ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ‘ইলিশ পেটি মিষ্টি’র মনভুলানো স্বাদ একবার যারা জিভে পেয়েছেন তারা সবাই ওই মিষ্টির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইলিশ মাছের পেটির মতো দেখতে হওয়ায় মিষ্টির নাম রাখা হয়েছে ‘ইলিশ পেটি’। আর এই ইলিশ পেটি মিষ্টি পাওয়া যায় বোয়ালমারী এবং পাশের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত কয়েকশ মিষ্টির দোকানের মধ্যে একমাত্র গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারে। গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের ওই মিষ্টির দোকানটি উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের চিতারবাজার মেইনরোডে অবস্থিত।
চিতারবাজারের পাশের কোন্দারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ কুন্ডু নামের একজন মিষ্টি ব্যবসায়ী ১৯৯৭ সালে নিজ নামে গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের মিষ্টির দোকানটি চিতারবাজার নামক এলাকায় গড়ে তোলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিজেই মিষ্টির দোকানটি কারিগর দ্বারা চালাতেন। গোবিন্দ কুন্ডুর মৃত্যুর পর বিগত কয়েক বছর ধরে তার ছেলে গুরুদাস কুন্ডু পৈতৃক পেশাকে ভালোবেসে দোকানটি পরিচালনা করছেন। বর্তমানে দোকানটিতে মিষ্ষ্টি তৈরির চারজন কারিগর আছেন।
ওই দোকানের বিখ্যাত ইলিশ পেটি মিষ্টির নাম লোকমুখে শুনে ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে সরেজমিনে গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারে গেলে দেখা যায় ক্রেতারা মিষ্টি কিনছেন। বিক্রেতারাও মিষ্টি বিক্রিতে ব্যস্ত। দোকানে থরে থরে ইলিশ পেটি, ছানার সন্দেশ, রসগোল্লা, চমচম, কালোজাম সাজানো। এছাড়া ফ্রিজে উন্নতমানের দধি, রসমালাই এবং মালাই চপ আছে বলেও জানানো হয়। গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের মিষ্টির দোকানটি বোয়ালমারী উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। বোয়ালমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দিয়ে একটি পাকা রাস্তা ওই দোকানের সামনে দিয়ে চলে গেছে চিতারবাজার পর্যন্ত। মোটরসাইকেলে ওই দোকানে যেতে ১৫ থেকে ১৯ মিনিট সময় লাগে। পৌরসভার ওয়াপদা মোড়ে অবস্থিত ভ্যান স্ট্যান্ড থেকে সারাক্ষণ ভ্যান চলাচল করে। ভ্যানে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।
গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক গুরুদাস কুন্ডুর ব্যবহারও বেশ অমায়িক। সারাক্ষণ তার ঠোঁটে হাসি লেগেই থাকে। বিক্রেতারাও তার ব্যবহারে বেজায় খুশি। মালিক গুরুদাস কুন্ডু বলেন, ‘প্রতিদিন ১৬/১৭ ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয়। এরমধ্যে ইলিশ পেটি মিষ্টির দাম সবচেয়ে বেশি। কেজি ৭২০ টাকা। প্রতি কেজিতে ২৪/২৫ পিস হয়। এছাড়া ছানার সন্দেশ, মালাই চপ বেশি চলে। ছানার সন্দেশের দাম ৪৫০ টাকা, প্রতি কেজিতে ১৫-২৬ পিসের মতো হয়। মালাই চপের দাম ৪৮০ টাকা।’
‘ইলিশ পেটি মিষ্টি নির্ভেজাল ক্ষীর দিয়ে তৈরি করা হয়, তাই এর স্বাদ ও গুণগত মান বজায় থাকে। এছাড়া ছানার সন্দেশ এবং মালাই চপে ছানা ছাড়া অন্য কোন কিছু মেশানো হয় না’, যোগ করেন গুরুদাস কুন্ডু।
তিনি আরো জানান, যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য মিষ্টির অর্ডার নেয়া হয়। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়। দিনের মিষ্টি দিনেই শেষ হয়ে যায়, এজন্য আগের দিনের বাসি মিষ্টি বিক্রি করা হয় না।
গুরুদাস কুন্ডু আরো জানান, বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ নাম না জানা অনেকেই তার দোকান থেকে মিষ্টি ক্রয় করেন। কেউ কেউ ৪/৫ কেজি করেও ক্রয় করেন। এমনকি ফরিদপুর জেলার সদ্য বিদায়ী এএসপি সুমন করও মিষ্টি নিতেন।
বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামস্থ সরকারি কলেজ রোডের বাসিন্দা এবং স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী লিটু সিকদার বলেন, ‘লোকমুখে গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ইলিশ পেটি মিষ্টির নাম শুনে মিষ্টি খাওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। সত্যিই অতুলনীয়। সেই স্বাদ! ভালো লাগায় পরিবারের জন্যও নিয়েছি।’
বোয়ালমারী স্টেশন রোডের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক তিতাস কুমার সাহা বলেন, ‘প্রায়শই গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ইলিশ পেটি মিষ্টি পরিবারের জন্য কেনা হয়। খুব ভালো মিষ্টি।’
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শেখ মনজুর তুষার বলেন, ‘চিতারবাজারের গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ইলিশ পেটি মিষ্টি খুবই ভালো। উপজেলার এবং উপজেলার বাইরে থেকেও অনেকে মিষ্টি কিনতে যান ওই দোকানে। তবে দোকানটির অবস্থান উপজেলা সদরে হলে মিষ্টিপ্রেমীরা ইলিশ পেটি মিষ্টির স্বাদ ভোগ করতে পারতো।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।