বাদশাহ মিয়াঃ
নদীর বালু কেটে সরকারি খাস জায়গায় ভরাট। হাট-বাজারের ভূমি বন্দোবস্তে এসিল্যান্ড তহশিলদার তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটেছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন মুকসুদপুর উপজেলার এসিল্যান্ড মো. গোলাম মোস্তফা ও জলিরপাড় ইউনিয়নের সহকারী তহশিলদার রিমন বিশ্বাস।
তথ্য বলছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে জলিরপাড় কুমার নদের (বিলরুট ক্যানেল) থেকে বালু উত্তোলন করে, খাস সম্পত্তিতে চলছে বালু ভরাট কাজ। জলিরপাড় ব্রিজ এলাকায় লাগোয়া হাইওয়ে সড়কের পাশে সরকারি খাস সম্পত্তিতে হাট-বাজারের ভূমি বন্দোবস্ত দিতে ২৬০ টাকার সেলামী মূল্য দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখে। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগে এমন দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ভূমি বন্দোবস্তে জায়গা ভরাট ও দোকান নির্মাণের নামে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আর এসিল্যান্ডের যোগসাজসে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাগাভাগির গুঞ্জন উঠেছে। আবার একটি মহল তাকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করতে অর্থাৎ এসিল্যান্ড ও স্থানীয় মহলকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী তহশিলদার রিমন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ খুলছেন অনেকে।
জলিরপাড় এলাকার ভুক্তভোগীরা অভিযোগে দাবি করেছেন, উপজেলার জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ২৫ বছর ধরে পাউবোর জমিতে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পাউবোর ওই জমি পুনঃগ্রহণ (রিজুম) করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসক। ২০১৭ সালে পেরিফেরীভুক্ত হয়ে নকশা বের হয়। ২০২৪ সালে লীজ কেসের মাধ্যমে ২৯ ব্যবসায়ীকে ওই সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়।
সরকারি নির্দেশে সড়কের পাশের পেরিফেরীভুক্ত জমি থেকে দোকানপাট নিজ দায়িত্বে ভেঙে সরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ওই জমি সড়ক বিভাগের কাজে না লাগায় পূর্বের ভোগদখলীয় ব্যবসায়ী ডিসিআরের নবায়নের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করেন। নতুন করে আরও একাধিক ব্যক্তি ওই ভূমি বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
এ সুযোগে সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের সহযোগিতায় নদী থেকে (বিলরুট ক্যানেল) বালু উত্তোলন করে ওই জমি ভরাট করছেন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গোপনে ডিসিআর দিয়েছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গেল ১ মার্চ সহকারী কমিশনার মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তফা সহকারী তহশীলদার রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জলিরপাড় ভূমি অফিসে ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন।
সভায় তিনি হাট-বাজারের ভিটি বন্দোবস্ত নিতে তাকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সেলামী দিতে হবে বলে ‘নির্ধারণ’ করে দিয়েছেন। যেখানে সরকার নির্ধারিত সেলামী বছরে মাত্র ২৬০ টাকা। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
জলিরপাড় বাজারের শহীদুল, তৌহিদ শেখ, লিপি বেগমসহ একাধিক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ডিসিআর নিয়ে ওই জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করে খাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় আমাদের ঘর ভেঙে ফেলতে হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভিটি প্রতি আড়াই লাখ টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
এ বিষয় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম মুরসিদ (লিটু সিকদার) মোবাইল: 01728 311111