ইস্রাফিল হোসেন ইমনঃ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লাভজনক লিচু চাষ। কম খরচে অধিক মুনাফার আশায় প্রতি বছরই কৃষকরা ঝুঁকছেন এই চাষাবাদের দিকে। তবে চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়ার অভাবে এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে আশানুরূপ ফলন হয়নি, ফলে চাষিদের কপালে হতাশা জমেছে। 'প্রকৃতির রসগোল্লা’ খ্যাত লিচুর ফলন নিয়ে এবার চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভেড়ামারার লিচু বাগানি চাষিরা।
কম খরচে বেশি মুনাফার আশায় কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে ঝুঁকছেন এই ফল চাষে। তবে চলতি বছর অনাবৃষ্টি এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় হতাশ চাষিরা।
উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়াড়, রামকৃষ্ণপুর, গোলাপনগর, বাহিরচর ইউনিয়নের ৬৮পাড়া গ্রামে, বারদাগ, মুন্সিপাড়া, জুনিয়াদহ, ধরমপুর, চাঁদ গ্রামে ব্যাপকভাবে লিচুর চাষ হয়ে থাকে। এসব এলাকায় মোজাফফরি জাতের পাশাপাশি গুটি, বোম্বাই এবং চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাষ চোখে পড়ার মতো।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় প্রায় শতাধিক বাগানে ৯৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মোকারিমপুরেই রয়েছে ৪০ হেক্টর জমি। তবে চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে মাত্র ৪.১ টন।
ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের লিচু বাগান মালিক মোমিন জানান, গত কয়েক বছর ধরে তিনি লিচু আবাদ করছেন। এ বছর ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় একটি বাগান কিনেছেন। শুরুতে কিছুটা ঝুঁকি মনে হলেও এখন তিনি এটিকে লাভজনক মনে করছেন। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বছর ফলন সন্তোষজনক হয়নি বলে জানান তিনি।
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আকছেদ বলেন, প্রতিটি লিচুর সংগ্রহ মূল্য ৬০/৭০ পয়সা হলেও কীটনাশক, শ্রমিক, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি লিচুর গড় খরচ প্রায় ২ টাকা।
পাবনা ও কুষ্টিয়া থেকে আসা মৌসুমী শ্রমিক শাওন জানান, প্রতিদিন ১৫-২০টি গাছ থেকে গড়ে প্রায় ২ হাজার লিচু সংগ্রহ করেন এবং দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকা মজুরি পান।
ইসলামপুর গ্রামের জহুরা খাতুন জানান, প্রতি বছরই তিনি লিচু চাষ করেন এবং ভালো দাম পাওয়ায় এই চাষে তার আগ্রহ বাড়ছে। এখানকার লিচু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় বলেও জানান তিনি।
একই গ্রামের কৃষক নবীর আলী মণ্ডল বলেন, লিচু চাষে একটু বেশি পরিচর্যা প্রয়োজন হলেও একবার বাগান তৈরি করলে কয়েক বছর ফলন পাওয়া যায়। তাই অনেক কৃষক এখন ধান বা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে লিচু চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা জানান, এ বছর বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হওয়ায় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলনও কম হয়েছে। তবে প্রযুক্তি নির্ভর পরিচর্যা এবং জলসেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।