ফরিদপুর গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে (১৩ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার বিকেল থেকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৫১ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার জন্য অতিবৃষ্টি হচ্ছে তিন ধরে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে দিনমজুর, অটো ভ্যান ও ইজি ভ্যন চালকরা। অটো ভ্যান ও ইজি বাইকে চার্জ না থাকায় রাস্তায় বের হতে পারছে না চালকরা। এতে কয়েক হাজার পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এলাকায় কিছু বাড়িতে আইপিএস থাকায় তাদের মোবাইল সচল রয়েছে। অধিকাংশ বাড়িতে বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে না পেরে বন্ধ রয়েছে মোবাইল।
দির্ঘসময় বিদ্যুৎ বিহীন থাকায় ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কে কাজ করছে না। একাধিকবার কল করেও লাইনে পাওয়া যাচ্ছে না, কথা বলার সময় বার বার লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে বাসাবাড়ি ও দোকানিদের ফ্রিজের মালামাল নষ্ট হতে শুরু করেছে। আলফাডাঙ্গা বিদ্যুৎ অফিস বলছে ফরিদপুর গ্রিডে ব্রেকারে সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। তবে মেরামতের কাজ শেষের পথে। সে সাথে আবহাওয়া অনুকুলে আসতে হবে। তাহলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
জরুরী কাজ থাকায় বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার নওয়াপাড়া গ্রামের বাদশা মিয়া পাশ্ববর্তী উপজেলায় যাবে। আলফাডাঙ্গা বাজারে এসে এক ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ারপর একটি ইজি বাইক পেয়েছে। ইজি বাইক চালক সুযোগ বুঝে ভাড়া হাকান পাঁচগুণ। শেষে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তর্বস্থানে যেতে হলো তাকে।
আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাঁকাইল গ্রামের অটোভ্যান চালক নাজিম বিশ্বাস জানান,পরিবারে আমার ছয়জন মানুষ অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। সেই সাথে রয়েছে সাপ্তাহিক কিস্তি টাকা। শুক্রবার রাতে ভ্যান চালিয়ে বাড়িতে এসে চার্জে ধরিয়েছি। এখনও বিদ্যুৎ আসেনাই। ভ্যান নিয়ে রাস্তায় না নামলে পথে বসতে হবে।
একই গ্রামের ইজিবাইক চালক মামুন শেখ বলেন, শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ নেই এলাকায়। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে না পারলে সংসার চলাতে কষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ি রেখে বাহিরে গিয়ে কামলা দিবো রে পরিস্থিতি নেই। কারণ শুক্রবার থেকে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। ঘর থেকে বাহির হতে পারছি না। নাজিম বিশ্বাস ও মামুন শেখের মতো উপজেলায় কয়েক হাজার অটোভ্যান চালক ও ইজিবাইক চালক রয়েছে অধিকাংশ গাড়িতে চার্জ নেই। প্রায় পরিবারের এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া রয়েয়ে প্রতি সপ্তাহে তাদের দিতে হয় কিস্তির টাকা।
উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের যোগীবরাট গ্রামের বাসিন্দা গৃহিনী মেঘলা আক্তার বলেন, বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, আইপিএস থাকায় কোনো রকম আলোর ব্যবস্থা ছিল গ্রামের অনেকেই এসেছে তাদের মোবাইল চার্জ দিতে। রোববার সকাল থেকে আইপিএসে চার্জ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে মেহমান রয়েছে স্থানীয় বাজারে গিয়ে দেখলাম সবজির দোকানসহ অনেক দোকান বন্ধ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফ্রিজ খুলেছি। এখন দেখতে পেলাম ফ্রিজের পানি ছেড়ে দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ না আসলে সমস্থ মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে।
টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা গামের রাইস মিলের মালিক সেলিম শেখ জানান, বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের কাজ বন্ধ রয়েছে তিন দিন ধরে। এলাকায় অনেকর বাড়িতে চাল নেই। ধান নিয়ে বসে অনেক লোকজন। বিদ্যুৎ আসলে ধান ছাটাই করে দিতে হবে। এলাকায় বৈরি আবহাওয়ার জন্য অতিবৃষ্টির জন্য স্থানীয় বাজারের দোকান খুলতে পারছে না। আমরা চরাঞ্চলে বসবাস করি। আমাদের সময় খুব খারাপ যাচ্ছে।
উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের কুঠরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মহব্বত আলী বলেন, বাজারে লোহা ঝালায়ের কাজ আমার বিদ্যুৎ না থাকায় তিন ধরে কাজ বন্ধ। বিদ্যুৎ অফিসে খবর নিলাম কখন বিদ্যুৎ আসবে কেউ বলতে পারছে না। সুনেছি ফরিদপুর গ্রিডে ব্রেকারে সমস্যা হয়েছে। এখন আমারা বেকার হয়ে বসে আছি। কাজ না থাকলে পেটে খাবার যাবে না। পরিবার চলবে না।
উপজেলা ভ্যান চালক সমিতির সভাপতি সিদ্দিক সরদার জানান, পৌরসভায় মধ্যে প্রায় ৪০০ ও ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ১১০০-১২০০ ভ্যান চালক রয়েছে। তাদের অনেকেই কোনো না কোনো এনজিও সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ভ্যান ক্রয় করেছে। প্রতি সপ্তাহে এদের কিস্তি পরিশোধ করতেই হবে। আমি নিজেই ঋণ নিয়েছি ৬০ হাজার টাকা, পরিবারের সদস্য রয়েছে ছয় জন। এক ভ্যানের চালিয়ে সংসার চালাতে হয়, পরিশোধ করতে হয় প্রতি সপ্তাহে ৬ হাজার টাকা কিস্তি। তিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় আর বৈরি আবহাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারবো না। সেই সাথে ভ্যানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হবে বিশেষ করে ভ্যানের ব্যাটারী এক বার নষ্ট হলে প্রায় ১৫০০০-১৮০০০ টাকা লাগে।
আলফাডাঙ্গা পল্লী বিদু্যুৎ সমিতির সাব-জোনাল অফিসের এজিএম ফাহিম হোসেন ইভান বলেন, ফরিদপুর গ্রিডে ব্রেকার নষ্ট হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। বৈরি আবহাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আবহাওয়া অনুকুলে আসলেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে আশা রাখি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমীন ইয়াসমীন বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha