ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মানে খুশি রোগীরা

প্রসববেদনা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থা কমপ্লেক্সে ভর্তি হন, বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর গ্রামের মুক্তি খাতুন। রোববার (২৩-৭-২০২৩) নার্সদের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। লালপুরের জেসমিন খাতুন সন্তান প্রসব করেন স্বাভাবিকভাবেই । তবে চিকিৎসক-নার্সরা স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ঢাকা চন্দ্রগাথির আফসানা ও বাঘার সানজিদা খাতুনের । পরে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করান চিকিৎসকরা।

আফসানা খাতুন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারিভাবে অপারেশন চালু হওয়ায় বিনা টাকায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলেন। তার ভাষ্য মতে, বেসরকারি ক্লিনিকে সিজার করাতে সব মিলে ব্যয় হতো প্রায় ১০ হাজার টাকা।

 

মুক্তি খাতুন বলেন, বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে নিয়মিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের দেখিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া ওষুধ খেয়েছেন নিয়মিত। প্রসব ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি হয়ে স্বাভাকিভাবে সন্তান প্রসব করাতে পেরেছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা খোঁজখবর নিচ্ছেন, পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনজেকশন দিচ্ছেন। তিনি বলেন,চিকিৎসা ও সেবার মান এখানে যথেষ্ট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলট্রাসনোগ্রাম করে টাকা নিয়েছে ২২০ টাকা।

জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কার্যক্রম শুরু হওয়ার ২৯ বছর পর প্রথম ওটি চালু হয় গত বছরের ২৬ অক্টোবর। এর পর থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শতাধিক ডেলিভারি করানো হয়েছে সিজারের মাধ্যমে। মাসে ৩০-৪০ জনের স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এছাড়াও মাইনর অপারেশন হচ্ছে এখানেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবে উৎসাহিত করা হয়। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে সিজার করা হয়।

 

 

ডেলিভারি সহ গড়ে প্রতিদিন ৬০০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর মধ্যে শিশু-১৫০ জন,মহিলা-৩০০জন ও পুরুষ-১৫০জন। এসব রুগিদের রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ২৪ ঘণ্টা ইসিজি, জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষা নির্ণয়, চোখ ও দাঁতের চিকিৎসাসহ আধুনিক ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসসিডিসি এর উদ্যোগে বহুমুত্র (ডায়াবেটিস), উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটিনশন) রুগিদের চিকিৎসাসহ বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। রোগী পরিবহণে ১টি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার, আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ বিভিন্ন পরীক্ষা চালু হওয়ায় সন্ত ষ্ট রুগিরা ও এলাকার জনগণ।

সরকারি হাসপাতালে এক্সরে করাতে একজন রুগির খরচ হয় ৫৫ থেকে ৭০ টাকা (সাদা-কাালো)। বাইরে লাগে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা (সাদা-কাালো)। আর ডিজিটাল এক্সরে (রঙিন) করাতে লাগে ৪০০ থেকে ১০০০( এক ) হাজার টাকা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ মাসেই চালু হচ্ছে ডিজিটাল এক্স-রে।

সরেজমিন রোববার (২৩-৭-২০২৩) সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আন্তঃ বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ডেঙু আক্রান্ত দুই রুগি। মতলেব নামের একজন বলেন, এখানে আসার পর তেমন কোন ওষুধ তাকে বাইরে থেকে কিনতে হয়নি। সময়মতো নার্সরা ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান,আগে জানতেন সরকারি হাসপাতালে সেবা নেই। এখানে এসে দেখেন তার উল্টো। আওয়াল নামের একজন জানান, এমন পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভালো সেবা পেলে মানুষ কখনো প্রাইভেট হাসপাতালে যাবে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবকাঠামো উন্নয়নে যেমন এগিয়ে তেমনি নিরাপত্তা ও আধুনিকতায় এগিয়ে রয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনে ফুলের বাগান ও বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোকিত হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে নিরাপত্তা। অপেক্ষমাণ রোগী ও স্বজনদের বসার জন্য রয়েছে আধুনিক আসন।

উপজেলার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে বদলে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যবর্ধন সার্বিক কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে অনন্য সফলতা বলে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয়রা।

মোমিন হোসেন নামে একজন জানান, এই স্বাস্থ্য কম্পলেক্সের দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। উন্নয়নসহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়া অফিস সময়ের অতিরিক্ত সময়েও তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে।

সাব্বির নামের আরেকজন বলেন, কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও রুগিরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন।

একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নানা সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুন বলেন, তারা রোগীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তাদের সেবায় রোগীরা খুশি হলেই ভালো লাগে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোভিট-১৯ এর ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পে প্রথম ও ২য় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে ৭০ শতাংশ। ৩য় ও চতুর্থ ডোজে টিকা দেওয়া হযেছে ৫০ শতাংশ। মাধ্যমিকের সকল ও প্রাথমিক স্কুল শাখার (৫-১১) বছরের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি সূষ্ঠভাবে সম্পর্ণ করা হয়েছে।

 

 

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ২০০৮ সালে। ১১ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মুঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৭জন। মিডওয়াফারি ৪জন সহ বর্তমানে কর্মরত নার্স রয়েছে ১৮ জন। চর্ম ও যৌন, মেডিসিন এবং অর্থোপেডিক জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আশাদুজ্জামান বলেন, গত এক বছর আগে এখানে যোগদানের পর নিজের অর্থায়নে আইপিএস ব্যবস্থা করেছি। অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছে। কেবিনে এসি দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হয় নার্সদের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।

প্রধান ফলোক থেকে শুরু করে বর্জ ব্যবস্থাপনা নির্মাণ ও গণসৌচাগার স্থাপনা, জনসচেতনার জন্য এলসিডি মনিটর স্থাপনা, মা ও শিশুদের জন্য এ এন সি কর্নার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে আউটডোরে চিকিৎসা প্রদান, আবাসিক এলাকা পরিষ্কার রাখা সহ সকল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ স্থানীয় সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবার মান বৃদ্ধিসহ হাসপাতালের উন্নয়ন এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। আধুনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপান্তর সহ চেষ্টা করছি প্রাইভেট হাসপাতালমুখী রোগীদের ফিরিয়ে আনতে।

ডা. আশাদুজ্জামান আরও বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (সংসদ সদস্য, বাঘা-চারঘাট), শাহরিয়ার আলমের অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনায় পুরো কার্যক্রমটি হয়েছে আরও বেগবান। সার্বিক দিক-নির্দেশনায় নেপথ্যে রয়েছেন সুযোগ্য সিভিল সার্জন ডাঃ আবু সাঈদ মোঃ ফারুক।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে আদানিকে সমন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

error: Content is protected !!

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মানে খুশি রোগীরা

আপডেট টাইম : ০৮:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩
আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

প্রসববেদনা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থা কমপ্লেক্সে ভর্তি হন, বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর গ্রামের মুক্তি খাতুন। রোববার (২৩-৭-২০২৩) নার্সদের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। লালপুরের জেসমিন খাতুন সন্তান প্রসব করেন স্বাভাবিকভাবেই । তবে চিকিৎসক-নার্সরা স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ঢাকা চন্দ্রগাথির আফসানা ও বাঘার সানজিদা খাতুনের । পরে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করান চিকিৎসকরা।

আফসানা খাতুন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারিভাবে অপারেশন চালু হওয়ায় বিনা টাকায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলেন। তার ভাষ্য মতে, বেসরকারি ক্লিনিকে সিজার করাতে সব মিলে ব্যয় হতো প্রায় ১০ হাজার টাকা।

 

মুক্তি খাতুন বলেন, বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে নিয়মিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের দেখিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া ওষুধ খেয়েছেন নিয়মিত। প্রসব ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি হয়ে স্বাভাকিভাবে সন্তান প্রসব করাতে পেরেছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা খোঁজখবর নিচ্ছেন, পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনজেকশন দিচ্ছেন। তিনি বলেন,চিকিৎসা ও সেবার মান এখানে যথেষ্ট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলট্রাসনোগ্রাম করে টাকা নিয়েছে ২২০ টাকা।

জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কার্যক্রম শুরু হওয়ার ২৯ বছর পর প্রথম ওটি চালু হয় গত বছরের ২৬ অক্টোবর। এর পর থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শতাধিক ডেলিভারি করানো হয়েছে সিজারের মাধ্যমে। মাসে ৩০-৪০ জনের স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এছাড়াও মাইনর অপারেশন হচ্ছে এখানেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবে উৎসাহিত করা হয়। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে সিজার করা হয়।

 

 

ডেলিভারি সহ গড়ে প্রতিদিন ৬০০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর মধ্যে শিশু-১৫০ জন,মহিলা-৩০০জন ও পুরুষ-১৫০জন। এসব রুগিদের রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ২৪ ঘণ্টা ইসিজি, জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষা নির্ণয়, চোখ ও দাঁতের চিকিৎসাসহ আধুনিক ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসসিডিসি এর উদ্যোগে বহুমুত্র (ডায়াবেটিস), উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটিনশন) রুগিদের চিকিৎসাসহ বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। রোগী পরিবহণে ১টি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার, আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ বিভিন্ন পরীক্ষা চালু হওয়ায় সন্ত ষ্ট রুগিরা ও এলাকার জনগণ।

সরকারি হাসপাতালে এক্সরে করাতে একজন রুগির খরচ হয় ৫৫ থেকে ৭০ টাকা (সাদা-কাালো)। বাইরে লাগে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা (সাদা-কাালো)। আর ডিজিটাল এক্সরে (রঙিন) করাতে লাগে ৪০০ থেকে ১০০০( এক ) হাজার টাকা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ মাসেই চালু হচ্ছে ডিজিটাল এক্স-রে।

সরেজমিন রোববার (২৩-৭-২০২৩) সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আন্তঃ বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ডেঙু আক্রান্ত দুই রুগি। মতলেব নামের একজন বলেন, এখানে আসার পর তেমন কোন ওষুধ তাকে বাইরে থেকে কিনতে হয়নি। সময়মতো নার্সরা ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান,আগে জানতেন সরকারি হাসপাতালে সেবা নেই। এখানে এসে দেখেন তার উল্টো। আওয়াল নামের একজন জানান, এমন পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভালো সেবা পেলে মানুষ কখনো প্রাইভেট হাসপাতালে যাবে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবকাঠামো উন্নয়নে যেমন এগিয়ে তেমনি নিরাপত্তা ও আধুনিকতায় এগিয়ে রয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনে ফুলের বাগান ও বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোকিত হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে নিরাপত্তা। অপেক্ষমাণ রোগী ও স্বজনদের বসার জন্য রয়েছে আধুনিক আসন।

উপজেলার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে বদলে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যবর্ধন সার্বিক কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে অনন্য সফলতা বলে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয়রা।

মোমিন হোসেন নামে একজন জানান, এই স্বাস্থ্য কম্পলেক্সের দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। উন্নয়নসহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়া অফিস সময়ের অতিরিক্ত সময়েও তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে।

সাব্বির নামের আরেকজন বলেন, কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও রুগিরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন।

একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নানা সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুন বলেন, তারা রোগীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তাদের সেবায় রোগীরা খুশি হলেই ভালো লাগে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোভিট-১৯ এর ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পে প্রথম ও ২য় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে ৭০ শতাংশ। ৩য় ও চতুর্থ ডোজে টিকা দেওয়া হযেছে ৫০ শতাংশ। মাধ্যমিকের সকল ও প্রাথমিক স্কুল শাখার (৫-১১) বছরের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি সূষ্ঠভাবে সম্পর্ণ করা হয়েছে।

 

 

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ২০০৮ সালে। ১১ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মুঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৭জন। মিডওয়াফারি ৪জন সহ বর্তমানে কর্মরত নার্স রয়েছে ১৮ জন। চর্ম ও যৌন, মেডিসিন এবং অর্থোপেডিক জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আশাদুজ্জামান বলেন, গত এক বছর আগে এখানে যোগদানের পর নিজের অর্থায়নে আইপিএস ব্যবস্থা করেছি। অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছে। কেবিনে এসি দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হয় নার্সদের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।

প্রধান ফলোক থেকে শুরু করে বর্জ ব্যবস্থাপনা নির্মাণ ও গণসৌচাগার স্থাপনা, জনসচেতনার জন্য এলসিডি মনিটর স্থাপনা, মা ও শিশুদের জন্য এ এন সি কর্নার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে আউটডোরে চিকিৎসা প্রদান, আবাসিক এলাকা পরিষ্কার রাখা সহ সকল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ স্থানীয় সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবার মান বৃদ্ধিসহ হাসপাতালের উন্নয়ন এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। আধুনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপান্তর সহ চেষ্টা করছি প্রাইভেট হাসপাতালমুখী রোগীদের ফিরিয়ে আনতে।

ডা. আশাদুজ্জামান আরও বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (সংসদ সদস্য, বাঘা-চারঘাট), শাহরিয়ার আলমের অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনায় পুরো কার্যক্রমটি হয়েছে আরও বেগবান। সার্বিক দিক-নির্দেশনায় নেপথ্যে রয়েছেন সুযোগ্য সিভিল সার্জন ডাঃ আবু সাঈদ মোঃ ফারুক।


প্রিন্ট