কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার (কুষ্টিয়া) শরীফ বিশ্বাস, ক্যামেরাপার্সন এসআই সুমন ও বিদ্যুৎ হোসেন নামে তিন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাদের ব্যবহৃত ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের সিরাজনগর এলাকায় পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনকালে তারা অতর্কিত হামলার শিকার হন। লাঠিসোটা দিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করা হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর স্থানীয়দের সহায়তায় আহত তিন সাংবাদিককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
আহত সাংবাদিক ও স্থানীয়রা জানান, দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের আবুল কাসেমের দ্বিতীয় পুত্র কামাল হোসেন নিজের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করে চাচা আহসানুল হাবীব মোল্লাকে বাবা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এডমিন ক্যাডারে চাকরি পান। বর্তমানে তিনি খুলনার কয়রা উপজেলার ইউএনও হিসাবে কর্মরত। চাচাকে বাবা সাজিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়ার তথ্য পেয়ে প্রতিবেদনের জন্য বৃহস্পতিবার বিকালে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার (কুষ্টিয়া) শরীফ বিশ্বাস ক্যামেরাপার্সন এসআই সুমন ও বিদ্যুৎ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও কামাল হোসেনের নিজ গ্রাম এ উপজেলার সিরাজনগরে যান।
সরেজমিনে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি জানতে পেরে আহসানুল হাবীব মোল্লার ছেলে বাচ্চুর নেতৃত্বে ১২ জন লোক সন্ত্রাসী কায়দায় তাদের ওপর চড়াও হন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাঠিসোটা দিয়ে ওই তিন সাংবাদিকেকে বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় তাদের কাছে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুর করা হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার পর বিকাল ৫টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় তারা মুক্ত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর এ ঘটনায় সাংবাদিক শরীফ বিশ্বাস বাদী হয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি শিপন (৩৮) ও মঞ্জুকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে।
হামলার শিকার চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার জেলা প্রতিনিধি এবং স্থানীয় দৈনিক দি টিচার পত্রিকার সম্পাদক। সাংবাদিক শরীফ বিশ্বাস বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাঠিসোটা দিয়ে পেটানো হয়। ক্যামেরা ভাঙচুর করে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে জেলার সাংবাদিক সমাজ ফুঁসে উঠেছে। হামলার সাথে জড়িত সকল আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে দৌলতপুর থানা চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন এখানকার সাংবাদিকরা।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক শরীফ বিশ্বাসের ওপর হামলার ঘটনায় জেলার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাতেই কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ জরুরি বৈঠকে বসেন। তারা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।