ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার:
চার বছর বয়সী শিশু সালাউদ্দিন লাবিব সমাজের অন্যান্য শিশুর মতো বেড়ে উঠলেও মা-বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত। তার বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী, ফলে তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে বের হয়ে পড়েন, এবং মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বাড়িতে মাসের পর মাস থাকেন না। এর ফলে, সারা দিন একা ঘরবন্দি জীবন কাটে লাবিবের। তার জীবন চিত্রটি অত্যন্ত করুণ— এক একাকী, ছন্নছাড়া জীবনযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।
লাবিব কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কামিরহাট গ্রামের মজিবুল ব্যাপারী লিটনের ছেলে। লিটন শারীরিক প্রতিবন্ধী, এবং তার স্ত্রী সালমা খাতুন মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় সালাউদ্দিন লাবিব। জন্মের পর থেকেই মা-বাবার শারীরিক অক্ষমতার কারণে তাকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ঘরবন্দি থাকতে হয়। যখন তার বাবা ভিক্ষাবৃত্তি শেষে বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তা হয় গভীর রাতে। এই দীর্ঘ সময়টুকু নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে কাটাতে হয় তাকে, আর ক্ষুধায় কষ্ট সহ্য করতে হয়।
বাবা ভিক্ষাবৃত্তি করে যা আয় করেন, তা দিয়ে লাবিব এবং তার নিজের জন্য খাবার কিনে আনেন। বাবাকে দেখলেই আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায় লাবিবের চোখে, আর তখন বাবা-ছেলে একসঙ্গে খুনশুটি করে সময় কাটায়।
জানতে চাইলে, লিটন বলেন, ‘‘সন্তানের জন্য খুব কষ্ট হয়। ঘরে আটকে রেখে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বেরিয়ে পড়ি। দিনের বেলা লাবিব ঘরে একাই থাকে। সারাদিন যা আয় হয়, তা দিয়ে দুজনের খাবার কিনে বাড়ি ফেরার পরই সন্তানের মুখে আহার জোটে।’’
লিটন আরও জানান, তার স্ত্রী বাড়ি থেকে প্রায়ই চলে যান, এবং মাসের পর মাস কোথায় থাকে তা তিনি জানেন না। মাঝেমধ্যে কেউ তাকে ঘুরতে দেখে বলে জানান। লিটন বলেন, ‘‘আমি জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী। আমাদের ঘরে লাবিব জন্ম নিলেও তার পরিচর্যা আমি করতে পারি না। আত্মীয়স্বজন কেউই তার পাশে দাঁড়ায় না।’’
এছাড়া, লিটন জানান, কিছুদিন আগে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান পেয়েছিলেন, কিন্তু চোর তা চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন ভ্যানটি অচল পড়ে রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কেউ যদি তার ভ্যানের ব্যাটারি কিনে দেন অথবা একটি হুইলচেয়ার কিংবা ছোট মুদি দোকান তৈরি করে দেন, তাহলে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ছেলেকে কাছে রেখে আয় করতে পারবেন।
এ বিষয়ে চা দোকানি আল মামুন বলেন, ‘‘লাবিবের কষ্ট দেখে আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। তবে আমরা গরিব মানুষ, আমাদের সাধ্য নেই। তাই সমাজের ধনাঢ্যদের কাছে অনুরোধ, এই শিশুর জন্য হলেও যেন পাশে দাঁড়ান।’’
প্রতিবেশী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘‘লাবিব ও তার প্রতিবন্ধী বাবা লিটনকে দেখে খুব কষ্ট হয়। লিটন যখন বাইরে যায়, লাবিব একাই থাকে, তাকে আটকে রেখে দেওয়া হয়। তার খাবারও জোটে না যতক্ষণ না তার বাবা ফিরে আসে। এই অবস্থায় তাকে সাহায্য করা হলে লাবিবের ভবিষ্যৎ এবং তার বাবার দিনগুলো সুন্দর হতে পারে।’’