কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নোয়াখালীর বিছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় টুং টাং শব্দই যেন জানান দিচ্ছে আর কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস সাইজ করতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ এবং প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এ উপকরণ তৈরি ও শান বা লবন-পানি দেয়ার কাজে প্রয়োজন কামারদের। পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই মানুষ কামারপাড়ায় ঢু-মারছেন। আবার কেউ কেউ পুরানো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন।
ঈদুল-আজহা সামনে রেখে উপজেলার কামার দোকানগুলিতে মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছে কর্মকাররা। এ উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা রয়েছে। পৌর এলাকার পুরাতন বাজার, জাহাজমারা বাজার,সাগরিয়া বাজার, চরচেঙ্গা বাজার,আফাজিয়া তমরউদ্দি বাজারসহ ইউনিয়নগুলির বড় প্রতিটি বাজারেই আছে কামারের দোকান। তবে উপজেলার মধ্যে আছে প্রায় ১৫ টি কামারের দোকান । কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সেখানে লোহা আর হাতুড়ির শব্দে এখন আকাশ-বাতাস মুখরিত। এ পেশার মানুষ সারা বছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্মব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ।
সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, হাতিয়া উপজেলার ওছখালী বাজারের কামারর দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে এসব কামারের দোকান। দম ফেলারও যেন সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন শিল্পীরা। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলে তাদের। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির মৌসুমে ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের।
হাতিয়া উপজেলার কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৫০-২০০ টাকা, দা ৪৫০-৬০০ টাকা, বঁটি ৩০০-৫৫০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০-১ হাজার টাকা, চাপাতি ৬০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজি উপরের নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়। পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন কামারদের দোকানে। আগে যেসব দোকানে দু’জন করে শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেসব দোকানে ৩-৫ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। কামার দোকানদারদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও লোহার দাম বেড়ে গেছে। অপরদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ৩০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কামারদের বেচা-কেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
ওছখালী বাজারের কে কে কর্ক কনক আইরোন স্টোরের মালিক কৃষ্ণ কমল মজুমদার খবরের কাগজ কে বলেন কয়লা ও লোহার দাম অনেক বেশি। তাই তৈরিকৃত সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়।
ওছখালী তালুক সুপার মার্কেটের বিদান কর্মকার এর মালিক প্রদীপ কর্মকার খবরের কাগজ কে বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করছি। ঈদকে সামনে রেখে পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালই থাকে।
কারিগররা আরো জানায়, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
নিজের লোহা দিয়ে চাপাতি বানাতে রহিম মিয়া জানান, আগের চেয়ে দাম বেশি চাচ্ছে। নিজে লোহা দিলাম তারপরও মজুরি চায় ৩০০-৪০০ টাকা। তারা বলছে কয়লার দাম নাকি বেশি।
কামারের দোকানে বঁটি বানাতে আসা মুনসুর আলী বলেন, আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি। আগে যে বঁটি বানাতাম ১৫০-২৫০ টাকা সেটি এখন বানাতে লাগছে ৪০০-৫০০ টাকা।