আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, তানোরে বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো, তার কিছুটা কম চাষ হয়েছে, তবে ফলন এবং দাম দুটোই বেশ ভালো আছে। ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় ৮০ শতাংশ পাকলেই সেই ধান কেটে নেয়া হচ্ছে। তবে প্রচণ্ড তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে ধানকাটা শ্রমিকদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। স্থানীয় শ্রমিকের সংকটে বহিরাগত শ্রমিকের কদর বেড়েছে।
রাজশাহীর শস্যভাণ্ডার খ্যাত তানোর উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সিংহভাগ মাঠে এখন বোরো ধানের সবুজ আভা কেটে হলুদ বরণ ধারণ করে পাকতে শুরু করেছে। বোরো ধানের সোনালি শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। পাকা ধান ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, ধানের চারা রোপণ থেকে শুরু করে শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল রয়েছে। এ কারণে ধানক্ষেতে রোগ-বালাই ছিল কম। ধান কাটা-মাড়াই পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের চৌকির ঘাট, রাতৈল, দেওতলা, বেড়লপাড়; তানোর পৌরসভার কালীগঞ্জহাট, মাসিন্দা, হাবিবনগর, আকচা, বুরুজ, ভদ্রখন্ড, জিওল, চাঁদপুর, আমশো, মুথরাপুর, তাতিয়ারপাড়া, গোল্লাপাড়া, কুঠিপাড়া, গুবিরপাড়া, সিন্দুকাই, ধানতৈড়, চাপড়া, গোকুল; তালন্দ ও কলমা ইউনিয়নের কুজিশহর, চন্দনকোঠা, আজিজপুর গ্রামের বিলের জমিতে ধান কাটা চলছে। এছাড়াও কামারগাঁ ইউনিয়নের কামারগাঁ, দমদমা, শ্রীখন্ডা, মজুমদার পাড়া, বাতাসপুর, কৃষ্টপুর, পারিশো দূর্গাপুর, মাড়িয়া, মাদারিপুর, ভবানীপুর, জমসেদপুর ও মালশিরা বিলের জমিতেও ধান কাটা শুরু হয়েছে।
তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় মহল্লার কৃষক মুনসুর রহমান বলেন, অনেকের ধান কাটা হয়েছে, কিন্তু মাড়াই হয়নি। তার ছোট ভাই আফসার দুই বিঘা জমির ধান মাড়াই করে ২০ মন করে মোট ৪০ মন ফলন পেয়েছেন। যাদের নিজস্ব জমি, তাদের রোপণ থেকে মাড়াই পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকা করে খরচ হয়। আর যারা লীজ নিয়ে আবাদ করেছে তাদের বিঘাপ্রতি খরচ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে সময়মতো রোপণ ও উত্তোলন করতে পারছেন বিল পাড়ের কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোরে চলতি মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে, তবে চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়নি। তানোরের বিলকুমারী বিলের চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়ন থেকে কামারগাঁ ইউনিয়ন পর্যন্ত আগাম বোরো চাষ হয়েছে ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ দশমিক ৮০০ মেট্রিক টন। গত ১৫ মার্চের আগে যেসব জমিতে ধান রোপণ করা হয়, সেগুলো বোরো আবাদ হিসেবে ধরা হয়। আর ১৫ মার্চের পরে যেসব জমিতে রোপণ করা হয়, সেগুলোকে আউশ চাষাবাদ হিসেবে ধরা হয়েছে। এবারে ৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, বোরো রোপণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বিলের বোরো ধানে রোগবালাই তেমন ছিল না। দু'এক জায়গায় হলেও মাঠকর্মীদের সঠিক পরামর্শে তা দূর করা হয়েছে। আশা করছি বরাবরের মতো এবারও বিলের জমিতে ভালো ফলন হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।