ভেড়ামারা-পাকশীতে পদ্মা নদীর ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উভয পাড়ে খুব কাছাকাছি স্থানে নদী দখল করে পাহাড়সম বালু স্তূপ করে রাখার কারণে পদ্মার এই ভরা মৌসুমে নদীর গতিপথই পরিবর্তন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিরাপদ দূরত্বের মধ্যে নদীতে 'চুপেচাপে' ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু।
কতিপয় বালু ব্যবসায়ীকরা অবৈধ ভাবে ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সন্নিকটে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধ বালুর খোলা। পাহাড় সমান বালুর স্তুপ সাজিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই শুধু ম্যানেজ করেই বছরের বছর জমিয়ে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা।
স্থানীয় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীকরা বালুর খোলার হর্তাকর্তা। কেপিআইভূক্ত এলাকায় বালুর ব্যবসায় সহযোগীতা করছে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি অফিস।
প্রকৌশলীদের মতে, বালু স্তুপের কারণে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর স্রোত বাধাগ্রস্থ ও গতিপথ পরিবর্তন হয়। এতে ব্রিজের পিলার ও গাইড ব্যাংকের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখিন।
ভেড়ামারা-পাকশীতে হার্ডিঞ্জ সেতুর পাশে পদ্মা নদীর তীরে গাইড ব্যাংকের বিশাল এলাকা জুড়ে বালুর স্তুপ রয়েছে। বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রকরা ওই এলাকাকে বালুমহাল বলছেন না, বলছেন বালুর খোলা। অন্যান্য স্থান হতে বালু এনে এখানে স্তুপিকৃত করে ব্যবসা করছেন বলে তাদের দাবি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও লক্ষীকুন্ডা নৌ-পুলিশ এসব দেখেও দ্যাখেন না। নির্বিঘ্নে বালুর ব্যবসার কাজে তাদেরও সহযোগীতা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ সেতুর পাশে নদী তীরবর্তী গাইড ব্যাংকের পাশে বিশাল এলাকা কৃষিকাজের জন্য রেলওয়ের ভূসম্পত্তি অফিস থেকে লীজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে কৃষিকাজ হয় না। লীজ গ্রহীতাদের নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে বালুর ব্যবসা চলছে। শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর খুব কাছে বালুর ব্যবসা পরিচালনার কারণে ব্রিজ দুটির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। বালুর স্তুপ বড় হতে হতে বিশাল স্তুপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু।
স্থানীয়রা জানান, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রকরা প্রতিদিন টাকা ওঠানোসহ যাবতীয় কর্মকান্ডে দায়িত্ব পালন করেন। বালুমহালের বালু ব্যবসায়ীরা জানান, জমি ভাড়া নিয়ে তারা বালু স্তুপ করে বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে ট্রাক-ট্রাক্টর আসছে ও বালু নিয়ে চলে যাচ্ছে। বালু বোঝাইয়ের পর নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে টাকা দিচ্ছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার ট্রাক ও ট্রাক্টর বালু বিক্রি হয় বলে জানা যায়। টাকার হিসেবে এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন ২০-৩০ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়। ট্রাক প্রতি এবং বালুর ফুট হিসেব করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-২) বীরবল মন্ডল বলেন, পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ মূলত আপস্ট্রিমের পানি প্রবাহ। বৃটিশরা যখন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি করে ব্রিজ রার রক্ষা বাঁধ (গাইড ব্যাংক) আপস্ট্রিমে অনেক দূর পর্যন্ত করেছে। এটি ব্রিজটি রক্ষার স্বার্থেই। এখন বালু মহালকে কেন্দ্র করে গাইড ব্যাংক ব্যাপকভাবে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না।
দেশের রাষ্টীয় সম্পদের বিষয় অনুধাবন করে প্রতিটি সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে। রেলওয়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ব্রিজ ১০৮ বছর জীবনকাল পার করেছে। অসচেতনতা আর ডিপার্টমেন্ট ইজমের জন্য আমরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বিলুপ্তির পথে ধাবিত করছি না তো?
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ বলেন, বালুর ওই জমি রেলের। এতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পিলার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পিলার রক্ষার জন্য গাইড ব্যাংক করা হয়েছে। বালু রাখার কারণে গাইড ব্যাংকেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ভূসম্পত্তি অফিস এসব জমি দেখাশোনা করে। এবিষয়ে তাদের বলেছি। কিন্তু ভালো রেসপন্স পাচ্ছি না।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha