আব্দুস সালাম তালুকদারঃ
ছবি দেখে মনে হতে পারে, ফটোশপ করা ধানখেত বা দূর থেকে দেখে মনে হবে, ধানের খেতে বুঝি কোনো রোগ লেগেছে অথবা পোকার আক্রমণে সারা খেতের ধান বেগুনি হয়ে গেছে। আসলে এর কোনোটিই নয়। এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতার রংটাই বেগুনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে গোমস্তাপুর মাদ্রাসা মোড়-নাচোল সড়কে গ্রামীণ পিচঢালা সড়কের দুপাশে যে দিকেই চোখ যায় শুধুই সবুজের সমারোহ।
.
মাঠের পর মাঠ চাষ করা হয়েছে বোরো ধান। গোমস্তাপুর মাদ্রাসা মোড় থেকে নাচোল যেতে ২/৩ কিলোমিটার এগিয়ে রহনপুর পৌর এলাকার পিড়াশন গ্রামে পৌঁছাতেই পথচারীদের চোখ আটকে যায় বেগুনি ধান ক্ষেতে।
.
এ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। সবার আলোচনার বিষয় বেগুনি এই ধানক্ষেতকে ঘিরে। যা দেখাচ্ছে দিনবদলের স্বপ্ন। উপজেলায় এই প্রথম ১৮ শতক জমিতে দুলালী সুন্দরী জাতের বেগুনি ধান ও ২৭ শতক জমিতে ব্লাক রাইস জাতের বেগুনি ধান চাষ করেছেন মোঃ রবিউল ইসলাম নামে এক চাষি। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে।
.
সরেজমিন তার বেগুনি ধান ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে মাঠের পর মাঠ বোরো ধান। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে শিষসহ ধানগাছ গুলো। দূর থেকে মনে হয় ঢেউ খেলছে। বিস্তীর্ণ সবুজের মধ্যে শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের ধান ক্ষেত। এই বেগুনি রং প্রকৃতিতে এনেছে নতুনমাত্রা।
এখানে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে অসংখ্য দর্শনার্থী।
.
মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, প্রথমত মোবাইলে ইউটিউব দেখে বেগুনি ধানের রঙ ও গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পেরে এ ধান চাষে উদ্ধুদ্ধ হই। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সুদূর গাইবান্ধা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ২ কেজি বেগুনি রঙের দুলালী সুন্দরী ও ৩ কেজি বেগুনি রঙের ব্লাক রাইস ধান বীজ সংগ্রহ করি ১৫০০ টাকায়। চলতি বোরো মৌসুমে তা থেকে চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ করছি। ১৮ শতক জমিতে বেগুনি রঙের দুলালী সুন্দরী ও ২৭ শতক জমিতে বেগুনি রঙের ব্লাক রাইস রোপন করি।
.
এ ধানের চারা ২৫/৩০ দিন পর জমিতে রোপণের নিয়ম থাকলেও তা সময় মতই চারা রোপণ করা হয়েছে। আসা করছি ফলন ভাল হবে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযুক্ত হয়ে যাবে । চলতি বোরো মৌসুমে মোট ৪৫ শতক জমিতে দুই জাতের ধান থেকে প্রায় ৩৫/৪০ মণ ধান প্রত্যাশা করছে। এ ধান চাষে কোন মৌসুম সবচেয়ে বেশি ভাল তা নিশ্চিত হতে সামনের আমন মৌসুমেও তিনি বেগুনি ধান চাষ করবেন বলে জানান। বেগুনি ধানের পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি জানান, এটা নতুন ধান। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা আমার নেই। সে কারণে স্বাভাবিক অন্যান্য ধানের মত করেই জৈবসার-কীটনাশকসহ অন্যান্য পরিচর্যা করা হচ্ছে।
.
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো ফলন পেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে বেগুনি ধানচাষের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশীসহ এলাকার অনেক চাষি আমার জমির দিকে নজর রাখছে। এবং আমার কাছে বীজ চাচ্ছে। আমার সফলতা দেখলে তারাও এ ধান চাষে আগ্রহী হবে।
.
সাইফুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, আমি ধান দেখেছি সবু রঙের কিন্তু আমার জীবনে কখনও এই বেগুনি রঙের ধান দেখিনি এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি বেগুনি রঙের ধান তাই দেখতে এসেছি। আমি এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে আগামী আমন মৌসুমে এই ধান চাষ করবো।
.
পার্শ্ববর্তী চৌডালা ইউনিয়নের ওমর আলী নামে এক কৃষক খবর পেয়ে এই ধান দেখতে এসে বলেন, আমি বেগুনি রঙের ধান কখনও দেখিনি তাই দেখতে ও জানতে এসেছি যদি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বেশি হয় তবে আগামিতে আমি বীজ সংগ্রহ করে এই বেগুনি ধানের চাষবাদ করবো।
.
রহনপুর পৌর এলাকার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাকিব উদ্দিন জানান, রহনপুর এলাকার পিড়াশন ব্লকে মোঃ রবিউল ইসলাম নামে এক কৃষক তার নিজ উদ্যোগে দুলালী সুন্দরী ও ব্লাক রাইস নামে বেগুনি রংঙের দুইটি ধান চাষ করেছে। ধানের জাত দুটি আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আমরা তাকে সর্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি। এই ধানের জাত দুটি কাটা ও মারায়ের পর যদি ফলন ভালো পাওয়া যায় তবে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ধানের জাত দুটি সম্প্রসারণের উদ্বেগ গ্রহণ করবো।
.
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার জানা, এইবার উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখানে উফসী ধানের জাতের সাথে সাথে স্থানীয় ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। ইদানিং দুই তিন বছর থেকে দেখা যাচ্ছে এই উপজেলার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে বা বিভিন্ন মাধ্যমে নতুন নতুন কিছু সম্ভবনাময় জাত নিয়ে তারা চাষ করছে। ব্লাক রাইস জাতের ধানটা প্রায় দুই বছর ধরে স্বল্পপরিসরে এই উপজেলা চাষ হয়ে আসছে। তবে চলতি বোরে মৌসুমে মোঃ রবিউল ইসলাম নামে এক কৃষক বেগুনি রঙের দুলালী সুন্দরী ধানের জাতটি এই উপজোয় এই প্রথম চাষ করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ব্লাক রাইস ধান চাষ করেছেন। গাইবান্ধা জেলা থেকে নিজ উদ্যোগে বীজ সংগ্রহ করে তিনি এই দুই জাতের ধান চাষ করেছেন।
.
এই ধান গাছের আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্য কৃষক ও মানুষকে আকৃষ্ট করছে তা হলো এই ধান গাছের গোড়া থেকে পাতাগুলো বেগুনি রঙের। বর্তমান আবহাওয়ায় পোকা মাকড়ের উপস্থিতি খুবই কম। কৃষকরা নির্বিঘ্নে এই ধান চাষা-আবাদ করতে পারছে। তিনি আরো জানান, আমরা এই জাতের ধান দুটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি এটি কৃষকদের কিভাবে উন্মোদান করেছে তাদের আকৃষ্ট করেছে। এটির ফলন যদি ভাল হয় এবং পুষ্টিগুণ থাকে ও গ্রহণযোগ্যতা পায় তবে এটি কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণ করা যাবে। এছাড়াও আমরা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কে অবগত করেছি, তিনারা যদি জানান, এই অঞ্চলের আবহাওয়া সাথে চাষ উপযোগী । সে ক্ষেত্রে আমরা সামনে বড় পরিসরে কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের চেষ্টা করব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।