আব্দুল হামিদ মিঞাঃ
মধ্য বিত্তের ঘরে ফল এখন অনেকটাই অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। পরিবর্তন এসেছে খাদ্য তালিকায়। মানুষ দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফলও বেশি খায়। এতে খাদ্য তালিকায় বাড়ছে ফলের চাহিদা। গত কয়েক বছরে বাজারে দেশি-বিদেশি ফলের সমাহারও বেড়েছে। ইফতারিতেও আগের চেয়ে মানুষের ফল খাওয়া বেড়েছে।
চাষি ও ভোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,কয়েক দশক আগেই ফল মানেই ছিল গ্রামের বাড়ির আঙিনা ও চারপাশের ফল-ফলাদির গাছ। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল আরও কতকি। তখন বাণিজ্যিকভাবে দেশে খুব বেশি ফল উৎপাদিত হতো না। এখন সেই চিত্র বদলে গেছে।
বাণিজ্যিকভাবে আম, লিচু, পেয়ারা, জাম, তরমুজ, বেল, কমলা, মাল্টা, ডালিম ও কলাসহ প্রায় সব ধরনের দেশি ফল ব্যাপকহারে উৎপাদিত হয়। সেই সঙ্গে বিদেশি ফল উৎপাদনও শুরু হয়েছে। এই তালিকায় আছে- ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মাল্টা, রকমেলন, বেদানা,ইত্যাদি।
এখন সেই চাষের হাল ধরেছেন চারঘাটের পুটিমারি গ্রামের স্কুল শিক্ষক আতাউর রহমান। তিনি সমকালকে বলেন, মানুষের মধ্যে এখন ফল খাওয়া বেড়েছে। বিশেষ করে দেশে উৎপাদিত ফলে আগ্রহ অনেক বেশি। ফলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আম,লিচুর পাশাপাশি ২বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করেছেন।
এদিকে রমজানে বেড়ে গেছে দেশি-বিদেশি ফলের চাহিদা। সেহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফলের চাহিদা বাড়ায় বাজারে সব ধরনের দেশি ফলও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম নিয়ে আপত্তি বেশিরভাগ ক্রেতার। তাদের ভাষ্য মতে, রমজান শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে এসব ফলের দাম বেড়েছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) সরেজমিন,উপজেলার বাঘা বাজার, আড়ানি ও মনিগ্রামসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে,দোকানে থরে থরে সাজানো দেশি-বিদেশি ফল। নতুন করে এসেছে তরমুজ। বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল, কমলা ও আঙুরের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। তবে দেশি ফলের দিকেই ঝুঁকছেন ক্রেতারা।
বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। পিস হিসাবে মাঝারি সাইজের একেকটি তরমুজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং বড়গুলো ৫০০ টাকার উপরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ছোট সাইজের প্রতি কেজি বেদানা ৪০০ টাকা,বড় সাইজের ৫৫০ টাকা,আঙুর প্রতিকেজি ৩০০ টাকা,পেয়ারা ৬০ টাকা ,আনারস ৪০ টাকা,আপেল ২৮০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা,মাল্টা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা,কমলা ২৮০ টাকা,ট্রবেরি ৫০০ টাকা.খেজুর নরম্যাল ২০০ টাকা,মিডিয়াম ৪২০ টাকা,১কেজি ওজনের প্যাকেট খেজুর ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা সহনীয় পেয়ারার দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। একশ টাকার নীচে মিলছেনা বেল। খুব বড় সাইজের বেল আবার ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চায়না লেবু ৪০ টাকা হালি,মাঝারি আকারের ডাব ১২০ টাকা,বড় সাইজের পেঁপে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
শাহদৌলা সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল হানিফ বলেন, একশ টাকার নিচে দেশীয় ফল কিনতে পারছি না। সদস্য সংখ্যা বেশি হলে একটা তরমুজ কিনতে লাগবে প্রায় পাঁচশ টাকা! দাম বেশি হলেও বাজার ঘুরে দেশি-বিদেশি ফল কিনে বাড়ি ফিরলেন প্রভাষক আব্দুল হানিফ।
রবিউল নামের এক ক্রেতা বলেন, পরশু ৫০ টাকায় পেয়ারা কিনেছি। আজ আবার ১০ টাকা বেশি চাচ্ছে। একই ভাবে ৬০-৮০ টাকার পেঁপের দাম এখন ১০০-১৫০ টাকা। প্রকার ভেদে প্রতি ডজন সাগরকলা ৭০ থেকে ১০০ টাকা আর চাম্পা কলার ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। এসব কলার দাম ডজন প্রতি ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
তারা বলেন, বেশি মুনাফার জন্য রমজানে ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এগুলো সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম ছাড়া আর কিছু নয়।
বিক্রেতাদের দাবি, মূলত বিদেশি ফলের দাম বেশি থাকায় এর প্রভাব পড়েছে দেশি ফলের বাজারে। তবে রমজানে সব ফলের দাম খুব বেশি বাড়েনি। ফল বিত্রেতা সাঈদ হোসেন জানান, রোজার আগে প্রতি কেজি আঙুরের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। আরেক ফল বিক্রেতা মাহাবুল জানান, আপেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
শাহদৌলা সরকারি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (অবঃ) আব্দুল মান্নান বলেন, গত একযুগে মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার প্রবণতা দ্বিগুণ হয়েছে। তার মতে , একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ২হাজার ১৩২ক্যালরি খাবার গ্রহণ এবং অন্যান্য খরচ জোগাড় করতে পারলেই ওই ব্যক্তিকে আর গরিব হিসেবে ধরা হয়না। আর মোটা দাগে ১১ধরনের খাবার খেলে দৈনিক ২হাজার ১৩২ক্যালরি পাওয়া সম্ভব। তবে প্রতিদিন সব খাবার এক সঙ্গে খেতে হবে, তা নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপজেলা অফিসার আসিফ ইকবাল বলেন, গত একযুগ আগে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে যত গ্রাম ফল খেত, এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, দেশি ফলের চাষের পাশাপাশি বিদেশি ফলও চাষ হচ্ছে তার উপজেলায়। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে দেশি ফলের উৎপাদন ও বাজার দুটিই বেড়েছে। ফলে কৃষকেরা দেশি-বিদেশি উভয় ফলের চাষে ঝুঁকছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম মুরসিদ (লিটু সিকদার) মোবাইল: 01728 311111