শামীম আহমেদঃ
জৈষ্ঠ্যের রোদ যেন কারও মান ভাঙাতে জানে না। গাঁয়ের চারপাশে কৃষ্ণচূড়ার লাল ঝলকানি, আর মাঝেমাঝে পাখির ডাক। পুকুরের জলও বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।
.
বট গাছের ছায়ায় বসে আছে নবীরন বিবি, বয়স ষাট ছুঁইছুঁই। হাতে পুরোনো সুতো বোনা পাখার ডাঁটি, ধীরে ধীরে বাতাস করছে নিজের মুখে। বারবার তার চোখ চলে যাচ্ছে উঠোনের কোণায় রাখা মাটির ডালায়—তাজা হিমসাগর আমের স্তূপ। এই আমগুলোই যে ওর ছোট ছেলে, তন্ময়ের পাঠানো।
.
তন্ময় শহরে চাকরি করে। বিয়ের পরে স্ত্রী আর বাচ্চা নিয়ে ঢাকায় থিতু হয়েছে। আগের মতো বছরে তিনবার গ্রামে আসা হয় না, এখন বছরে একবারও আসে না। তবুও মায়ের কথা ভুলে যায়নি—প্রতি জৈষ্ঠ্য মাসে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেয় মিষ্টি গন্ধমাখা আমের ঝুড়ি।
.
আজ সকালে আমগুলো হাতে পেয়ে নবীরন বিবি’র বুকটা হু হু করে উঠেছিল। ছোটবেলায় তন্ময় ছিল গ্রামের সবার আমচোরদের নেতা। পাকা হিমসাগরের গন্ধ পেলেই আমবাগানে হানা দিত ছেলেটা। ধরা পড়লে মায়ের কাছে এসে আশ্রয় নিত, নবীরন বিবি ছেলেকে বকাঝকা করে বাঁচিয়ে দিত।
.
স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে নবীরন বিবি একটা পাকা আম তুলে নিল। নরম হলুদ ছালের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল সোনালি রস। এক কামড় দিতেই মনে হল—এ যেন তন্ময়ের শৈশব, ওর দুষ্টুমির স্বাদ।
হঠাৎ পেছন থেকে ডাক এল—
"চাচি! ফোনটা ধরো, তন্ময় ফোন করেছে!"
প্রতিবেশী ছেলেটা ছুটে এল ফোন হাতে। কানে ফোন তুলে নবীরন বিবি কাঁপা গলায় উত্তর —
"হ্যাঁ রে বাবা, পেয়েছি তোমার পাঠানো আম… খাচ্ছি… যেন তোর ছোঁয়া পাচ্ছি!"
ওপাশ থেকে তন্ময় হেসে বলল—
"মা, এবার কোরবাণীর ঈদে আসব, কথা দিলাম। তখন তোমার হাতের রান্না আর আমবাগানের আম দুটোই খাব।"
নবীরন বিবি ফোন নামিয়ে হাসল। রোদের তাপ কমেনি, আমের রসও শেষ হয়নি, তবুও জৈষ্ঠ্যের দুপুরটা হঠাৎ মিষ্টি ঠান্ডা লাগল…!
লেখকঃ শামীম আহমেদ
কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।