আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) সংসদীয় আসনের চার বারের সাংসদ, দুই বারের মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। বিগত ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল রোববার ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সেদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চত্ত্বর, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে তার জানাজার নামাজ শেষে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিজ গ্রামে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কেল্লাবারুই পাড়ায়। সর্বশেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গোদাগাড়ী কলেজ ও পৌরপার্ক মাঠে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই ব্যক্তির জানাজায় উপস্থিত ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার লক্ষাধিক মানুষ। গোদাগাড়ী ফাজিলপুর পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
আমিনুল হক রাজশাহীর পদ্মারধারে গোদাগাড়ী পৌরসভার বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক কেল্লাবারুই পাড়া গ্রামে ১৯৪৩ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রাক্তন শিক্ষক মরহুম ফাহিম উদ্দিন বিশ্বাস, মা মরহুমা আনোয়ারা খাতুন। আট ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার ভাই-বোন সবাই দেশ-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। সেজন্য সত্তর দশকের শেষ দিকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মরহুমা আনোয়ারা খাতুনকে রত্নগর্ভা উপাধিতে ভূষিত করেন।
শিক্ষাজীবনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
আমিনুল হক লেখাপড়া শেষ করে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে, ঢাকা ‘ল’ কলেজে এবং আইন পেশার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বারো বছর শিক্ষকতা করেন। দুইবার সিভিল সার্ভিস পদে চান্স পান। কিন্তু প্রশাসনের যে বিভাগে তিনি (কাস্টমস) সুযোগ পান, সেটা পছন্দ মতো না হওয়ায় তিনি সরকারি চাকরিতে জয়েন করেননি।
ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময় আমিনুল হক তখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। মিছিলে অংশ নিতে স্কুল থেকে বেড়িয়ে পড়েন। মিছিল ছত্রভঙ্গ করবার জন্য পুলিশ ধরপাকড় করলে আরও অনেকের মতো তিনিও আটক হন। ষাটের দশকে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। তিনি ভাসানী ন্যাপের অনুসারী। ঊনসত্তরের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের কারণে আমিনুল হকের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা হয়েছিল। পাক সরকারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশ ত্যাগ করে লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য যান।
আমিনুল হক ১৯৭১ সালে লিন্কন-ইনে ছাত্র হিসাবে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। ‘৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে লন্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে অনশনে অংশ নেন।
আমিনুল হক লন্ডনের লিন্কন ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রী অর্জন ও পড়ালেখা শেষ করে ১৯৭৬ সালে দেশে ফিরেন।
১৯৭৭ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘জাগদল’ গঠন করলে তিনি জাগদলে যোগ দেন। জাগদল বিলুপ্ত হয়ে বিএনপি গঠিত হলে তিনি তাতে যুক্ত হন।
১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছালে সেই বছর ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নিকট। শাহাবুদ্দিন সরকার ১৯৯১ সালে দেশের সকল দলকে নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে সংসদীয় ভোট দেয়।
সে ভোটে প্রথমবার গোদাগাড়ী-তানোর থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক। জাতীয় সংসদের রাজশাহী-১ আসনে প্রদত্ত মোট বৈধ ভোটের শতকরা ৭০ শতাংশ পেয়ে তিনি নির্বাচিত হন। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত বিএনপি সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরে সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, যেখানে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একই বছরের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ৮৩,৯৯৪ ভোট পেয়ে পুনরায় বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী পান ২৮,৯৯১ ভোট।
২০০১-২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করলে ব্যারিস্টার আমিনুল হক টি অ্যান্ড টি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ব্যারিস্টার আমিনুল হক ছিলেন একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।