নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশের অবস্থা একসময় রমরমা ছিল। সেই রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্বে একটি ছোট ঝুপড়ি ঘরে শামীম ১৯৮৮ সালে প্রথম লাল (রং চা) দিয়েই চায়ের দোকান শুরু করে। সময়টা এখন থেকে ৩৪-৩৫ বছর আগে। এরপর থেকে সে একটানা ভাবে চা বিক্রি করে যাচ্ছেন শামীম। সাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশন আগের মত আর জমজমাট নেই। স্টেশন মাষ্টারের অফিস এখন তালা বদ্ধ। একসময় স্টেশনটিতে লোকাল ও মেইল ট্রেন থামতো। লোকজন থাকতো চা বিক্রি ভালো হতো। এখন শুধু খুলনা, রকেট ও উত্তরা মেইল ট্রেন দুটি থামে। টিকেট সংগ্রহের ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের পদচারণা কম।
এরপরও শত প্রতিকুলতার মধ্যে টিকে আছে শামীম মিঞার চায়ের দোকান। শামীম মিঞার বয়স এখন ৫০ বছর। বাড়ি আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা গ্রামে। ৩৫ বছর ধরে চা বিক্রি করছে শামীম। সংসারে তার বাবা-মা কেউই জীবিত নেই মারা গেছেন। দারিদ্রতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। শামীম মিঞা তাই আক্ষেপ করে বলেন, আমি চা বিক্রি করে সংসার চালায়। কিন্তু আমার সন্তানদের আমি সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। তারা যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ৬ষ্ঠ ও মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। ওই ঝুপড়ি ঘরে চা বিক্রি করেই তার ছেলে মেয়ের লেখাপড়া ও পুরো পরিবারের খরচ জোগান। বর্তমানে সে সাবলম্বী।
শামীম মিঞার চায়ের একটি সুনাম রয়েছে। শামীম মিঞার চায়ের দোকান সাহাগোলা স্টেশনের ঐতিহ্য। নিজ জেলা নওগাঁ সহ, বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলা জুড়ে এ চায়ের সুনাম রয়েছে। ট্রেনের যাত্রী না হলেও বিভিন্ন অঞ্চল ও দুর-দুরান্ত থেকে চা পিপাসুরা চা পান করার জন্য ছুটে আসেন শামীমের সেই ঐতিহ্যবাহী চায়ের দোকোনে। কেউবা আসেন মটরসাইকেলে, সি.এন.জিতে আবার কেউবা আসেন ট্রেন যোগে এসে তার দোকানের এক কাপ চায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ সালথায় দুই সন্তানের জননী চাচীকে নিয়ে ইউপি সদস্য উধাও
গত বুধবার সাহাগোলা স্টেশনে শামীম মিঞার চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, শামীম মিঞা চা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তিনি জানান, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে তার দোকানে সে চা বিক্রি করে থাকেন। সে আরো বলেন, প্রতিদিন তার দোকানে চায়ের জন্য ৭০-৮০ কেজি দুধ যোগান দিতে হয়। চাপাতা লাগে ১ থেকে দেড় কেজি। চিনি লাগে ১৮-২০ কেজি। প্রয়োজনীয় দুধ পার্শ্ববর্তী গ্রাম পীড়পাড়া, খাঁপাড়া, সরদারপাড়া ও মসজিদপাড়া থেকে সংগ্রহ করে থাকে।
শামীম মিঞা দুঃখ করে বলেন, জ্বালানীর দাম বেশী হওয়ায় লাভের অংকটা কম। শামীম মিঞার দোকানের চায়ের সম্পর্কে তারাটিয়া মস্টারমাইন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ডি.এস জাহিদুল ইসলাম জানান, শামীম মিঞার দোকানের চা পানে তৃপ্তি আনে মনে। তার দোকানের চায়ের প্রশংসা সর্বজন স্বীকৃত। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদেও নির্বাচিত সদস্য মোঃ মসলেম উদ্দিন শাহ জানান, শামীম মিঞা দীর্ঘদিন যাবৎ সাহাগোলা স্টেশনে চা বিক্রি করে আসছেন। তার হাতের চায়ের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha