মাগুরায় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট সহিংসতার একটি মামলার রায়ে আসামিকে বই পড়া, সিনেমা দেখা, গাছ লাগানোর ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছে মাগুরার মূখ্য বিচারিক আদালতের হাকিম। মঙ্গলবার (০৩.০৩.২০২০) বিকালে আদালতের হাকিম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এ রায় দেন।
ব্যতিক্রমী ওই রায় প্রাপ্ত ইব্রাহিমের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে। তিনি এ গ্রামের মৃত হান্নান মোল্লার ছেলে।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আমীর আলী জানান, ২০১৭ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর একটি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে মোছাম্মৎ সায়লা আক্তার নামে এক নারী আহত হন। এ ঘটনায় সায়লার ছেলে মোহাম্মদ রকি মহম্মদপুর থানায় একই গ্রামের ইব্রাহিম, কামাল, চায়না বেগমকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে চায়না বেগম নির্দোষ প্রমাণিত হয়। মামলার তদন্তকালে অপর আসামি একই কারণে কামাল হোসেন চার্জশিট থেকে অব্যহতি পান।
অন্যদিকে, ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ইব্রাহিমকে দণ্ডবিধির ৩২৪ ধারার পরিবর্তে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ১ বছর সময়কালের জন্য ৭টি শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ হাকিম জিয়াউর রহমান।
৭টি শর্ত হলো, প্রবেশনকালীন সময় দোষী সাব্যস্ত আসামি কোনরূপ অপরাধের সাথে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ আর করবেন না, শান্তি বজায় রাখবেন এবং ভাল ব্যবহার করবেন, আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন, কোনোরূপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না, কোনো খারাপ সঙ্গীর সাথে মেলামেশা করবেন না, প্রবেশনকালীন সময়ে আসামি মুক্তিযুদ্ধের উপর ২টি বই জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা “একাত্তরের চিঠি”সহ ইসলাম ও নৈতিকতার ওপর আরো ২টি বই পড়বেন এবং ‘আগুনের পরশমনি’ সিনেমা দেখবেন, প্রবেশনকালিন সময় আসামি পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসাবে ২টি বনজ ও ৩টি ফলজসহ ৫টি গাছ লাগাবেন।
আসামি ইব্রাহিম প্রবেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বা তার আচরণ সন্তোষজনক না হলে তার প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং অপরাধের জন্য নির্ধারিত ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করবেন। প্রবেশনার কর্মকর্তা প্রতি তিনমাস অন্তর পরপর শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করবেন।
প্রিন্ট