ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
আমার আব্বাও নাই, ভাইও নাই, মার অবস্থায়ও ভালো না। কাকা, ওরা মারা গেছে। আমি হাসপাতালে আছি, আমি এহন কি করব। এভাবে মুঠোফোনে হাসপাতালের সিঁড়িতে বসে কেঁদে কেঁদে কোনো এক স্বজনকে (চাচা সম্বোধন) বলছিলেন মো. সাহেদ সরদার। বাবা, ভাইকে হারিয়ে ও মা মৃত্যুপথযাত্রী থাকায় শোকে পাগলপ্রায় তিনি।
.
আজ (মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুন্ডা এলাকায় ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাহেদ সরদারের বাবা জোয়ার সরদার (৬৫) ও ছোট ভাই ইমান সরদার (৩৫)। এ ঘটনায় তার বৃদ্ধ মা পারুলী বেগম গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তারা জেলার নগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
.
এছাড়া এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক রয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
.
জানা যায়, নিহতদের মধ্যে সাহেদ সরদারের বাবা, মা ও ছোট ভাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছিলেন অসুস্থ এক স্বজনকে দেখতে। খাবার রান্না করেও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সে মেডিকেলেই এসেছেন কিন্তু লাশ হয়ে।
.
খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন বড় ছেলে সাহেদ সরদার। এসেই তিনি বাবা ও ভাইয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি স্বজনদের মুঠোফোনে জানাচ্ছিলেন এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা। বলতে বলতে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায় তাকে।
.
সাংবাদিকদের দেখতেই লোকাল বাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরের রাস্তায় ড্রাইভারদের কারণে অনেককেই জীবন দিতে হচ্ছে। কিছু ড্রাইভার লাইসেন্স ছাড়া, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালায়। এদের দেখভালের কেউ নেই। সে কারণে আমাদের মা-বোনের প্রাণ যাচ্ছে। এরাতো পরিবহনে উঠে কোনো পাপ করে নাই।’
.
তিনি বলেন, ‘এ ড্রাইভারদের ভুলের কারণে আমার অলরেডি দুজন মারা গেছে, আমার মাও মৃত্যুর মুখে। আজ যদি ড্রাইভাররা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালাতো, তাহলে আমার বাবা ও ভাই মারা যেত না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
.
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ফারাবি এন্টারপ্রাইজ নামে লোকাল বাসটি বাখুন্ডা এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর সেটি সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে উল্টে পড়ে যায়। তাতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
.
আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লাসহ প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ।
.
এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, এ দুর্ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন ও সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.
তিনি আরো জানান, এছাড়া নিহত প্রতিটি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে বিআরটিএর মাধ্যমে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।