রবিউল ইসলাম রুবেলঃ
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় সরকারি খাল দখল করে তিনতলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটানো এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে। শুক্রবার সকালে তারা মানববন্ধন করে দখলদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
.
অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আকবর হোসেন মুন্সি (আকু)। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে স্থানীয় প্রভাব ব্যবহার করে সরকারি খালের জায়গা দখল করে সেখানে তিনতলা ভবন নির্মাণ করেছেন।
.
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, কমলেশ্বরদী মাঠ থেকে শুরু হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি কুমার নদীতে গিয়ে মিশেছে। খালটি ওই এলাকার শত শত হেক্টর কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ। এটি শুধু বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা রোধেই নয়, শুষ্ক মৌসুমে জমিতে চাষের উপযোগী পরিবেশ বজায় রাখত।
.
কিন্তু খালটির একটি বড় অংশ দখল হওয়ায় পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জমিতে পানি জমে থাকছে, যা চাষাবাদে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে। কৃষকরা দাবি করছেন, সরকারের কৃষি সহায়তা ও উদ্যোগ তখনই বাস্তবায়ন সম্ভব, যখন কৃষকের মৌলিক অবকাঠামো রক্ষা পাবে।
.
ক্ষুব্ধ কৃষকরা জানান, খালটি দখলের কারণে প্রতিবছর তারা চাষাবাদে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কেউ কেউ বিকল্প পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করলেও তা ব্যয়সাধ্য এবং অস্থায়ী সমাধান।
.
স্থানীয় কৃষক ইসরাইল কাজী মানববন্ধনে বলেন,"প্রাকৃতিক জলপথ ধ্বংস হলে কৃষক বাঁচবে কীভাবে? এই খাল আমাদের প্রাণ। এটা উদ্ধার না হলে আমরা ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে যাব।"
.
আরেক কৃষক নাজিম উদ্দীন বলেন, "সরকার যেখানে কৃষি উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে, সেখানে প্রভাবশালী মহলের এমন দখলদারিত্ব সরকারের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।"
.
শুক্রবার সকাল ১০টায় দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী চরপাড়া বাজারে পাঁচ শতাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, অবিলম্বে সরকারি খালটি দখলমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ খনন কার্যক্রম চালাতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
.
তারা বলেন, "আমরা স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এই অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আমাদের কৃষি, পরিবেশ এবং জীবিকা রক্ষায় এটি এখনই করতে হবে।"
.
এই বিষয়ে প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি এখনও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। এলাকাবাসী আশাবাদী, বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
.
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী আকবর হোসেন মুন্সি আকু সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
"আমি কোনো সরকারি খাল দখল করিনি। যেখানেই ভবন নির্মাণ করেছি, সেটি আমার নিজস্ব জমি। বরং আমি অতিরিক্ত তিন হাত জায়গা ফাঁকা রেখেছি, যাতে পানি চলাচলে কোনো রকম সমস্যা না হয়। বাস্তবে এখন আর ওই স্থানে খালের কোনো অস্তিত্ব নেই—খালটি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।"
.
"আমি কি পাগল নাকি, সরকারি জায়গায় ভবন করব? আমি ইসলামী মাইন্ডের লোক। কারো জমি দখল করে যদি আমি বসবাস করি, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে সেই অন্যায়ের জবাব দিতে হবে—এই ভয় আমার সবসময় কাজ করে।"
.
নিজের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আকবর হোসেন বলেন, "আমি কোনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি না। আমার খালাতো ভাই মোশারফ হোসেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হলেও আমি তার মতো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমি বরং বিএনপি মাইন্ডের লোক। তাই রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রশ্নই আসে না।"
.
তিনি আরও বলেন, "সরকার যদি খাল খননের উদ্যোগ নেয়, আমি তাতে পূর্ণ সমর্থন জানাই। আমি চাই এলাকায় পানি চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। প্রশাসন যদি প্রকৃতভাবে কোনো সরকারি জায়গা উদ্ধার করতে চায়, আমি তাতে সহযোগিতা করব।"
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।