খুলনার ঐতিহ্যবাহী পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সোমবার ৫ জুন সকাল ১০ টার সময় উক্ত আয়োজনে এসডিজি বিভিন্ন গোল অর্জনে এবং নারী ও কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক তথ্য পরামর্শ প্রদান সহ বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান ও স্কুল পর্যায়ে প্যাড বক্স স্থাপন করা হয়। যাহার ফলে স্কুল পর্যায় কিশোরীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পাবে এবং স্কুল পর্যায়ে বিশেষ মুহূর্তে স্যানিটারি প্যাড সংগ্রহ করে সুস্থ থাকতে পারবে।
“২০৩০ সালের মধ্যে ঋতুস্রাবকে দৈনন্দিন জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।” -এটি বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল। ঋতুস্রাব বা মাসিকের কারণে কোনো নারী যেন তার স্বাভাবিক জীবনে পিছিয়ে না পড়েন তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই অপরাজিতা ও লাইটশোর ফাউন্ডেশন নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। মাসিক ও মাসিকের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর মে মাসের ২৮ তারিখ সারা বিশ্বে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস পালন করা হয়। তবে শুধু মাত্র মে মাস নয়, আয়োজনকারী সংস্থার উদ্দেশ্য বছরের সব মাসে নারীদের সুস্থতা ও সচেতনতা বাড়াতে এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হবে। এবং পর্যায়ক্রমে আরও ৫ টি স্কুলে প্যাড বক্স স্থাপন করা হবে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতা করেছেন সেনোরা বাংলাদেশ লিমিটেড, আউটরিচ পার্টনার হিসেবে সহযোগিতায় আছেন ভলেন্টিয়ার অপরচুনিটি, মিডিয়া পার্টনার হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাক ও রেডিও এফএম ৯৪.৮।
অনুষ্ঠানে খুলনা ইউনানী মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডাক্তার হাকিম মতিয়ারা বেগম বলেন, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অর্থাৎ সামগ্রিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নারীর প্রজনন জীবনে বিশাল ভূমিকা পালন করে। তাই দিবসটির উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে ঋতুস্রাব, মাসিক বা পিরিয়ডকালীন সময়ে স্বাস্থ্যসুরক্ষায় করণীয় এবং পিরিয়ডের সাথে সম্পর্কিত রোগের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ পিরিয়ড। এর সঙ্গে সন্তান ধারণের সক্ষমতা সম্পর্কিত। এই খুব স্বাভাবিক বিষয়টি এখনো বাংলাদেশে স্বাভাবিক আলোচনার বিষয় নয়। এখনো এ বিষয়গুলোকে গোপনীয়, একান্ত মেয়েলি বলে গন্য করা হয়। মাসিক নিয়ে অনেক কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত। তবে আশার কথা হলো বাংলাদেশে দিন দিন বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সাধারণত ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে নারীর পিরিয়ড শুরু হয় এবং ৫০ থেকে ৫২ বছর বয়স পর্যন্ত এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি চলে। এ সময়কালের মধ্যে নারীর সন্তান ধারণের সক্ষমতা থাকে।
তিনি পিরিয়ডকালীন শারীরিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে বলেন, বেশিরভাগ নারী ও কিশোরী মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখনো জনসমক্ষে কথা বলতে দ্বিধা করেন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন ফলোআপ সার্ভে ২০১৮ (প্রকাশিত ডিসেম্বর, ২০২০) অনুযায়ী বাংলাদেশে মাত্র ৫৩ শতাংশ স্কুলছাত্রী মাসিকের ব্যাপারে জানে। ৩০ শতাংশ ছাত্রী মাসিক চলাকালে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। ৩৪ শতাংশ কিশোরী স্কুলে মাসিকের সময় পুরোনো কাপড় ব্যবহার করে। মাত্র ৬২ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার করে। স্কুল না থাকলে কিংবা বাসায় থাকলে পুরোনো কাপড়ের ব্যবহার বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ৩৯ শতাংশ কিশোরী পুরোনো কাপড় এবং ৫৬ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে বলে জরিপে জানা যায়। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ কিশোরী ভালো পানি ও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে কাপড়গুলো পুনরায় ব্যবহার করে। মাত্র ২১ শতাংশ কিশোরী এ কাপড়গুলো বাড়ির বাইরে রোদে শুকাতে পারে। এই জরিপ থেকে বোঝা যায় মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় আমাদের নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে।
অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকা বৃন্দ অপরাজিতা যুব কল্যাণ সংস্থার সহ-সভাপতি মাসুদ পারভেজ, কার্যনির্বাহী সদস্য পিকু কুমার বাছাড়, মুন্নি আক্তার সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে কিশোরীদের মধ্যে কুইজ কম্পিটিশন ও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়টিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। এমন উদ্যোগকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে বিশাল উৎসাহ এবং ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়।