মোঃ মনোয়ার হোসেনঃ
সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্থানীয় জনসাধারণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে অবশেষে বদলি করা হয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিতর্কিত উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানকে। অসামাজিক কাজ ও নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বদলি করা হয়েছে ।
৯ এপ্রিল (বুধবার) রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উম্মে কুলসুম সম্পা স্বাক্ষরিত এক আদেশে হাফিজুর রহমানকে চারঘাট ও সংযুক্ত হিসেবে বাগমারায় বদলী করা হয়। তিনি এর আগেও চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের দ্বায়িত্বে ছিলেন। সংযুক্ত হিসেবে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রদান করছিলেন।
উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানে এহেন অপরাধে শুধুমাত্র বদলী করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গোদাগাড়ী উপজেলাবাসী।
ঘটনার সূত্রপাত, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। স্থানীয় জনগণ হাফিজুর রহমান ও ইউএনও'র বাসার কাজের মেয়ে রুবিনার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন। উপজেলার রূপালী ভবনের দ্বিতীয় তলায় আপত্তিকর অবস্থায় তাদের আটক করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। এতে উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।
এই ঘটনার সংবাদ প্রকাশের দীর্ঘ সময় পর হাফিজুর ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ রয়েছে, গোদাগাড়ী থানার ওসি রুহুল আমিন এবং বর্তমান ইউএনও ফয়সাল আহমেদের প্রত্যক্ষ মদদেই এই মামলা দায়ের করা হয়। অসামাজিক কাজে লিপ্তের ঘটনা প্রকাশের পর পহেলা মার্চ হাফিজুর গোদাগাড়ী মডেল থানায় কোনো তদন্ত ছাড়ায় ওসিকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপর সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ অব্যাহত রাখলে ওসি ও ইউএনও'র পরামর্শে আবারো ৬ এপ্রিল আদালতে আরও দুটি মামলার আরজি দাখিল করেন অসামাজিক কাজে জড়িত সেই রুবিনা।
মামলা প্রত্যাহার ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের গেটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও জনসাধারণ।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, একজন দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত না করে বদলি করে সাময়িক সমাধান দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নই, তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ওই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার প্রতিনিধি—সাইফুল ইসলাম (আমার দেশ), জামিল (কালবেলা), আব্দুল খালেক (সংগ্রাম), সারোয়ার সবুজ (উপচার), আবু তাহের (সময়র আলো), মানিক হোসেন (মানবকণ্ঠ), মনিরুল ইসলাম (নববাণী) এবং অলিউল্লাহ (জনকণ্ঠ)। এছাড়াও অংশ নেন রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠে আসে। ১৮ আগস্ট ২০২৪ সালে ১৭৫৬ নম্বর ডকেটে তার বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম ও নারীসংক্রান্ত ঘটনায় অভিযোগ জমা পড়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে।
মানববন্ধনে বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, “শুধু বদলি নয়—এই মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং ইউএনও ফয়সাল আহমেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে আরো কঠোর আন্দোলনে নামবে সাংবাদিক সমাজ ও জনগণ।”
এ বিষয়ে রাজশাহী'র জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন গোদাগাড়ী'র স্থানীয় সাংবাদিকরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।