জসীমউদ্দীন ইতিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও শর্ত উপেক্ষা করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এমন প্রশ্ন তুললে ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম বললেন, “ডিসি কি জানে না বালু কি দিয়ে তুলে! বালি কি হাত দিয়ে তুলবো!” আমি ড্রেজারের অনুমতি নিয়েই বালু তুলছি।
যেখানে জেলা প্রশাসক বলছেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেখানে প্রায় ৫ মাস থেকে ড্রেজার দিয়েই চলছে বালু তোলার মহাৎসব।
পীরগঞ্জ উপজেলার কোষা মৌজায় এ চিত্র চোখে পড়ে। সরকারি বিধি অনুযায়ী কোষা বালু মহালটির ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে—৭৪৬ ও ৭৪৯ নং দাগ থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। অথচ প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই ব্রীজের পাশের ৭৪১ নং দাগে ড্রেজার ও স্ক্যাভেটার বসিয়ে লাখ লাখ টাকার অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ইজারাদারের যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা।
নদীর ধার কেটে বালু তোলায় নষ্ট হচ্ছে নদীর নাব্যতা, ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষকদের আবাদি জমি। পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজটিও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
এমন অভিযোগ তুলে ব্রীজটি রক্ষার দাবিতে পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ২ নং কোষারাণীগঞ্জ ও ৫ নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
জানা যায়, ১ বছর মেয়াদে ১০.৮১ একর জমির বালু উত্তোলনের জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক নওগাঁ জেলার শিমলা এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলামকে ইজারা প্রদান করেন। কিন্তু বালু ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে নির্দিষ্ট চৌহদ্দি নির্ণয় না করেই নিজের ইচ্ছেমতো বালু তুলছেন। ইজারাদারের পাশাপাশি কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনও নদীর দুই ধারে মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছে। প্রশ্ন করলে তারা দাবি করছেন—“এটা আমাদের জমি, আমরা বালু কাটছি—সমস্যা কোথায়?”
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় মোশারফ, সাইফুল, দুলাল, সালাউদ্দিন, আলাউদ্দিন, বাবুল, মকবুল মেম্বার, হান্নান সহ কয়েকজন মিলে এ কাজ করছে। নির্ধারিত ৭৪৬ ও ৭৪৯ নং দাগ ব্রীজ থেকে অনেক দূরে হওয়া সত্ত্বেও সেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে না। বরং ব্রীজের ঠিক পাশেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে, যা ব্রীজের জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে একদিকে নদীর পাড়ের সোনালি ফসলি জমি ধসে যাচ্ছে, অন্যদিকে এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটিও ঝুঁকিতে পড়েছে।
তাদের দাবি, “বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান থেকে বৈধভাবে বালু তুললে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ব্রীজ ও জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে যে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সঠিক জায়গায় বালু উত্তোলন করছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার এম এস সিমলা এন্টারপ্রাইজের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ কাজটিতে আমি প্রতিদিন লস খাচ্ছি। যে জায়গায় বালু উত্তোলন করার কথা সে জায়গা থেকেই বালু তোলা হচ্ছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন নিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক কি জানেনা বালু কি দিয়ে তুলে? বালু কি হাত দিয়ে তুলবো। অনুমতি নিয়েই ড্রেজার মেশিন বসিয়েছি।
অন্যদিকে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তি মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি এটার সাথে সেইভাবে সম্পৃক্ত না তবে ড্রেজার মেশিনটি আমার এবং যে জায়গায় বালু রাখে সেটাও আমার।
এ বিষয়ে কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা কামিনী রায় বলেন, “আমি কিছু জানি না, আপনারা বারবার আমার কাছে আসতেছেন কেন? আপনারা এসি ল্যান্ডের কাছে যান। ডিসি স্যার মিডিয়ার সামনে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
একই বক্তব্য দেন পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার এন এম ইশফাকুল কবীর। তিনি বলেন, “ভিডিও বক্তব্য দিতে পারব না, জেলা থেকে সীমাবদ্ধতা আছে। তবে মৌখিকভাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরো অভিযোগ পেয়েছি, অন্য জায়গায় বালু উত্তোলন করে থাকলে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে এসি ল্যান্ডের মাধ্যমে ঘটনাস্থল থেকে ড্রেজার মেশিন জব্দ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট চৌহদ্দি ছাড়া অন্য জায়গায় বালু তোলার সুযোগ নেই।
প্রিন্ট

বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা 
জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি 



















