কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি
"রমজানকে হাজির করো। নতুবা সব কিছু আগুনে জ্বালিয়ে দেবো।" বাড়ির শিশুদের গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে রাখা হয়। নারীদের করা হয় শ্লীলতাহানি। ঘর থেকে লেপ তোষক ও হাড়ি পাতিল কিছুই বের করতে দেয়া হয়নি। বই খাতাগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শিশুরা এখনো ভয়ে কাঁপছে। তাণ্ডবের সেই দৃশ্য তারা কোনভাবে ভুলতে পারছেন না। পা জড়িয়ে ধরলেও দুর্বৃত্তদের মন গলেনি। সব কিছু চোখের সামনে শেষ করে গেছে। বৃহস্পতিবার এমনি করে ঘটনার বর্ণনা করেন ভুক্তভোগী রমজানের পরিবারের নারী সদস্যরা।
রমজান ছাড়াও আরও ৭ জনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পর যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুরুষ শূন্য এসব বাড়ির নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরগুলো পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
এ সময় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, "যে বা যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সে যদি নিজ দলেরও হয়ে থাকে, তাহলেও তার ঠিকানা হবে জেলখানা।"
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, "বিএনপি শান্তির দল। এখানে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান হবে না।"
তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাদেরকে নির্দেশ দেন- হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার। একই সঙ্গে এ ঘটনা নিয়ে আর যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারেও তিনি দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। জুলুম ও নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাসও দেন তিনি। পরিদর্শনকালে চুড়ামনকাটি ও হৈবতপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বড় হৈবতপুর মাঠে সেচের পানি নিয়ে গোলযোগের জের ধরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বড় হৈবতপুর ও আব্দুলপুর গ্রামবাসীর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির ৪ নেতাকর্মীসহ ৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ৪ জনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ জনকে খুলনায় রেফার্ড করা হয়।
তারা হলেন চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের জামির আলীর ছেলে শফিয়ার রহমান ওরফে শফি (৩৭), বড় হৈবতপুর গ্রামের শাহাজাহান আলীর ছেলে হুমায়ন কবীর রাজু (৪৫), খালেক মন্ডলের ছেলে শামীম হোসেন (৩০) ও লুৎফর রহমানের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪০)। বাকি ৪ জন প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তারা হলেন বড় হৈবতপুর গ্রামের নাজমুল (৩০), সাব্বির (২৪), পাপ্পু (২২) ও রুবেল (২৫)।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্য আনিসুরসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ- সভাপতি হুমায়ুন কবীর রাজু মামলাটি করেন। সংঘর্ষের জেরে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম মুরসিদ (লিটু সিকদার) মোবাইল: 01728 311111