রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ
গত ৯মার্চ দৈনিক সময়ের প্রত্যাশায় "নাটোরের লালপুর এখন ইমো হ্যাকারদের অভয়ারণ্য, আটকদের মুক্ত করতে আছে গোপন সংগঠন" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর নতুন করে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। অবশেষে দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় পর ইমো হ্যাকিংয়ের স্বর্গরাজ্য নাটোরের লালপুরে অভিযান চালিয়ে ৪ ইমো হ্যাকারকে আটক করেছে যৌথবাহিনী।
.
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত ২টার দিকে দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা সেবন অবস্থায় ছইমুদ্দিনের ছেলে হ্যাকার উজ্জ্বল (২৩) ও লালন (২১) এবং মোস্তফার ছেলে মাহফুজকে (২০) আটক করা হয়। শুক্রবার দুপুরে আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে হ্যাকিংয়ের সদর দপ্তর উপজেলার বিলমাড়িয়া গ্রামবাসীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার (২৬ মার্চ) দিবাগত রাতে একটি সুসংগঠিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতারক চক্র ও ইমো হ্যাকার গ্রুপের অন্যতম সদস্য মোঃ বিলাত হোসেনের ছেলে মোঃ সোহেল রানাকে (২৮) ৬ টি স্মার্টফোন, ১০টি বাটন ফোন, ১৪টির বেশি রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোবাইল সিমসহ আটক করে লালপুর থানায় সোপর্দ করে সেনাবাহিনী। পরের দিন বৃহস্পতিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন লালপুর থানার ওসি মোঃ নাজমুল হক।
.
তবে চিহ্নিত এসব মাদকসেবী ও হ্যাকারকে ১৫১ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
.
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় উপজেলার বিলমাড়িয়া ও দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের কিছু সংখ্যক কিশোর ও যুবক ইমো হ্যাকিং চক্রের সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে উপজেলার অনেক উঠতি বয়সী কিশোর, যুবক ও ঝরে পড়া স্কুল শিক্ষার্থীরা ইমো হ্যাকিংয়ে জড়িত।
.
অভিযোগ আছে সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়া ও প্রশাসনের নিরবতায় ২০১৪ সাল থেকে লালপুরে নির্ভয়ে ইমো হ্যাকিং চলে আসছে। মাঝখানে ২০২২ সালে গণমাধ্যমে ইমো হ্যাকিং নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় হ্যাকিং কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তবে রহস্যময় কারণে অভিযান বন্ধ হয়ে গেলে হ্যাকিং কার্যক্রম দ্রুত পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
.
লালপুরের এক ইলেকট্রিসিয়ান বলেন, তাদের গ্রাম ও পাশের গ্রামের ঝরে পড়া অনেক শিক্ষার্থী, ইজিবাইক ও পাওয়ার টিলার চালকরা ইমো হ্যাকিং করে এখন কোটিপতি। সেই টাকায় তারা উচ্চমূল্যে জমি, দামি গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি করেছে। অথচ ১ বছর আগেও তারা কিংবা তাদের অভিভাবকরা দিন মজুর ও ভ্যান চালানো কাজ করতো।
.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হ্যাকার বলেন, তারা সাধারণত প্রবাসী ও ধনী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করে কৌশলে তাদের ইমো কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেন। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নম্বর ব্যবহার করে থাকেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টরা ২০ - ৩০% কমিশনে হ্যাকারদের টাকা উত্তোলনে সাহায্য করে।
.
আরেক হ্যাকার বলেন, 'হ্যাকিংয়ের সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশরাও জড়িত। প্রতি মাসে তাদের চাঁদা দিতে হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম মুরসিদ (লিটু সিকদার) মোবাইল: 01728 311111