কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গ্রামীণ সাংবাদিকতার জনক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নারী শিক্ষার অগ্রায়ণে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০ জুলাই বুধবার দুপুরে কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর মিলনায়তনে কর্মসূচির অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাদুঘরের সচিব গাজী মো. ওয়ালি উল হক। মূখ্য আলোচক ছিলেন কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিশির কুমার রায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কুমারখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক মাসুদ রানা, কবি ও সাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কুমারখালী সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরের এক্সপ্লোরেশন অফিসার ওবায়দুল্লাহ।
এসময় কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আইয়ুব, কবি ও নাট্যকর লিটন আব্বাস, কবি আব্দুস সাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৮৩৩ সালের ২০ জুলাই নদীয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া) কুমারখালী উপজেলার কুন্ডপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন কাঙাল হরিনাথ। গানে ‘কাঙ্গাল’ নামে ভণিতা করতেন বলে এক সময় কাঙাল শব্দটি তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
হরিনাথ (১৮৩৩-১৮৯৬) সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বাউল গান রচয়িতা। তার প্রকৃত নাম হরিনাথ মজুমদার, কিন্তু কাঙ্গাল হরিনাথ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। কাঙ্গাল ফিকিরচাঁদ বা ফিকিরচাঁদ বাউল নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন।
শৈশবে স্থানীয় ইংরেজি স্কুলে হরিনাথের লেখাপড়া শুরু হয়, কিন্তু আর্থিক কারণে তা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। ১৮৫৫ সালে বন্ধুদের সহায়তায় তিনি নিজ গ্রামে একটি ভার্নাকুলার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং গ্রামের সাধারণ লোকদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে সেখানে অবৈতনিক শিক্ষকরূপে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরের বছর তারই সাহায্যে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
আরও পড়ুনঃ বাগমারায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী যৌন হয়রানির মামলা হয়েছে
গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাদের শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে হরিনাথ সারাজীবন আন্দোলন করেছেন। অত্যাচারিত এবং অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় লিখতেন, পরে ১৮৬৩ সালে তিনি নিজেই গ্রামবার্তা পপ্রাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক ও শেষে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও কৃষকদের প্রতি তখনকার নীলকর ও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হতো। ফলে ব্রিটিশ সরকার এবং স্থানীয় জমিদারদের পক্ষ থেকে তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু তিনি নির্ভীকভাবে তার দায়িত্ব পালন করে যান। এসব কারণে পত্রিকাটি তখন বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে।
হরিনাথের জীবনে কখনও সচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু তা সত্তে¡ও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১৮৭৩ সালে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক কারণে এবং সরকারের মুদ্রণ শাসনব্যবস্থার কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে হয়।
হরিনাথ ছিলেন ফকির লালন শাহর শিষ্য। তিনি আধ্যাত্মবাদ প্রচারের জন্য ১৮৮০ সালে ‘কাঙাল ফিকির চাঁদের দল’ নামে একটি বাউল দল গঠন করেন। বাউল গানের ক্ষেত্রে হরিনাথের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি বহুসংখ্যক বাউল গান রচনা করেন এবং সেগুলি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি সহজ ভাষায় ও সহজ সুরে গভীর ভাবোদ্দীপক গান রচনা করতেন এবং সেগুলি সদলে গেয়ে বেড়াতেন। ‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো, পার কর আমারে’ তাঁর একটি বিখ্যাত গান। ১২৯০-১৩০০ বঙ্গাব্দের মধ্যে তিনি কাঙাল ফিকিরচাঁদ ফকিরের গীতাবলী নামে ১৬ খন্ডে বাউল সঙ্গীত প্রকাশ করেন। হরিনাথ শুধু গানেই নয়, গদ্য ও পদ্য রচনায়ও পারদর্শী ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ দুপুরে বিয়ে, সকালে আত্মহত্যা
সাহিত্যচর্চায় হরিনাথের শিষ্যদের মধ্যে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, দীনেন্দ নাথ রায় এবং জলধর সেন পরে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। হরিনাথের মোট গ্রন্থ ১৮টি। তন্মধ্যে উলেখযোগ্য কয়েকটি হলো: বিজয়বসন্ত (১৮৫৯), চারুচরিত্র (১৮৬৩), কবিতাকৌমুদী (১৮৬৬), বিজয়া (১৮৬৯), কবিকল্প (১৮৭০), অক্রূর সংবাদ (১৮৭৩), সাবিত্রী নাটিকা (১৮৭৪), চিত্তচপলা (১৮৭৬), কাঙালের ব্রহ্মান্ডবেদ (১৮৮৭-৯৫), মাতৃমহিমা (১৮৯৬) ইত্যাদি। মৃত্যুর পর তাঁর রচনাসমগ্র হরিনাথ গ্রন্থাবলী (১৯০১) নামে প্রকাশিত হয়। ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha