আশঙ্কাজনকভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বাঘা উপজেলার ও পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চলছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না। দিনের পর দিন পানির হাহাকার বাড়ছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর এলাকার সর্বত্র এই রমজান মাসে বিশুদ্ধ পানির জন্য রোজাদারদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেখানে পানি পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই ভিড় জমিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া পানি সংকটে পুকুরে গিয়ে গোসল করছে এলাকার অনেক মানুষ । খরতাপে গাছের আমসহ গ্রীষ্মকালীন ফল ঝরে পড়ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিককালে আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বেশ কিছু হস্তচালিত অগভীর নলকূপে পানি না উঠায় উপজেলা ও পৌরবাসীর মধ্যে পানির সমস্যা বিরাজ করছে।
জানা গেছে,২টি পৌরসভাসহ উপজেলায় অভীর নলকূপের সংখ্যা- সরকারি বেসরকারি(ব্যক্তিগত) মিলে বাইশ হাজারের বেশি। উপজেলার ওয়েবসাইডে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গভীর নলকূপের সংখ্যা ৪৫ টি ও অগভীর নলকূপের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪২৮টি। বাঘা পৌরসভায় ২হাজার ৪৮০টি নলকূপের মধ্যে ব্যক্তিগত ১৮০০ টি। আড়ানি পৌর সভার সহকারি প্রকৌশলী সহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে নলকূপের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাঘা পৌরসভার বাজুবাঘা গ্রামের গৃহবধূ জায়দা বেগম বলেন,গত ৩দিন ধরে তার বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। চাহিদা মেটাতে পাশের যে বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহ করছেন সেখানেও অল্প অল্প পানি উঠছে। রমজানে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
পৌরসভার উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, আমার বাসা বাড়ির টিউবওয়েলে ১৭০ ফুট পাইপ বসিয়েছি। এর পরেও পানি উঠছেনা। বাধ্য হয়ে জল মর্টার বসিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। যাদের বাড়িতে নলকূপের সাথে বিদুৎ চালিত মর্টার বসানো আছে,সেখানেও পানি উঠছেনা।
বাউসা টলটলি পাড়ার আবু রায়হান জানান,প্রয়োজন মেটাতে ধানক্ষেতে সেচ দেওয়া গভীর নলকূপ থেকে পানি ব্যবহার করে করছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের,বাঘা উপজেলার সহকারি প্রকৌশলী কে,এম নাসির উদ্দীন বলেন, কোথাও কোথাও ৩০ থেকে ৩৫ ফিট পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। পানির স্তর নিচে নামার কারণে হাত টিউবওয়েলে নিচু স্থান থেকে পানি সরবরাহ করতে পারে না। যারা ১২০ ফিট থেকে ১৩৫ র্ফিটের কম পাইপ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় নলকূপ স্থাপন করেছেন তাদেরই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ কারণে পানির জন্য আহাজারি চলছে। তবে সরকারিভাবে সাবমার্সিবল নলকূপে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ১৫০ ফিট পর্যন্ত পাইপের সংযোগ দেওয়া না হলে ভালো পানি পাওয়া যাবে না। সাবমার্সিবল নলকূপ ১৫০ ফিট পাইপ দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে। তারপরও পানির যেটুকু সমস্যা রয়েছে,বৃষ্টি হলে এই সমস্যা থাকবেনা। তবে সমস্যা যাতে দ্রুত সমাধান করা যায় এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
|
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে কৃষি, গৃহস্থালি এবং সুপেয় পানি পানের ক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বর্ষাকালে নদী-নালা, খালবিলের পানি সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু কৃষিতে পানির ব্যবহার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে যে সমস্ত ফসলে সেচ কম লাগে সেই ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমেও পানির স্তর ঠিক রাখা যায়। বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল উৎপাদন করতে কৃষকের সেচ খরচ বেশি লাগছে। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।##
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha