কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪৭টি বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন বসানো হয়েছে। মেয়রের চাপে কেনা মেশিনগুলোর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। স্থাপনের পর একদিনও ব্যবহার না হওয়ায় ধুলোবালি জমে সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু মেশিন নষ্টও হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে ছেলে অর্ণব কিবরিয়া প্রতীকের কাছ থেকে রিয়েল টাইম ব্র্যান্ডের আর এস ২০বি মডেলের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপনের নির্দেশ দেন কুমারখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ। প্রতিটি মেশিনের বাজারমূল্য ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হলেও মেয়রপুত্র নামসর্বস্ব প্যাসিফিক এন্টারপ্রাইজ ও টারডো কম্পিউটার নামক প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে মেশিন প্রতি বিল তোলেন ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা করে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্লিপের টাকায় বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে বাজার যাচাই করে সাশ্রয়ী মূল্যে মেশিন কিনে স্থাপন করবেন। এর কোনো ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সেই নির্দেশনা না মেনে জোরপূর্বক নিজেদের লোকজন দিয়েই স্কুলগুলোতে রিয়েল টাইম ব্র্যান্ডের আর এস ২০বি মডেলের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করান। তারা ঢাকার তেঁজগাও পান্থপথ এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে প্যাসিফিক এন্টারপ্রাইজ ও কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকার টারডো কম্পিউটার নামে প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ভাউচার ব্যবহার করে ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা করে বিল তুলেছেন।
কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা, জগন্নাথপুর, সদকী, পান্টি, নন্দলালপুর ও চাপড়া ইউনিয়নের প্রায় ৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষকদের কার্যালয়ে দরজার পাশের দেয়ালে কালো রঙের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করা আছে। তাতে ধুলোবালি জমে মাকড়সা বাসা বেঁধেছে। আর সার্ভার মেশিনটি রাখা হয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে। তার ওপরে রাখা রয়েছে কাগজপত্রাদির স্তূপ।
প্যাসিফিক এন্টারপ্রাইজ ভাউচারে থাকা নম্বরে ফোন করা হলে রিসিভ করেন মেয়রপুত্র প্রতীক। তিনি বলেন, রং নম্বর। প্যাসিফিক এন্টারপ্রাইজ বলে কিছু নেই। এরপরেই ফোনটি কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার তাকে কল দিলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪৭টি বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, স্লিপের টাকা প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার যাচাই করে খরচ করার কথা। কিন্তু সে সময় কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছিল। মূলত শিক্ষক-কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রেশারে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের কাছে মেশিনগুলো কেনেন। যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ পাননি তারা। এতে কিছুটা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।
- আরও পড়ুনঃ শ্রীরামসি গণহত্যা দিবস পালিত
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ। তার ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
প্রিন্ট