গ্রামের সহজসরল মানুষকে টার্গেট করে কাজের সন্ধানে ভালো বেতনের প্রবোলন দেখিয়ে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে জনপ্রতি ১ থেকে ৪ লাখ টাকা করে অনন্ত ২০ জনের কাছ থেকে ৫৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় শারীরিক প্রতিবন্ধী তারিকুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়া। তারা মিয়া ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের উথালী গ্রামের বাসিন্দা। তারার ভাষ্য এসব টাকা তিনি ঢাকার এক এজেন্সি মালিক আবুল কাশেম নামের এক প্রতারকে দিয়েছেন।
প্রতারণার শিকার উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের জুবাইল মোল্যার করা প্রতারনা মামলায় এ দুই আসামিকে বুধবার রাতে তারা মিয়ার বাড়ি থেকে গেপ্তার করে শনিবার সকালে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে প্রতারক আবুল কাশেম মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের ওয়াজ বক্সের ছেলে। তার নামে ২০১৫ সালে কক্সবাজার জেলায় পেকুয়া থানায় ও ২০১৬ সালে নিজ উপজেলায় মানবপাচারের মামলা রয়েছে।
আলফাডাঙ্গা থানা সূত্রে জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবারে তারা মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম বাদি হয়ে আবুল কাশেমের নামে ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে আলফাডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতারক আবুল কাশেম দুবাই, রোমানিয়া, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া যাবার নাম করে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে তারা মিয়ার কাছ থেকে ৫৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে খারাপ ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদান করে।
বুধবার রাতে আবুল কাশেমের কিছু লোকজন ঢাকা থেকে আলফাডাঙ্গা থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করেন আবুল কাশেমকে ঢাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে আনা হয়েছে। আবুল কাশেম আলফাডাঙ্গাতে আছেন। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আবুল কাশেমকে তারা মিয়া বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। পুলিশ রাতেই দুজনকে আটক করে থাকায় নিয়ে আসে। তাদের আটকের কথা সুনে প্রতারণার শিকার একাধিক ব্যক্তি থানায় এসে হাজির হয়।
ওই দিন রাতে প্রতারণার শিকার উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের জুবাইল মোল্যা বাদি হয়ে আটক দুইজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করেন।
তারা মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম জানান, আমাদের এলাকার মানুষের কাছ থেকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে টাকা নিয়েছি সত্য। তবে সেসব টাকা আবুল কাশেমকে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের লোকজন আমাদের কাছে টাকা ফেরৎ চাচ্ছে। আমরা বিষয়টি আবুল কাশেমকে বার বার বলেছি। তিনি আমাদের টাকা ফেরৎ দিবে বলে শত বার সময় নিয়েছে। শেষে আমি নিজে তার ঢাকার বনানী বাসায় গিয়েছি। সে টাকা না দিয়ে সময় চেয়ে গা ঢাকা দেয়। অনেক কৌশলে তাকে ঢাকা থেকে এনে আমাদের বাড়িতে রেখেছি যাহাতে ভূক্তভোগীদের টাকা গুলো বুঝিয়ে দেয়। আমারা ডিবি পরিচয়ে আবুল কাশেমকে তুলে আনিনাই।
প্রতারনার শিকার মো.তুহিন মিয়া জানান, তারা মিয়ার মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ টাকা চার কিস্তিতে পরিশোধ করে মার্চ মাসের ৬ তারিখে দুবাই গিয়েছিলাম। আমার সাথে শর্ত ছিল কোম্পানির ভালো কাজ দিবে, মাসিক বেতন হবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমাকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। চার মাস আমাকে একটি রুমের মধ্যে রেখে দেয়। প্রতিমাসে খাবার বাবদ ৪০ হাজার টাকা চায়। টাকা দিতে না পারায় আমার পাসপোর্ট রেখে এক কাপুড়ে বের করে দেয়। পরে আমার পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে সেখানে গিয়ে কিছু টাকা পরিশোধ করে এক লাখ টাকা প্লেন ভাড়া দিয়ে বাড়ি চলে আসি। এর মধ্যে তারা মিয়া আমার ৭০ টাকা পরিশোধ করেছে। সুনেছি আমার মতো অনেকের সাথে এমন প্রতারণা করেছে।
তারা মিয়া ও আবুল কাশেমের খপ্পরে পড়ে নগরকান্দা উপজেলার বিনিকদিয়া গ্রামের হাচান মাতুব্বর ও সালথা উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের বিপ্লব মাতুব্বর দুবাই শহরে গিয়ে আটকে আছে। তুহিন মিয়ার মতো তাদের সাথেও প্রতারণা করেছে। তাদের হাতে কোনো কাজ নেই। টাকার অভাবে দেশে আসতে পারছেনা।
ওসি মো.আবু তাহের জানান, তারা মিয়া ও আবুল কাশেম দুইজনই বড় প্রতারক। তারা দুজন মিলে এলাকার কিছু মানুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে মানবপাচারের দুটি মামলা রয়েছে। আলফাডাঙ্গা এক ভূক্তভোগীর করা মামলায় তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫