ছোট রুমের মধ্যে নেই কোনো জানালা, সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল বন্ধ। এই আলো স্বল্পতার মধ্যে সিরিয়াল দিয়ে চোখের রোগী দেখছে ঢাকা থেকে আগত এক চিকিৎসক।
বুধবার দুপুরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের বানা বাজার খাঁন ফার্মেসীতে ঢাকা থেকে আগত মোল্যা সোয়েব নামের এক ব্যক্তিকে দেখা গেলো চোখের চিকিৎসা দিতে।
জানা যায়, বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা থেকে আগত চিকিৎসক দিয়েবানা বাজারে হক ফার্মেসীতে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পে স্বল্প মুল্যে চোখের চিকিকৎসা করা হবে। গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় এমনই মাইকিং করা হয়। এ খবরে ওই দিন ফার্মেসীতে রোগী এসেছে চোখের চিকিৎসা গ্রহণ করতে। এলাকাবাসী অনেকেই অভিযোগ করেছেন কোথাও চিকিৎসকের নাম নেই। যে চিকিৎসক এসেছে তার ব্যবহার ডাক্টারের মতো না।
এমন সংবাদে ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে ওই ফার্মেসীতে রোগীর ভিড় দেখা গেলো। রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলা রোগী। সেবা নিতে আসা চর বেলবানা গ্রামের বিল্লাল মোল্যার স্ত্রী শরিফা বেগম বলেন, ৫০ টাকায় চক্ষু পরিক্ষার কথা বলে সাদা কাগজে কিছু ওষুধ লিখে দিলো, একটি চষমা ধরিয়ে দিয়ে এক হাজার টাকা নিয়েছে।
একই এলাকার আকন মোল্যার স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, আমি নিজের চোখ দেখাতে এসেছিলাম ডাক্তারের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে ওই ব্যক্তি কোনো চোখের ডাক্তার না। চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যান তিনি। মাইকিং করা লিফলেটে কোথাও চিকিৎসকের নাম চোখে পড়েনি। ঢাকা যাত্রাবাড়ী এশিয়া ডিজিটাল চক্ষু হাসপাতালের নাম লেখা রয়েছে।
সাংবাদিক পরিচয়ে তার রুমে প্রবেশ করে দেখা যায়, ছোট একটি রুমের মধ্যে অল্পবয়সী এক যুবককে নিয়ে মোল্যা সোয়েব নামের ওই চিকিৎসক চোখ দেখার কিছু ডাক্তারি সরঞ্জাম নিয়ে ছোট চার্জার লাইট ও মোবাইলের লাইট জালিয়ে অল্প আলোর মধ্যে বসে আছে। সেখানে ছিল না কোনো চোখ দেখার মেশিন, ভিশন চার্ট ও নিজেস্ব চিকিৎসাপত্রসহ চিকিৎসকের যন্ত্রপাতি।
কোন মেডিকেল কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন এমন প্রশ্ন করতেই উত্তর দেন বাগেরহাট জেলার ম্যাাটস থেকে এ বিষয়ের ওপর পড়ালেখা করেছি। নিজেস্ব চিকিৎসাপত্র ও ভিশন চার্ট ভুলে ঢাকাতে রেখে এসেছে। চোখ দেখার মেশিনের কথা বললে বলেন ‘আমি কি ঢাকা থেকে মেশিন বয়ে নিয়ে আসবো এখানো চিকিৎসা করাতে’।
রোগীদের চিকিৎসাপত্র ও চষমা দেওয়া তার জন্য সঠিক আছে বলে জানান, বিএমডিসিতে তার ১৪০৪০ রেজিস্টেশন আছে। নামের আগে কেনো ডাক্তার লেখা নেই; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাইকোটে আমাদের মামলা চলছে।
বানা বাজারের ব্যবাসায়ী ছিরু বলেন, ডাক্তারের ব্যবহারে মনে হলো সে একজন মানসিকরুগী। সে আবার কি করে মানুষের চোখের চিকিৎসা করাবে।
হক ফার্মেসীর মালিক খাঁন মো.ইমদাদুল হক বলেন, ওরা নিজেদের উদ্যোগে আমার এখানে এসেছে ঢাকা এশিয়া ডিজিটাল চক্ষু হাসপাতালের ব্যানারে চিকিৎসা প্রদান করতে। তারা বলেছে আশপাশে অনেক জেলায় তারা এরকম রোগী দেখেন। কিছু দিন আগে আলফাডাঙ্গাতে ইউসুবেগের বাগ মোড় নামক স্থানে ক্যাম্প করে রোগী দেখেছে। তার আমিও কিছু মনে করিনি।
আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমুল হাচানকে একাধিক বার ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। হাসপাতালে ফোন দিয়ে যানা যায় তিনি প্রশিক্ষণে রাজধানী ঢাকাতে অবস্থান করছেন।
তৎক্ষনিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হককে অবগত করলে বলেন, প্রশিক্ষণে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। সবকিছু শুনে তিনি জানান ওই ব্যক্তি একজন ভূয়া চিকিৎসক, পরবর্তী সময়ে উপজেলার কোথাও আসলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
দুপুরে নামাজ শেষে ফিরে এসে ফার্মেসী বন্ধ পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে ডাক্তার পালিয়েছে বলে উপস্থিত সকলে জানায়।
এ বিষয়ে ঢাকা এশিয়া ডিজিটাল চক্ষু হাসপাতারের পরিচালক এস.এম আলাউদ্দিন সময়ের প্রত্যাশাকে জানান, মোল্যা সোয়েব আমাদের এখানে চাকুরী করেন। আমাদের হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ি সে রোগী দেখেন না। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।