-শামীম আহমেদ
রমজান মাস চলছে। বিকেলের মৃদু রোদ জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। ছোট্ট তামান্না জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। আকাশের এক কোণে সাদা-ধূসর মেঘ জমে আছে। তার চোখে একরাশ উত্তেজনা। আজ সে মায়ের সঙ্গে ইফতারির জন্য পিঁয়াজু বানাবে।
তামান্নার বয়স মাত্র আট বছর। এই বয়সেই সে মায়ের কাজে সাহায্য করতে খুব পছন্দ করে। রোজার মাস এলেই তার মন ভরে যায় আনন্দে। সকালবেলা যখন মা আর বাবা সেহরির জন্য উঠে, তখন তামান্নাও জেগে যায়। মা তাকে বারবার বলে, "তুমি ছোট, তোমার রোজা রাখার দরকার নেই।" কিন্তু তামান্না জেদ করে বলে, "আমি বড়দের মতো রোজা রাখব।"
আজ তার প্রথম পূর্ণ রোজা। সকালে ঘুম থেকে উঠে সে ঠিকই সেহরি খেয়েছে। সারাদিন সে একবারও পানি চায়নি। মা বারবার বলেছে, "তুমি ক্লান্ত হয়ে গেলে পানি খেতে পারো। আল্লাহ তোমার চেষ্টা দেখেছেন।" কিন্তু তামান্না একগাল হেসে বলেছে, "না মা, আমি শেষ পর্যন্ত রোজা রাখব।"
বিকেলে মা যখন পেঁয়াজ কাটছিলেন, তামান্না বলল, "মা, আমিও বানাতে পারি?" মা মৃদু হেসে বললেন, "এসো, শেখো।" তামান্না এক হাত দিয়ে পিঁয়াজু মিশ্রণ বানাতে লাগল। হাত থেকে মাঝে মাঝে মিশ্রণ পড়ে যাচ্ছিল। মা হেসে বললেন, "শুধু হাতের স্পর্শ ঠিক করলেই হবে।"
ইফতারের সময় ঘনিয়ে এল। টেবিলে সাজানো খেজুর, ছোলা, বেগুনি, পিঁয়াজু আর ঠান্ডা শরবত। বাবা, মা, আর তামান্না একসঙ্গে বসে আছে। আজানের ধ্বনি ভেসে এল। মা খেজুর তুলে তামান্নার হাতে দিলেন। তামান্না খেজুর মুখে দিয়ে হাসল। বাবা মৃদু হেসে বললেন, "মাশা আল্লাহ! আজ তুমি পুরো রোজা রেখেছ!"
তামান্নার মন ভরে গেল আনন্দে। তার ছোট্ট মনটা যেন পূর্ণ হয়ে গেল এক অদ্ভুত শান্তিতে। মনে হচ্ছিল, সে সত্যিই বড় হয়ে গেছে। রোজার এই স্মৃতি সে কখনো ভুলবে না।
লেখক- শামীম আহমেদ
-কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম মুরসিদ (লিটু সিকদার) মোবাইল: 01728 311111