিসেবেই চিনে। ভিক্ষা না করে ঝালমুড়ি বিক্রি করতো বলে আশপাশের গ্রামের মানুষ তাকে সমীহ করতো।

প্রতিবন্ধি হয়েও জীবনে কারো কাছে হাত পাতেননি। ভিক্ষা না করে কাজ করেছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। দীর্ঘ ৫০ বছর স্ত্রী খুরশিদা বেগমের কাঁধে হাত রেখে হাটে বাজারে ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে অভাবের সংসারের চাকা ঘুরিয়েছেন। রোদ বৃষ্টি ঝড়ঝঞ্জা মাথায় নিয়েই এক সময় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন।

জীবন যুদ্ধে কখনো হার মানেননি অন্ধ আজগর আলী। জীবন সায়াহ্নে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারেন না। এক বছর ধরে বিছানায় ছটফট করে মরেন। মেয়ের কাছে ঠাঁই মিলেছিল। দু’বেলা খেতে পান। মেয়ে রত্না বৃদ্ধ পিতামাতাকে ঠাঁই দিয়েছেন স্বামীর বাড়িতে। অনেক গঞ্জনা সহ্য করে পুরোনো টিন দিয়ে কোনোমতে একটি ছোট একচালা টিনের ঘর বানিয়ে দিয়েছিল। বুড়োবুড়ি কোনোমতে একটি চৌকি পেতে সেখানে রাত কাটাতেন। মেয়ের আশ্রয়েই দিন কাটাতো আজগর আলী।

আজগর আলীর বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের নির্দেশে আড়াইহাজারের ইউএনও বিষয়টি আমলে নিয়ে আজগর আলীকে প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহারের ঘর বরাদ্দ দেয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অন্ধ আজগর আলী খুবই খুশি। তার জীবন সার্থক বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলায় মোট ‘ক’তালিকা ভুক্ত ভূমিহীন পরিবার ছিল ৩৪৮ টি। এর মধ্যে বেশ কিছু পরিবার বসবাসে অনিচ্ছুক থাকায় পুনরায় যাচাই বাছাই অন্তে হালনাগাদকৃত প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় দুস্থ পরিবারের সংখ্যা দাড়ায় ২৯৬। এর মধ্যে ২৪৪ টি পরিবার ইতোমধ্যে ১ম পর্যায়ে ৩১টি, ২য় পর্যায়ে ২৮টি এবং ৩য় ধাপে ১ম পর্যায়ে ৫০টি ও ৩য় ধাপের ৪র্থ পর্যায়ে ১৩৫টি পুনর্বাসিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫২টি পরিবারকে পুনর্বাসনের নিমিত্তে ৪র্থ ধাপের বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং ব্রাহ্মনদী ও রামচন্দ্রদী আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহ নির্মাণ এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলার হাইজাদী, রামচন্দ্রদী, সাদারদিয়া, কামরানির চর, খাসেরকান্দি, ব্রাক্ষন্দী, ঝাউগড়া, শ্রীনিবাসী, চৈতনকান্দা ও সাতগ্রামে এই সকল ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পবিত্র দায়িত্ব এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটির কাজ করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায়, দরিদ্রদের পাশে দাড়িয়ে যে অনুভূতি তৈরী হয় তা অসাধারণ। সংসদ সদস্য আজহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু ও জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আড়াইহাজার উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) পান্না আক্তার বলেন, আড়াইহাজার উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কার্যক্রম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত নীতিমালা যথাযথ ভাবে অনুসরণ পূর্বক বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ভূমিহীন ২৯৬টি পরিবারের মধ্যে ২৪৪টি পরিবারকে আমরা ইতোমধ্যে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এই উপজেলায় বিভিন্ন ধাপে আনুমানিক ২১.৭৮ কোটি টাকা মূল্যের ৯.৯০৫০ একর খাস জমি অবৈধ দখলদার হতে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনরাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আড়াইহাজারবাসী কৃতজ্ঞ।

সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, আশা করছি খুব দ্রুতই আড়াইহাজার উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। ‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি।


প্রিন্ট