মোঃ মনোয়ার হোসেনঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯ শ ২৪ জন মানুষের বসবাস। এখানে গরীব, চাষী, ধনী- বিত্তবানদের মধ্যে আছে এক বিরাট বৈষম্য। নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ চাষী, জেলে ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো বিচারহীনতায় ভোগেন।সমাজ ব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব থাকায় শেষ ভরসা আইনের আশ্রয়। খোদ,আইন ব্যবস্থায়ও চলে প্রভাবশালীদের রাজত্ব। গরিবের অভিযোগেই শেষ হয় তাদের বিচার ব্যবস্থা। দিনমজুর মানুষেরা নিপিড়ীত, নির্যাতিত হয়ে অভিযোগের কপি নিয়ে ঘুরতে থাকে থানার দুয়ারে দুয়ারে। মামলার আশায় কয়েকদিন ঘুরে পড়েন অর্থ সংকটে।ফিরে যায় দৈনন্দিন কাজের জীবন মোহনায়। মামলা আর হয় না অপরাধের বিরুদ্ধে।
.
এর কারণ হিসেবে বলছিলেন মামলা করতে না পারা মানসুরা বেগম। উপজেলার মাটিকাটা এলাকার মহব্বতপুর গ্রামের মানসুরা প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম সহ তার পরিবারের লোকজনের হাতে নির্যাতনের শিকার হোন। মেরে আঙুল ভেঙে দেয় মানসুরার। গত ২২ এপ্রিলের ঘটনায় মানসুরার বাবা সোরপ আলি বাদি হয়ে অভিযোগ করেন গোদাগাড়ী থানায়। কিন্তু মামলা করতে পারেননি তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে আপোষ করে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা আইনি ব্যবস্থা চান।মামলা করতে না পেরে এতে সোরপ আলি মেয়ে মানসুরাকে বাদি করে রাজশাহীর আদালতে মামলা করেন।
.
একই ইউনিয়নের কাদিপুরের প্রবাসী নারী রোকশানা বেগম তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে ভূমিদস্যুদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন ১১ এপ্রিল। ঐ প্রবাসী নারীর পিঠে ও চোখে ছিলা ও কালশিরা পড়ে যায়। তিনিও থানায় ঘুরে ঘুরে বুকে পাথর চেপে বাড়ি ফেরেন। সমাজেও বিচার পাননি তিনি। অতি দরিদ্র হওয়ায় বিচারহীনতার শিকার হওয়ার কথা জানান রোকশানার মা । নেপথ্যে জড়িত ছিলেন, সম্প্রতি ৬.৫ কেজি হেরোইন সহ যৌথ বাহিনির হাতে আটক হওয়া মাদারপুরের মাদক সম্রাট তারেক।
.
এদিকে গোদাগাড়ীর উজানপাড়া এলাকার ফতা বেগম লিখিত অভিযোগ ছাড়ায় মৌখিক অভিযোগে জমির কার্যক্রম বন্ধ করে দেন গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই কুদ্দুস। বলেন,ফতা বেগমের সাথে আপোষ করে কাজ করবেন নয়লে ধরে নিয়ে চালান দিবো। ফতা একবার জমিতে এসেই বুঝতে পারেন তিনি জমি পাবেন না। পরবর্তীতে উপজেলার পুষুন্ডা এলাকার ঐ জমি নিয়ে ফতা নিজেই আর উপস্থিত হননি। পরে জমির মালিক এসআই কুদ্দুসের সাথে থানায় দেখা করতে গেলে কুদ্দুস বলেন, আমাকে ঘুমের ঔষধ দেন আমি ঘুমায় আর আপনারা কাজ করেন।আমি আর যাবো না বাঁধা দিতে। ৫ মে সোমবার বিকেলে থানার দ্বিতীয় তলায় ডেকে এ কথা বলেন কুদ্দুস ।এছাড়াও গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার ডাইংপাড়া মোড় থেকে গাঁজা বিক্রেতা রফিককে ২০০ গ্রাম গাঁজা সহ গ্রেফতার করেন। এসময় রফিকের কাছে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন।
.
গোদাগাড়ীর ওসি রুহুল আমিনের এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। গরীবের মামলা না নেওয়া, হয়রানি, থানায় স্বেচ্ছাচারিতা, মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, গভীর রাতে মাদক সম্রাটদের সাথে গোপন বৈঠক সমস্ত অভিযোগের তীর গোদাগাড়ীর ওসি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। তার গত পহেলা বৈশাখে আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে নাচে মত্ত থাকার একটি ভিডিও এসে পৌছায় এই প্রতিবেদকের হাতে। উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক নাচের অনুষ্ঠানে গোদাগাড়ী ১ নং ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসিদুল গণি মাসুদ ও পাকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি জালাল উদ্দীনের সাথে নাচে মত্ত ছিলেন। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।
.
নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ওসি যেন নিরপেক্ষতা বজায় রাখে এবং আইনি সহায়তা দিয়ে সকল স্তরের জনগণকে সহযোগিতা করেন এটা আমি চাই।
.
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও নিক্সন গ্রুপের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক বলেন, যদি মামলা না নিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি খুব খারাপ। এটা হওয়া উচিত না।
.
সহকারী পুলিশ সুপার গোদাগাড়ী সার্কেল মীর্জা মোঃ আব্দুস ছালাম বলেন, আমার তো মামলা নিতে বলা আছে।যদি ওসি মামলা না নেয় আমার কাছে পাঠাবেন। আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।