খন্দকার সাইফুল নড়াইলঃ নড়াইলের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রামসিদ্ধি ও ডহর রামসিদ্ধি পাশাপশি দুটি গ্রাম। জেলার একমাত্র এই এলাকাতেই তৈরী হয় কাঠের নৌকা।
বিক্রিও হয় ওই এলাকাতেই। প্রতি বুধবার বসে নৌকার হাট। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এই ৩ ঘন্টা চলে বেচাকেনা। প্রতি হাটে গড়ে ৮০ থেকে ১০০টি নৌকা বিক্রী হয়। প্রতিটি নৌকার দাম সাড়ে চার হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা।
বুধবার (১০ অগাষ্ট) ভোরে হাটে গিয়ে দেখা যায়, ১৩৭ নং ডহর রামসিদ্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে রাস্তার পাশে প্রায় শ’খানেক নৌকা সারিসারি ভাবে রাখা আছে বিক্রির জন্য। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসেছেন নৌকা কিনতে। এছাড়া রয়েছে নৌকা ব্যবসায়ীরা। এরা এখান থেকে সস্তায় নৌকা কিনে নিয়ে আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেশি বিক্রি করে থাকেন।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় এখন মোট ১৬টি পরিবার নৌকা তৈরির কাজ করে। প্রতিটি কারখানায় ৩ থেকে ৫ জন কারিগর কাজ করেন। শনি থেকে মঙ্গলবার এই ৫দিনে একেকটি কারখানায় সাধারন মানের ৫/৬টি নৌকা তৈরি হয়। এখানে তৈরি হয় টালাই, আলকাটা পানশী, পইদেল জেলে ডিঙ্গি ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ মাগুরায় কৃষক লীগের শোকসভায় প্রধান অতিথি এমপি সাইফুজ্জামান শিখর
অনেক সময় ক্রেতা সরাসরি অর্ডার দিয়ে তাদের চাহিদা মতো নৌকা তৈরি করিয়ে নেয়। সেক্ষেত্রে নৌকার সাইজ ও কাঠের ধরণের উপর নির্ভর করে একটি নৌকা বানাতে ৫/১০ সময় লেগে যায়। দামে পড়ে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার পর্যন্ত।
বর্ষাকালের দুই মাস আগে থেকে শুরু হয়ে ভাদ্র-আশ্বিণ মাস পর্যন্ত চলে নৌকা তৈরির কাজ। তবে এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। সেকারনে নৌকার চাহিদা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন তারা।
কথা হলো সত্তরোর্দ্ধো অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবিন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সাথে। তিনি জানালেন, কমপক্ষে দেড়শত বছর আগে থাকে তাদের পরিবার নৌকা তৈরীর কাজ করে আসছে। ঠাকুরদা মৃত অভয় চরণ বিশ্বাস শিখেছিলো তার বাবার কাছ থেকে। এরপর বাবা মৃত রাজেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও একই কাজ করতেন। তাদের থেকে তিনিও শিখেছিলেন নৌকা তৈরি। ছাত্রাবস্থায় একাজ করতেন। বর্তমানে তার ভাই এ ব্যবসা সামলান।
নৌকা তৈরির কারখানার মালিক ডহর রামসিদ্ধি গ্রামের হরেন বিশ্বাস জানান, তিনি গত বছরও প্রতি হাটে ৭/৮ খান নৌকা বিক্রি করতেন। কিন্তু এবার বিলে বেশি পানি না থাকায় ৪/৫টির বেশি বিক্রি করতে পারছেন না। এছাড়া কাঠের দাম বৃদ্ধি ও একাজে ব্যবহৃত লোহার পাতামের দাম বৃদ্ধি পাওয়া নৌকা বিক্রি করে তেমন লাভ ও হচ্ছে না।
যশোর জেলার অভয়নগর থানার চঁন্দ্রপুর গ্রামের নৌকা ব্যবসায়ী জাবেদ শেখ বলেন, আমি এখান থেকে প্রতি হাটে ৬ খান করে নৌকা কিনি। এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে আমার নৌকা প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ হয়।
কালিয়া উপজেলার ফুলদাহ গ্রামের ক্রেতা রুকু ফকির জানান, তিনি ৫ হাজার টাকা করে ১টি টালাই ও ১টি পইদেল নৌকা কিনেছেন। এবার গতবারের তুলনায় দাম বেশি। এসব মানের নৌকা গতবছর ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যেত।
নৌকা বিক্রেতা ডহর রামসিদ্ধি গ্রামের শুশিয়ান মল্লিক জানান, তিনি ৫টি নৌকা এনেছিলেন হাটে। ৪টি বিক্রি করেছেন। একটি বিক্রি না হওয়ায় এখানে রেখে যাবেন। পানি কম হওয়ায় ভরা মৌসুমেও এবার নৌকার চাহিদা কম।
কারিগর শ্রীকান্ত বিশ্বাস বলেন, একটি টালাই বা পইদেল নৌকা বানাতে ৭ থেকে ৮ সেফটি কাঠ লাগে। ৩ জন মিলে কাজ করলে একটি নৌকা বানাতে একদিন সময় লাগে। একজন কারিগরের দৈনিক মূজুরী ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আর সহকারির ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
গত প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে নৌকার হাট বসলেও নেই কোন সরকারি তদারকি বা ইজারার ব্যবস্থা। গ্রামবাসী মিলে একটা কমিটি করে দিয়েছে। সেখান থেকে হরেন বিশ্বাস নামের একজন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রশিদের মাধ্যমে টাকা তোলেন। তিনি জানান, সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে নৌকা প্রতি ১০০ টাকা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০টাকা করে নেওয়া হয়। এ টাকা স্থানীয় মন্দির ও সারা বছর ধরে এখানকার ধর্মীয় কাজে ব্যয় করা হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে ভারতের কলেজ ছাত্রী শ্রীঘরে
নড়াইল বিসিক-এর উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেব। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা যা কার প্রয়োজন তা করা হবে।
খন্দকার সাইফুল
নড়াইল
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha