মাগুরার মহম্মদপুরে চলতি বছর পাটের ভালো ফলন হলেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে পাটগাছ। অন্যদিকে সেচের মাধ্যমে বীজতলা প্রস্তুত থাকলেও পানির অভাবে ধানের চারা রোপণ করতে না পারায় কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মধ্যে ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। খাল বিলে পানি না থাকায় পাট জাঁগ দেওয়া যাচ্ছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বাধ্য হয়েই কিছু কৃষকরা উপজেলার সীমান্তবর্ত্তী বিনোদপুর এলাকার নবগঙ্গা নদীতে পাট জাঁগ দেওয়া শুরু করেছেন। পরিবহন খরচ অতিরিক্ত হওয়ায় অনেক দরিদ্র কৃষকদের পাট ক্ষেতেই শুকিয়ে নষ্টো হচ্ছে। শ্রাবণ শেষে ভাদ্র মাসের কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়া পাট জাঁগ এবং ধান চাষ নিয়ে এ এলাকার কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। গত দুই বছরে দাম বেশি পেয়ে পাট চাষে ঝুঁকেছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। এ বছর উপজেলার আট ইউনিয়নের বাবুখালি, দীঘা, বিনোদপুর, বালিদিয়া, নহাটা, রাজাপুর, পলাশবাড়িয়া ও মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নে পাটের ভাল আবাদ হয়েছে। পাট গবেষণায় খরাসহিষ্ণু রবি-১ জাতের পাটের চাষ বেশি করা হয়েছে। তবে এবারের খরায় পাটক্ষেত বাঁচাতে হিমশীম খাচ্ছেন চাষিরা। তবে নদী এবং বিলাঞ্চলের আশেপাশের কৃষকরা পাট কেটে সেচের মাধ্যমে ধান চাষ শেষ করলেও উপজেলার বেশীরভাগ কৃষক পাট কেটে ক্ষেতেই রেখে দিয়েছেন বৃষ্টির আশায়।
শনিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার বিনোদপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কিছু ক্ষেতের পাট গাছগুলো শুকিয়ে নষ্টো হয়ে যাচ্ছে। যেসব জমিতে বেলেমাটির পরিমাণ বেশি, সেসব ক্ষেতের পাটগাছ শুকিয়ে গেছে। ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খালবিল, ডোবা-নালায় পানি জমেনি। ফলে পাট কেটে জাঁগ দেওয়া নিয়েও তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।। কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের।
ডুমুরশিয়া গ্রামের চাষি রহমান শেখ বলেন, ‘আমি দুই একর জমিতে পাট চাষ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছিল, কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এক একর জমির পাটগাছ ক্ষেতেই শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পাট কেটে ফেলব বলে ভাবছি, কিন্তু খালবিলে পানি না থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।
বিনোদপুর গ্রামের ধান জাহাঙ্গীর মোল্যা বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমির পাট কেটে আমন ধান লাগাব। আমার বীজতলা প্রস্তুত থাকলেও বৃষ্টির অভাবে জমি চাষ করতে পারছি না। দু-এক দিন দেখার পরে দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করে ধান লাগাবো। কিন্তু এত খরচ করে আবাদ করা পাট কি করবো তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।
কালুকান্দি এলাকার কৃষক জমির মিয়া বলেন, অনেক টাকা খরচ করে ভ্যানে করে পাট নিয়ে নবগঙ্গা নদীতে পাট জাঁগ দিছি সেচ দিয়ে ধান লাগাবো বলে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় সব দিকেই আমার ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, গত বছর দাম ভালো হওয়ায় এবার উপজেলায় পাটের চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। অনেকে তিলের চাষ বাদ দিয়ে পাটের আবাদ করেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত ক্ষরার কারনে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচসুবিধা অব্যাহত রাখতে চাষিদের আমরা গভীর নলকূপগুলো চালু করার পরামর্শ দিচ্ছি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha