পল্লি কবি জসীম উদ্দীনের ‘মামার বাড়ী’ কবিতার ‘পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ’ এই পঙিক্তর সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। সুমিষ্ট রঙিন রসালো ফল জাম উৎপাদনে ঈশ্বরদী প্রসিদ্ধ। মধুমাসে পাকা জামের রসে রঙিন হয়ে উঠেছে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি জামের পাইকারি হাট। শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় হাট এখন মুখরিত। এ হাটে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার জাম বেচাকেনা হচ্ছে। স্বাদে ও গুণে সুখ্যাতির জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা মুলাডুলি আড়তে জাম কিনতে আসেন।
ঈশ্বরদীর মুলাডুলি, ফরিদপুর, চাঁদপুর, দাশুড়িয়া, বাঘহাছলা, গোয়ালবাথান, আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর, লালপুরের পালিদেহা, পুরাতন ঈশ্বরদী, কচুয়া, রাকসা, দুয়ারিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির আঙিনা ও সড়কের পাশে রয়েছে বিপুল পরিমাণে জামের গাছ। এসব গাছে জাম পাকার পর গাছমালিকরা বাজারে নিয়ে আসেন।
জাম স্বল্পকালীন ফল হওয়ায় বাজারের স্থায়িত্ব হয় সর্বোচ্চ এক মাস। স্থানীয়ভাবে পরিচিত হাঁড়ি জাম, ঠাকি জাম ও খুদে জাম এখানে পাওয়া যায়। আকারভেদে বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজের বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। মুলাডুলি মোকাম থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার ট্রাক জাম সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জাম বিক্রি করে এ অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে।
সরেজমিনে মুলাডুলিতে দেখা যায়, প্লাস্টিক ঝুড়িতে স্তূপে স্তূপে জাম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কুচকুচে কালো জামে সূর্যের আলো পড়ে চকচক করছে। যা দেখে যে কোনো মানুষের মন ভরে যাবে। দূরদূরান্ত থেকে অটোবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সাইকেলে করে গাছমালিক ও খুদে ব্যবসায়ীরা এখানকার আড়তে জাম নিয়ে আসছেন। পাইকাররা এসব জামের দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন।
মুলাডুলি পাইকারি হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার জাম অত্যন্ত সুস্বাদু ও আকারে বড়। তাই রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে এ জামের চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিনই জাম দেশের বিভিন্ন ফলের দোকানে পাঠানো হচ্ছে। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন, আমরাও লাভবান হচ্ছি।
মুলাডুলির জাম আড়তের মালিক আমিনুর রহমান বাবু জানান, ঈশ্বরদীসহ প্রায় সাত-আটটি উপজেলার মানুষ মুলাডুলি আড়তে জাম বিক্রি করতে আসে। বাণিজ্যিকভাবে এখানে জামের চাষ না হলেও বাড়ির আঙিনায় লাগানো গাছ থেকে এসব জাম তারা সংগ্রহ করেন। ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা জাম কিনে বাজারজাত করে থাকেন। তিনি আরো জানান, প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকার জাম এখানে বেচাকেনা হয়। প্রতি বছরই আড়তে জামের আমদানি বাড়ছে।
মুলাডুলি কাঁচামাল ও ফল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঈশ্বরদীর লিচুর মতো এখানকার জামের সুখ্যাতিও দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। জাম বিক্রি করে এ অঞ্চলের মানুষ ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। একসময় ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিকভাবে জাম চাষও শুরু হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিকভাবে জাম চাষ এখনো শুরু হয়নি। মুলাডুলি আড়তে যে পরিমাণ জাম বেচাকেনা হয় তাতে কৃষকরা একসময় বাণিজ্যিকভাবে জামবাগান করতে উৎসাহিত হবেন। জাম ঈশ্বরদীর একটি সম্ভাবনাময় ফল হয়ে উঠবে। এ বিষয়ে কৃষির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha