ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সাড়ে তিনশ কোটি টাকা খেলাপির দায়ে বোয়ালমারীর গোল্ডেন জুট মিল নিলামে

এস.এম রবিউল ইসলাম রুবেল, স্টাফ রিপোর্টার

সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ঋন খেলাপির দায়ে নিলামে উঠেছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গোল্ডেন জুট মিল। জাতীয় পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডার আহবান করে জনতা ব্যাংক ভবনের কর্পোরেট শাখা। শুক্রবার (১৫.১১.২৪) বিকেল তিনটায় কর্পোরেট শাখায় টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ সময়। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকের টাকা লুটপাট করার পর মিলটিকে দেউলিয়া করা হয়। নিলাম বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় খেলাপি ঋনের পরিমান তিনশ ৫৫ কোটি ৬ লক্ষ ২ হাজার ৯৬৮ টাকা।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কলারন এলাকায় ২০১০ সালে প্রায় ১৬ একর জমির উপর “এম এইচ গোল্ডেন জুট মিল” প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে মিলটি উৎপাদনে যায়। তৎকালিন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতের শ্বশুর বাড়ির লোকজন মিলটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও মিলটির মালিকানা ঢাকার টঙ্গীতে অবস্থিত অ্যানোনটেক্স গ্রুপের। অ্যানোনটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদলের নামে জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখা ঢাকা থেকে তিনশ কোটি টাকা ঋন মঞ্জুর করা হয়।

 

ইউনুস বাদল ড. আবুল বারাকাতের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইউনুস বাদল, তার ভাই ইউসুফ বাদল জার্মানিতে পালিয়ে গেছেন। অ্যানোনটেক্স গ্রুপের মাধ্যমে গোল্ডেন জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হলেও মিলটি পরিচালনা করতেন ড. আবুল বারাকাতের আত্মীয়-স্বজনরা। ড. আবুল বারাকাত বোয়ালমারী উপজেলার ছোলনা গ্রামের মোকাদ্দেছ হোসাইনের মেয়ে শাহিদা পারভিনকে বিয়ে করেন। শাহিদা পারভিনের বড় ভাই মো. মিজানুর রহমান গোল্ডেন জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিজানুর রহমানের বড় ছেলে মহসিন হোসেন পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে গোল্ডেন জুট মিলের পাশে বোনানজা জুট মিল স্থাপন করে সেটি পরিচালনা করছেন তারা। আর গোল্ডেন জুট মিল প্রায় পরিত্যাক্ত।

 

অভিযোগ উঠেছে, গোল্ডেন জুট মিলের সব যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে বোনানজা জুট মিলে সেট করা হয়েছে। গোল্ডেন জুট মিলের নামে গৃহিত ঋনের কোন কিস্তি এবং সুদ পরিশোধ না করায় মিলটি খেলাপি হয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোল্ডন জুট মিলের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, লুটপাট করার উদ্দেশ্যেই মিলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মিলের সকল যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে নতুন মিলটি করা হয়েছে। গোল্ডেন জুট মিলের নামে তিনশ কোটি টাকা ঋন নেওয়া হয়। সুদে আসলে যা সাড়ে তিনশ কোটি ছাড়িয়ে যায়। মিলটি লাভে থাকলেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

 

এদিকে গোল্ডেন জুট মিলের ঋন সম্পর্কে কোন তথ্য নেই জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখায়। এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক প্রিন্সিপাল অফিসার নীলাদ্রি ঘোষ বলেন, গোল্ডেন জুট মিলটির নামে ঋন মঞ্জুর করা হয় ঢাকার জনতা ব্যাংক ভবনের কপোর্রেট শাখা থেকে। এ কার্যক্রমের কোন কিছুই আমরা জানিনা। এখানে এ সম্পর্কে কোন তথ্যও নেই।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য গোল্ডেন জুট মিলে গিয়ে জানা যায়, এখন সবাই পাশে প্রতিষ্ঠিত বোনানজা জুট মিলে বসেন।

 

সেখানে গিয়ে কথা হয় মিলের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মো. মিজানুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, গোল্ডেন জুট মিলে আমরা সবাই চাকরি করতাম। মিলটি খেলাপি হয়ে যাওয়ায় আমরা সেটি ছেড়ে দিয়েছি। এ সময় নির্বাহী পরিচালকের সাথে থাকা প্রশাসন বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল মান্নান জানান, গোল্ডেন জুট মিল অ্যানোনটেক্স গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। অ্যানোনটেক্স গ্রুপের নামে ঋন নেওয়া হয়। নরসিংদির ইউনুস বাদল, ইউসুফ বাদল অ্যানোনটেক্স গ্রুপের মালিক। তারা ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করায় গোল্ডেন জুট মিল ঋনখেলাপি হয়। তিনি আরও বলেন, জুট মিল প্রতিনিয়ত লস দিয়ে যাচ্ছে। কোন মিলই বর্তমানে লাভে নেই বলে তিনি জোর দাবি জানান। লস হওয়ার কারণেই হয়তো ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।

 

আরও পড়ুনঃ জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না

 

গোল্ডেন জুট মিলের যন্ত্রপাতি খুলে বোনানজা মিলে লাগানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটা আমাদের সম্পদ। এটা নিয়ে স্থানীয় লোকজন বা সাংবাদিকদের ভাবার দরকার নেই। এটি কোন সরকারি সম্পদ নয়।
কথা বলার জন্য মিলে পাওয়া যায়নি বোনানজা জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মহসিন হোসেনকে। তাঁর মোবাইলে (০১৭৫৬-২৩৯৮২২) একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোরের গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন

error: Content is protected !!

সাড়ে তিনশ কোটি টাকা খেলাপির দায়ে বোয়ালমারীর গোল্ডেন জুট মিল নিলামে

আপডেট টাইম : ৮ ঘন্টা আগে
এস.এম রবিউল ইসলাম রুবেল, স্টাফ রিপোর্টার :

এস.এম রবিউল ইসলাম রুবেল, স্টাফ রিপোর্টার

সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ঋন খেলাপির দায়ে নিলামে উঠেছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গোল্ডেন জুট মিল। জাতীয় পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডার আহবান করে জনতা ব্যাংক ভবনের কর্পোরেট শাখা। শুক্রবার (১৫.১১.২৪) বিকেল তিনটায় কর্পোরেট শাখায় টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ সময়। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকের টাকা লুটপাট করার পর মিলটিকে দেউলিয়া করা হয়। নিলাম বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় খেলাপি ঋনের পরিমান তিনশ ৫৫ কোটি ৬ লক্ষ ২ হাজার ৯৬৮ টাকা।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কলারন এলাকায় ২০১০ সালে প্রায় ১৬ একর জমির উপর “এম এইচ গোল্ডেন জুট মিল” প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে মিলটি উৎপাদনে যায়। তৎকালিন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতের শ্বশুর বাড়ির লোকজন মিলটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও মিলটির মালিকানা ঢাকার টঙ্গীতে অবস্থিত অ্যানোনটেক্স গ্রুপের। অ্যানোনটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদলের নামে জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখা ঢাকা থেকে তিনশ কোটি টাকা ঋন মঞ্জুর করা হয়।

 

ইউনুস বাদল ড. আবুল বারাকাতের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইউনুস বাদল, তার ভাই ইউসুফ বাদল জার্মানিতে পালিয়ে গেছেন। অ্যানোনটেক্স গ্রুপের মাধ্যমে গোল্ডেন জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হলেও মিলটি পরিচালনা করতেন ড. আবুল বারাকাতের আত্মীয়-স্বজনরা। ড. আবুল বারাকাত বোয়ালমারী উপজেলার ছোলনা গ্রামের মোকাদ্দেছ হোসাইনের মেয়ে শাহিদা পারভিনকে বিয়ে করেন। শাহিদা পারভিনের বড় ভাই মো. মিজানুর রহমান গোল্ডেন জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিজানুর রহমানের বড় ছেলে মহসিন হোসেন পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে গোল্ডেন জুট মিলের পাশে বোনানজা জুট মিল স্থাপন করে সেটি পরিচালনা করছেন তারা। আর গোল্ডেন জুট মিল প্রায় পরিত্যাক্ত।

 

অভিযোগ উঠেছে, গোল্ডেন জুট মিলের সব যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে বোনানজা জুট মিলে সেট করা হয়েছে। গোল্ডেন জুট মিলের নামে গৃহিত ঋনের কোন কিস্তি এবং সুদ পরিশোধ না করায় মিলটি খেলাপি হয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোল্ডন জুট মিলের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, লুটপাট করার উদ্দেশ্যেই মিলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মিলের সকল যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে নতুন মিলটি করা হয়েছে। গোল্ডেন জুট মিলের নামে তিনশ কোটি টাকা ঋন নেওয়া হয়। সুদে আসলে যা সাড়ে তিনশ কোটি ছাড়িয়ে যায়। মিলটি লাভে থাকলেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

 

এদিকে গোল্ডেন জুট মিলের ঋন সম্পর্কে কোন তথ্য নেই জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখায়। এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক প্রিন্সিপাল অফিসার নীলাদ্রি ঘোষ বলেন, গোল্ডেন জুট মিলটির নামে ঋন মঞ্জুর করা হয় ঢাকার জনতা ব্যাংক ভবনের কপোর্রেট শাখা থেকে। এ কার্যক্রমের কোন কিছুই আমরা জানিনা। এখানে এ সম্পর্কে কোন তথ্যও নেই।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য গোল্ডেন জুট মিলে গিয়ে জানা যায়, এখন সবাই পাশে প্রতিষ্ঠিত বোনানজা জুট মিলে বসেন।

 

সেখানে গিয়ে কথা হয় মিলের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মো. মিজানুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, গোল্ডেন জুট মিলে আমরা সবাই চাকরি করতাম। মিলটি খেলাপি হয়ে যাওয়ায় আমরা সেটি ছেড়ে দিয়েছি। এ সময় নির্বাহী পরিচালকের সাথে থাকা প্রশাসন বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল মান্নান জানান, গোল্ডেন জুট মিল অ্যানোনটেক্স গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। অ্যানোনটেক্স গ্রুপের নামে ঋন নেওয়া হয়। নরসিংদির ইউনুস বাদল, ইউসুফ বাদল অ্যানোনটেক্স গ্রুপের মালিক। তারা ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করায় গোল্ডেন জুট মিল ঋনখেলাপি হয়। তিনি আরও বলেন, জুট মিল প্রতিনিয়ত লস দিয়ে যাচ্ছে। কোন মিলই বর্তমানে লাভে নেই বলে তিনি জোর দাবি জানান। লস হওয়ার কারণেই হয়তো ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।

 

আরও পড়ুনঃ জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না

 

গোল্ডেন জুট মিলের যন্ত্রপাতি খুলে বোনানজা মিলে লাগানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটা আমাদের সম্পদ। এটা নিয়ে স্থানীয় লোকজন বা সাংবাদিকদের ভাবার দরকার নেই। এটি কোন সরকারি সম্পদ নয়।
কথা বলার জন্য মিলে পাওয়া যায়নি বোনানজা জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মহসিন হোসেনকে। তাঁর মোবাইলে (০১৭৫৬-২৩৯৮২২) একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


প্রিন্ট