রেলওয়ের অনুমতি না নিয়ে ও নিয়ম না মেনে কেপিআইভূক্ত দেশের দর্শনীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে আরসিসি কলাম করে এবং ঢালাই দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অধীনে যে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছিল, সে কাজে বাধা দিয়েছেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে এই রাস্তা নির্মাণ হলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পিলার, গাইড ব্যাংক ও গার্ডার ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তারা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে রেল নিরাপত্তা বাহিনী এবং রেল পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করেন। এ সময় কাজের কিছু অংশ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ওই সড়কের মুখ রেলপাত দিয়ে বন্ধ করা হয়।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ সেতু রেলওয়ের সর্ববৃহৎ একটি কেপিআই স্থাপনা। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ দিয়ে হঠাৎ করে সড়ক স্থাপনার কাজ শুরু করে। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে খবর পেয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদসহ রেলওয়ে কর্মকর্তাদের একটি টিম ঘটনাস্থল গিয়ে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, বৃহৎ রেলব্রিজটি ১শ’ ৮বছর টিকে আছে এখনো। এটা তো এমনি এমনি টিকে নাই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বৃহৎ রেলব্রিজটিকে সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করে আসছে বলেই এখনো ব্রিজটি ভালো আছে। ব্রীজদিয়ে নিয়োমিত ট্রেন চলাচল করছে কোন রকম সমস্যা নেই।
পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ জানান, কে বা কারা রাতের অন্ধকারে আমাদের অবগত না করে কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় চিন্তাভাবনা না করে নিজেদের স্বার্থে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল। আমরা খবর পেয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজটি বন্ধ করেছি।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই রেলওয়ে কেপিআই স্থাপনার জায়গায় সড়ক স্থাপনার কাজ করতে পারে কিনা? এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবীর জানান, নদীর ঘাট এলাকায় রাস্তা নির্মাণের একটি বাজেট ছিল। আমি সেটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। যেহেতু সেখানে নদীর ঘাট আছে, রেল কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছেন, ঘাট এলাকার ওই রাস্তাটি আমরা অন্য কোনো নদীর ঘাট এলাকায় নির্মাণ করব।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাস জানান, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সড়ক স্থাপনার কাজ বন্ধ রাখার জন্য, কাজটি আপাতত বন্ধ আছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের ঘাট উন্নয়ন তহবিল হতে ঈশ্বরদীতে উপজেলা পরিষদকে এলজিইডির মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য ২৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় পদ্মা নদীর তীরে সাঁড়া ইউনিয়নের ‘সাঁড়া রানাখড়িয়া তড়িয়া মহল’ এবং পাকশী ইউনিয়নের ‘বামনগাঁও নৌকা পারাপার ঘাট’ উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কাজের টেণ্ডার আহব্বান করা হলে ঈশ্বরদীর মিলন মো. তন্ময়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বামনগাঁও নৌকা পারাপার ঘাট উন্নয়নের কাজ টেন্ডারে প্রাপ্ত হন।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের আয়োজনে গত ১১ জুন নবাগত ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নীচে নদীর ঘাট হতে ২০৭ মিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।
অনুমতি না নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত আরসিসি পিলারসহ নির্মাণাধীন অন্যান্য কাজ রেল কর্তৃপক্ষ গত ১৫জুন (বৃহস্পতিবার) গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার প্রশাসনের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, কোথাকার টেন্ডারের কাজ কোথায় করা হচ্ছে সেটা দেখার কি দরকার। রাস্তা নির্মাণ হলে পর্যটকদের যাতায়াতে সুবিধা হবে। অন্যরা বলছেন, হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকায় ব্যবসার জন্য এবং পাশে স্তুপিকৃত অবৈধ বালু মহলের বালু নির্বিঘ্নে পরিবহণের জন্য পরিকল্পনা করে এ রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাকশী প্রান্তের ব্রীজের নীচে ১ নম্বর গার্ডার হতে ৩ নম্বর গার্ডার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-২) বীরবল মণ্ডল বলেন, আরসিসি কলাম করে এবং ঢালাই দিয়ে যে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছিল সে কাজ আমরা ভেঙে দিয়েছি।
এ ঘটনার জন্য ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী শতভাগ দায়ী জানিয়ে ডিআরএম বলেন, এখন আমরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের অস্তিত্বের প্রশ্নের মুখোমুখি। হার্ডিঞ্জ ব্রিজকে রক্ষা করতে চাই। এ ঘটনায় থানায় এজাহার দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবীর বলেন, রাস্তা নির্মাণ কিছুই না, সিম্পল একটা জিনিস। ওইখানে একটা ঘাট রয়েছে। ঘাটে একটি যাত্রী ছাউনি এবং রাস্তার কাজ করছি। কাদার কারণে মানুষ হাটতে পারে না। রেলওয়ে কাজ করতে না দেওয়ায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। কাজ করতে না দিলে এটা আমরা অন্য ঘাটে স্থানান্তর করবো। তবে এসি ল্যান্ড অফিসে কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। শুনেছি ওই জায়গা রেলের না, নদীর খাস জমি। বামনগা ঘাট প্রসংগে তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গার কারণে ঘাট পরিবর্তন হয়। এখন আমরা যে ঘাট পেয়েছি সেখানেই কাজ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ বলেন, আমি নতুন এসেছি। প্রকৌশল বিভাগ থেকে ওইখানে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা বলা হলে গত রবিবার উদ্বোধন করা হয়। রেলওয়ের বাঁধার কারণে কাজ বন্ধ হয়েছে। এসিল্যান্ড অফিসকে বলা হয়েছে, ওই জায়গা আসলে কার সেটা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে। সার্ভেয়ারকে দিয়ে জরিপ করে পরবর্তীতে বিস্তারিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ততোদিন কাজ বন্ধ থাকবে।
কাজের ঠিকাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন মো. তন্ময় জানান, ইজিপি টেন্ডারে লটারির মাধ্যমে কাজ পেয়েছি। এটি আমার জীবনের প্রথম ঠিকাদারি কাজ। প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কথা বলে গত রোববার লেআউট দিয়ে কাজ শুরু হয়। এখন যেটা দাঁড়িয়েছে ওই জমি রেলের, না উপজেলার খাস জমি। এটাই দেখার বিষয়।
পাকশী ইউপির চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টু বিশ্বাস বলেন, আমরা রাস্তার কাজ হওয়ার পক্ষে। এখানে দেশ-বিদেশ হতে অনেক পর্যটক আসেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মা নদী ও পাকশীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হলে সেখানে চলাচল করা যায় না। এ যায়গায় রাস্তা হলে খুবই ভালো হয়। এটা হেভি কোনো রাস্তা না, যে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ক্ষতি হবে। শুধু পথচারীদের চলাচলের জন্য। জনপ্রতিনিধিসহ আমাদের এলাকার সকলেরই চাহিদা রাস্তা নির্মাণ হোক।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha