আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুরের কেশরহাট পৌর এলাকার বিদ্রিকায় ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয় ও ফসলি মাঠে অবস্থিত এএমএম নামের অবৈধ ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায়, ভাটা সংলগ্ন মাঠে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এতে কৃষকদের স্বপ্ন ভঙ্গ। ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় প্রতি বছরই কমবেশী ফসলহানীর ঘটনা ঘটছে।ঘনবসতিপূর্ণ ও ফসলি মাঠেে মধ্যে এই ভাটা কোনোভাবেই চালানোর সুযোগ নাই। ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও ইট তৈরীতে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরা মাটি (টপসয়েল) ব্যবহার করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যর সর্বনাশ করা হচ্ছে। অথচ নাম মাত্র জরিমানা করে ভাটা চালানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
.
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবত এই অবৈধ ইট ভাটা বন্ধের দাবি করে আসছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ভাটা বন্ধে এখানো কোনো কার্যক্রর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।কৃষকেরা বলছে,অবৈধ এই ইট ভাটা বন্ধ করা না হলে তারা আন্দোলন কর্মসুচি দিতে বাধ্য হবেন।
জানা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩-এর ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলার মাটি কেটে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। এই আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, যিনি এই আইনের ৫ ধারা লঙ্ঘন করবেন, তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
.
এছাড়াও দেশের সব অবৈধ ইট ভাটা ও ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার উচ্চ আদালত বন্ধের নির্দেশ দিলেও তোয়াক্কা করছেন না এএমএম ইট ভাটা মালিক বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
.
এদিকে ২০২৫ সালের ১৯ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়ম না মেনে এএমএম ইটভাটা পরিচালনা করার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।কিন্ত্ত তার পরেও এএমএম ইট ভাটা বন্ধ হয়নি।ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভাটা মালিক আমজাদ দিগর প্রভাব খাটিয়ে ভাটা চালাচ্ছেন।এই ইট ভাটার আগুনে পুড়ে ধান, পান, পটল ও বেগুনসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
.
ওদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ ফসল নস্টের বিষয়টি জানতে পারেন। গত ২৬ এপ্রিল শনিবার কৃষি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ পরিদর্শন করেন।
অন্যদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিদ্রিকা এলাকার ৭ হাজার ১০৪ হেক্টর ধান এর মধ্যে ৫৮ কৃষকের ১৯ দশমিক ৮ মেট্রিক টন ক্ষতিগ্রস্ত আর্থিক ক্ষতি ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, এক হাজার ৩১৭ হেক্টর পান এর মধ্যে ৭ পানচাষীর দশমিক পঞ্চাশ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত আর্থিক ক্ষতি ২৫ হাজার টাকা, ২০৪ হেক্টর পটল এর মধ্যে ১২ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার টাকা, ৫১ হেক্টর বেগুন এর মধ্যে ৭ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ১২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা।
.
এছাড়াও ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতি ছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলদ গাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে। ফল ঝরে পড়েছে। ধোঁয়া বন্ধ হলেও বিষাক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এখনও নতুন ফসলের ক্ষেতসহ গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
.
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বিদ্রিকা এলাকার প্রভাবশালী আমজাদ, হাজি সিরাজ ও গিয়াস উদ্দিনের মালিকানাধীন এএমএম অবৈধ ইট ভাটার কারণে ফসলের খেত পুড়ে গেছে। কৃষকদের দাবি ভাটায় অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারের কারণে তৈরি হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধান খেতসহ অন্যান্য ফসল পুড়ে গেছে।
.
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, বুক ভরা আশা নিয়ে তারা এবার জমিতে ধান, পান চাষসহ বিভিন্ন ফসল করেছিলেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় তাদের স্বপ্ন শেষ। তারা বলেন, ইট ভাটার ধোঁয়া ছড়ানোর কারনে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি আমাদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমন অনবিরত ধোয়ার কারনে আমদের শরীরে অচিরেই ফুসফুসের সমস্যায় শ্বাসকষ্ট, লিভার অকেজ, কাশি, টিবি ও কিডনির রোগ এবং ক্যনসারসহ নানান মরনব্যধি রোগে ভুগতে হবে। আমরা এমন অবৈধ ভাটা চিরতরে বন্ধ চাই।
.
স্থানীয় ধানচাষী কৃষক নজরুল, মিরাজ, সবুজ, সেলিম, সুজন, কাওসার, দুলাল বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ভাটার আগুনে পুড়ে গেছে। এখন আমরা পরিবার নিয়ে সারা বছর কি খাবো সে চিন্তায় আছি। আমরা এর প্রতিকার চাই। পানচাষী জসিম, সিরাজ, আজাহার, রুস্তম বলেন, পানগাছে ছয়ইন্চি গোড়া পঁচা রোগে আমরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত এর উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ইট ভাটার আগুনে নষ্ট হল পান বরজ। এক্ষতি কোনভাবেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না। বসতবাড়ি এলাকায় অবৈধ ইট ভাটা দ্রুত বন্ধ করা জরুরি। কয়েক গ্রামের মানুষের কান্না এই অবৈধ ইট ভাটা।এতো ঘটনার পরেও এই ইট ভাটা কি ভাবে চলছে সেটা তাদের বোধগম্য নয়, ভাটা বন্ধে কৃষি ও পরিবেশ উপদেষ্টার তারা জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
.
এবিষয়ে এএমএম ইটভাটার মালিক পক্ষের গিয়াস উদ্দিন বলেন, ফায়ার ম্যানের ভুলের কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রয়োজনের দ্বিগুণ জ্বালানি ব্যবহারের কারণে এঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ঘনবসতি ও ফসলি মাঠে কিভাবে ইট ভাটা চলছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদোত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
.
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘এ ঘটনায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।