মোঃ মনোয়ার হোসেনঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা ও সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্বে থাকা পশ্চিমাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনী এক নারীতে জিম্মি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে মর্মে বেনামী চিঠিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ সালের স্বাক্ষরিত রাজশাহী পশ্চিম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহী, হাবিলদার, এএসআই, এসআইসহ কর্মচারীদের পক্ষে এ লিখিত অভিযোগ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা ও সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত চীফ কমান্ডেন্ট রাজশাহী অফিসের অধীন কয়েক হাজার বাহিনীর সদস্য ও কর্মচারী দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, দুশ্চরিত্রবান নাহিদা আক্তার এর কাছে জিম্মি। নাহিদা আক্তার পশ্চিম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অফিসের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। তিনি ফ্যাসিস্ট আ'লীগ সরকারের আমলে তার আপন ভাই রেলওয়ে শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসানের মাধ্যমে চাকুরী প্রাপ্ত হন৷ এমএলএস পদে নিয়োগ পেয়ে এখন সে অফিস সহকারীর দ্বায়িত্ব পালন করছেন। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তথ্য গোপন রেখে এ চাকরি নেন তিনি। পিয়ন থেকে নিয়ম বহির্ভূত পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহকারী হয়ে দপ্তরে এখন তিনি সর্বসর্বা। ফ্যাসিস্ট আ'লীগ সরকারের আমলে তিনি অফিস না করেও বেতন নিতেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে। পুরো বাহিনীতে তিনি দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ও হিংসুটে ডাইনী নামে সকল সদস্যের মাঝে পরিচিত।
চীফ কমান্ডেন্ট অফিসের বিল, সংস্থাপন, ছুটি, শাস্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সেকশন একাই দখলে তাঁর। নাহিদা আক্তারের নিকট বাহিনীর সকল সদস্য ও কর্মচারী জিম্মি। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ও কর্মচারীদের নিয়মিত বিল, জিপিএফ উত্তোলন, পাশ উত্তোলন, বকেয়া বিল তৈরী, টিএ বিল তৈরী, শাস্তি মওকুফ, সাসপেনশন উইড্রসহ নিজের অর্জিত ছুটি নিতেও ঘুষ দিতে হয় নাহিদাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অজুহাতে চীফ কমান্ডেন্ট ও কমান্ডেন্ট এর নামে বিভিন্ন সময় চাঁদা আদায় করেন তিনি। ঘুষের টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না অফিস সহকারী নাহিদা আক্তার। নাহিদার কথার বাহিরে বাহিনীর কোনো সদস্য বা কর্মচারী গেলে অথবা ঘুষের টাকা না দিলে ঐ কর্মচারীকে মাসের পর মাস বিভিন্ন অজুহাতে ঘুরাতে থাকেন ও হুমকী ধামকী দিতে থাকেন এবং চেইন রোটেশনে বদলী সাসপেন্ডসহ বিলে ইচ্ছকৃত ভুল করে বেতন-ভাতাদি বন্ধ করে দেন। তার ভয়ে কর্মচারীগন কেউ মুখ খুলতে চায় না। কোন কর্মচারীর সাথে লেনদেনের সমঝোতা না হলে নাহিদা ঐ কর্মচারীদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। নাহিদা আক্তার অফিসে যথারীতি উপস্থিত থেকে লাইনে না গিয়ে প্রতি মাসে হাজিরা খাতায় লাইন দেখিয়ে আট দশ হাজার টাকা অবৈধ টিএ বিল নেন। তিনি দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন পুরো চীফ কমান্ডেন্ট অফিস। উনিশ থেকে বিশ হাজার টাকার চাকুরী করেন তিনি। এত অল্প বেতনে চাকুরী করা নারী কিভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ও উন্নত জীবন যাপন করেন তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। গ্রামের বাড়ি ও রাজশাহীতেও কিনেছেন জমি। ব্যাংকে রয়েছে লক্ষ টাকার এফডিআর ও ডিপিএস। তাঁর স্বামীও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত। স্বামী মনিরুল ইসলাম একজন হাবিলদার। তিনি স্ত্রীর ক্ষমতায় ইচ্ছেমত ডিউটি করেন। চিঠিতে ভুক্তভোগীরা আরও আবেদন করেন তাকে অন্যত্র বদলী বা শাস্তির ব্যবস্থা না করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যগন মনোবল হারাবে ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়বে।
বেনামী ওই চিঠি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ করছেন কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা।
বেনামী ওই চিঠি নিয়ে অনুসন্ধানে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিপাহী ও হাবিলদার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন হয়রানি তো করেন তিনি। তবে মুখ খুললেই চিফ স্যার বদলী করে দিবেন। কথা বলার সুযোগ নাই।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত নাহিদা আক্তার বলেন, "আমার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। কেউ একজন শত্রুতা করে মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।"
জানতে চেয়ে একাধিকবার ফোন দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি পশ্চিম রেলের চীফ কমান্ডেন্ট জহুরুল ইসলামের। হোয়াইটস আপে খুদে বার্তা দিলেও তিনি কোনো উত্তর করেননি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম মুরসিদ, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha