নরসিংদী সদর বাজারে লাইব্রেরি পট্টির সাথেই রয়েছে সরকারি অনুমোদিত একটি বাংলা মদের দোকান। প্রতিদিন শত শত লিটার মদ বিক্রি হয় এখানে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মদখোররা এসে জড়ু হয় এখানে। মদের বিশ্রী দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ লাইব্রেরী পট্টি ও আশেপাশের বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। ইনডেক্স প্লাজা অতিক্রম করে একটু সামনে গেলেই মদের দুর্গন্ধে বমি চলে আসে পথচারীদের। কারণ মদ কিনে এখানেই মদ্যপান করেন অনেকে। সেই মদের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
শুধু তাই নয় কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে টাকা দিলেই যে কেউ মদ কিনতে পারছে এখান থেকে।স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের হাতেও তুলে দেওয়া হচ্ছে বাংলা মদ। লাইসেন্স ছাড়াই টাকা দিলেই মদ মিলবে এখানে।অথচ লাইসেন্স বা পারমিটধারী ব্যক্তিদের ছাড়া বাংলা মদ কেনা-বেচা আইনত দণ্ডনীয়। ২১ বছরের নিচে কেউ মদ খাওয়ার পারমিট পায় না। কিন্তু সরকারি মদের ম্যানেজার সোহাগের অবৈধভাবে অর্থ কামানোর নেশায় টাকা দিলে সবাইকে দিয়ে দিচ্ছে মদ। এতে আসক্ত হচ্ছে আমাদের ১০ থেকে ১৮ বছরের কিশোররা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোন ধরনের তদারকি নেই এখানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, স্থানীয় হলুদ সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নাকি সোহাগের চলছে এই অপকর্ম। মদের টাকা জোগাড় করতে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধে। নরসিংদীর প্রতিটি মহল্লায় তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। ছিনতাই, খুন, ডাকাতি, ধর্ষন, চুরি, ইভটিজিং সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হচ্ছে এই গ্যাং। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের নরসিংদীর কিশোর ছাত্র ও যুব সমাজ। এই সুযোগে মুনাফা কামাচ্ছে কতিপয় লোক। তারা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মালিক। প্রশাসনের নাকের ডগায় মদের দোকানের আশেপাশে বসেই মধ্যপান করে যাচ্ছে দেদারছে মানুষ। আর মাসুয়ারা নিয়ে এই তামাশা দেখছে নরসিংদীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, অধিক মুনাফার লোভে ম্যানেজার সোহাগ শুধু কিশোর না, শিশুদের হাতেও দিচ্ছে মদ, মদে মেশানো হচ্ছে পানি, কাঠের আসবাবপত্রে ব্যবহার করা স্প্রিট (মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর), যারা ফ্রি মদ নেয় তাদের মদে প্রস্রাব মিশ্রিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা এখান থেকে আয় হলেও সরকার পাচ্ছে নামমাত্র রাজস্ব। আর বিপদের মুখে পড়ছে আমাদের কিশোর ও ছাত্রসমাজ।
এই বিষয়ে কথা হয় নরসিংদী জেলা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা: মো: আবু জায়েদ এর সাথে। তার মতে কিশোরদের এই বাংলা মদ খাওয়ার জন্য যেই রোগে আক্রান্ত হতে পারে সেগুলি হল: সিরোসিস হয়ে লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, বুদ্ধিমত্তাহ্রাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিনষ্ট, হার্টফিল, শরীরে পানি আসা, হাত পা ও শরীরে ব্যথা জ্বালাপোড়া, মাত্রাতিরক্ত এই অ্যালকোহল ব্যবহারে হতে পারে ব্রেন এটাক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যক্ষা, টিভি নিউমিনিয়া ও ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে, বিভিন্ন যৌন রোগে আক্রান্ত হতে পারে, ভবিষ্যতে অন্য ড্রাগে আসক্ত হয়ে এইডস, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, জন্ডিস সহ আরো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সবচেয়ে বিপদজনক হলো মাত্রাতিরিক্ত মধ্যপানে হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে ওই কিশোরদের।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে নরসিংদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে সেখানে তার রুমে পাওয়া যায়নি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল কাশেম কে। পরবর্তীতে মোবাইলে তাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি জানান, আপনার অভিযোগ আমরা আমলে নিয়ে তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি? সাজা হবে কি মালিকের? হবে কি কোন জরিমানা? চাকুরি যাবে ম্যানেজার সোহাগের? নাকি বন্ধ হবে মদ বেচা? নাকি হবে না কোন কিছুই? সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের! কিন্তু যেই কিশোররা মদ খেয়ে অভ্যস্ত হয়েছে, তাদের মদ খাওয়া থেকে কিভাবে ফিরাবেন তিনি? কতিপয় লোকের টাকা কামানোর মেশিন চালু রাখতে নরসিংদীর কিশোর ছাত্র সমাজের যেই ক্ষতি করেছে এই সরকারি বাংলা মদের পাট্টা, সেই ক্ষতিপূরণ কিভাবে দিবেন তারা? এই অপূরণীয় ক্ষতির কি কোন ক্ষতিপূরণ হয়?