১৫ মার্চ শুক্রবার সকালে কুচিয়ামোড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চাশোর্ধ এক নারী রমেছা খাতুন পানের বরজের সামনে আহাজারি করছেন। জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী আব্দুল রহিম আলী আট বিঘা জমিতে পানের বরজ করেছিলেন। সামনে ঈদ, কত চিন্তা-ভাবনা করে রেখেছিল সে মা-বাবা স্ত্রী সন্তানদের ভালো কাপড়চোপড় ক্রয় করে দেবেন। সর্বনাশা আগুনে স্বামীর বুক বাধা স্বপ্ন ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেল ।
তার পাশেই কান্নায় ভেঙে পড়েন জরিনা বেগম নামের আরেক নারী। পান বরজের খুঁটি ধরে বিলাপ করে জরিনা বলছেন, সমিতির কিস্তি কীভাবে শোধ হবি? ওরে আল্লাহ আমাদের সবকিছুই নি নিলি ক্যা?’ তার কান্নায় আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে যাচ্ছিলো।
জানা গেছে, গত ১০ মার্চ রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রাইটা পাথর ঘাটা এলাকার একটি পানের বরজে হঠাৎ করেই আগুন দেখতে পান স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন বিস্তার লাভ করতে থাকে। স্থানীয় নারী-পুরুষ যে যার মতো করে চেষ্টা করে আগুন নেভাতে ব্যর্থ হন। খবর দেওয়া হয় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসকে।
ততক্ষণে আগুন তাদেও ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একে একে আগুন নেভাতে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং পাবনা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এসে ঐদিন কাজ শুরু করেন। সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় কয়েকশ নারী-পুরুষ। বেলা ১১টা থেকে লাগা আগুন প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে কয়েক হাজার কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ভেড়ামারা উপজেলার নির্বাহী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন,আগুনের উৎপত্তির কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হচ্ছে- বিড়ির আগুন থেকে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটতে পারে।
ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, পান বরজে আগুন লাগার বিষয়টি আমরা গভীরভাবে খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমাদের একটি টিম, পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে অত্র এলাকায়।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণের জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা। ঘটনার তদন্তে ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা কে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের বরাত দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ড বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের পর তাদের ক্ষতিপুরণের জন্য ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, তাতে প্রায় ৮শ’ কৃষক প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে, মোট ৯১.৮৪ হেক্টর জমির উপর ১৩শ’ ৪৩টি পানবরজ আগুনে পুড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই তথ্য দিয়েছেন উপজেলার কৃষি অফিসের ১৯জন উপ কৃষি কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে জানান।
আর যেসব পরিবার অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার পরদিনই তাদের মাঝে শুকনা খাবার এবং চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেসাম রেজা।
ভয়াবহ আগুনে কয়েক হাজার পানের বরজ, কলাবাগান এবং ফসলের ক্ষেত পুড়ে যায়। বাতাসের তীব্রতা থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, ৮শ’ ৬৬জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের মধ্যে ৫শ’ জনকে প্রনোদনা হিসেবে আগামীকাল ১৬ মার্চ শনিবার সকাল ১১টার সময় কুষ্টিয়া-২(ভেড়ামারা-মিরপুর)
উপজেলা পিআই ও কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ জানান, জন প্রতি কৃষক ২০ কেজি চাল,আলু ২ কেজি,ডাল ১ কেজি,সোলা ১কেজি,লবণ হাফ কেজি ও সোয়াবিন তেল ১ কেজি করে দেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha